ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোটা চাল ও দেশী পেঁয়াজের দাম বেড়েছে

প্রকাশিত: ০২:০৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

মোটা চাল ও দেশী পেঁয়াজের দাম বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিদিনই দেশী নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। খুচরা পর্যায়ে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। তবে দেশী পুরান পেঁয়াজের ঝাঁজ আরও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮৫ টাকায়। আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহও বেড়েছে। অস্বস্তির বাজারে এখন ভরসা এই মুড়িকাটা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ। বাজার সংশ্লিষ্টরা ভোক্তাদের অপেক্ষাকৃত কমদামি এসব পেঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, বছর শেষে বাজারে দেশী পুরান পেঁয়াজের সরবরাহ যেহেতু কম, তাই আপাতত এসব পেঁয়াজ না কেনাই ভাল। এতে করে পুরান পেঁয়াজের উপর থেকে চাপ কমলে দামও কমে আসবে। এদিকে, পুরান পেঁয়াজের সঙ্গে মোটা চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতিকেজি মোটা চাল জাত ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৭ টাকা। সরবরাহ বাড়ায় কমেছে শীতকালীন সবজির দাম। প্রতিকেজি সবজি ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ডাল, চিনি, আটা, ভোজ্যতেল এবং ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রয়লার মুরগী ও আদার দাম বেড়েছে। মাছ ও গরুÑখাসির মাংস আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও বিজয় দিবসের প্রাক্কালে শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে উপচেপড়া ভিড় ছিল। মাছ, মাংসের দোকানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজয় দিবস উদযাপনে বেশিরভাগ ক্রেতারা অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি বাজার করেছেন। পুরান ঢাকার ওয়ারীর বাসিন্দা নাজমুল হক বাজার করছিলেন কাপ্তান বাজারে। তিনি জানালেন, ছুটির দিন ও বিজয় দিবস সামনে রেখে একটু বেশি বাজার করা হচ্ছে। সবজিতে স্বস্তি থাকলেও পুরান পেঁয়াজের দাম বেশি রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, দাম বেশি হওয়ার কারণে পুরান পেঁয়াজ না কিনে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কিনেছি। এতে প্রায় কেজিতে ৬০ টাকা কমে কেনা গেছে। পুরান পেঁয়াজের দাম যেহেতু বেশি তাই সবারই এটি এড়িয়ে চলা উচিত। তিনি বলেন, মিনিকেট ও নাজিরশাইল পূর্বের দামে বিক্রি হলেও মোটা চালের দাম বেড়েছে। চালের দাম কমাতে সরকারীভাবে পদক্ষেপ থাকা উচিত। বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও দু’একটি পণ্যের দাম আসলেই বেশি। জানা গেছে, শ্যামবাজার কৃষিপণ্যের আড়তগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ ট্রাক মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসছে। পাইকারি পর্যায়ে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে যা ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। যা ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। এছাড়া দেশী পুরান পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্যামবাজারের সততা এন্টার প্রাইজের ব্যবস্থাপক শুভাস বসাক জনকণ্ঠকে বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ প্রতিদিনই বাড়ছে। আগামী চারমাস পর্যন্ত বাজারে এসব পেঁয়াজের সরবরাহ থাকবে। এছাড়া মুড়িকাটার পাশাপাশি আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় দেশী পুরান পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। এ কারণে বাজারে পুরান পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বছর শেষ তাই এ পেঁয়াজের মজুদও তলানিতে এসে গেছে। ঝাঁজ যুক্ত এসব পেঁয়াজের ক্রেতাও অনেক। দাম যাইহোক তাদের পুরান পেঁয়াজ চাই। আর এ কারণে দামও বেশি। এদিকে, বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট নেই। এমনকি পুরান পেঁয়াজেরও কোন ঘাটতি নেই। দাম বেশি দিলেই মিলছে পুরান পেঁয়াজ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরান এই পেঁয়াজকে ঘিরে বাজারে এক ধরনের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর জন্ম হয়েছে। এদের কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। দেশে গড়ে প্রতি মাসে পেঁয়াজের চাহিদা এক লাখ ২০ হাজার টন। এর মধ্যে নবেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। এ ছাড়া রমজান মাস ও কোরবানির সময় পেঁয়াজের দেড় থেকে ২ লাখ টন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। এই সময়ের চাহিদাকে পুঁজি করে সক্রিয় উঠে সিন্ডিকেট চক্র। তবে দেশে উৎপাদন, আমদানি ও ভোগ হিসাব করলে এখনো দেশে এখন পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার কথা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসেবে দেখা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। আর চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়ে থাকে ১৯-২০ লাখ টন। তবে বছরে ১৯ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হওয়ার তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দেশের পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ ভাগ দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ হয়। বাকিটা আমদানি করে মেটাতে হয়।
×