ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন ॥ কেন্দ্রীয় নেতাদের পদচারণায় নুতন মাত্রা পেয়েছে প্রচারণা

প্রকাশিত: ০২:০৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

রসিক নির্বাচন ॥ কেন্দ্রীয় নেতাদের পদচারণায় নুতন মাত্রা পেয়েছে প্রচারণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ আর মাত্র চার দিন পরই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই ব্যস্ততা বাড়ছে প্রার্থীদের। থেমে নেই কর্মী-সমর্থকরাও। এরই মধ্যে ভোটের মাঠে তিনটি বড় দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও নেমে পড়েছেন । দলীয় প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। নিজ দলের প্রতীকে ভোট চাইছেন হাইপ্রোফাইল নেতারা। তিন হেভিওয়েট প্রার্থীর সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন প্রচার-প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণায়। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২১ ডিসেম্বর। এর মধ্যে প্রার্থীদের প্রচারণার সময়সীমা ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় প্রচারে যেমন গতি পেয়েছে তেমনি এর জের ধরে তারা বাকযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ও জাতীয় পাটির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পরস্পরের নামে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলেছেন। প্রার্থীরা ছাড়াও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে কথা বলছেন কেন্দ্র থেকে আসা নেতারা। গণসংযোগের সময় মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অভিযোগ করেন, তার ও তার দলের প্রধান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। মোস্তফা বলেন, জাতীয় পার্টি ছাড়া আওয়ামী লীগ কোনও অবস্থাতেই ক্ষমতায় যেতে পারতো না এবং আগামীতেও পারবে না। তাই আমার ও আমার দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলার আগে চিন্তা ভাবনা করা দরকার। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে এখানে আজে বাজে কথা বলছেন। যা শোভনীয় নয়। গত পাঁচ বছর ঝন্টু রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে রংপুরের উন্নয়নের জন্য কী কী করেছেন তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি আমার এবং আমার দলের সমালোচনা করে বেড়াচ্ছেন। মোস্তফা বলেন, পরাজয় বুঝতে পেরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান তিনি সেটা চাইছেন না। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রংপুরে অবস্থান করছেন। গত বুধবার থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে নামেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। শুক্রবার সকাল থেকে তারা নগরী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসাইন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ নেতারা নৌকার প্রতীকে ভোট চাইতে ছুটছেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার সাথে মাঠে নেমেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু, চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী-খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম, শামসুজ্জামান, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, মোজাফফর হোসেন, শহীদুল ইসলাম মিজুসহ অন্যান্য নেতারা। শুক্রবারও তারা দিনভর প্রচারণায় অংশ নেন। এর আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে মাঠ চষে বেড়িয়ে এখন পর্যন্ত মেয়র হিসেবে বিজয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার পক্ষে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই সভা-সভাবেশে ভোটে চেয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী পথসভায় চোখে পড়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। এখন পর্যন্ত মোস্তফার পক্ষে দিন-রাত পরিশ্রম করে যা্েচ্ছন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সদস্য হাজী আব্দুর রাজ্জাক, মুন্সি আব্দুল বারীসহ জাতীয় পার্টির, জেলা, মহানগর এবং ছাত্র সমাজ ও যুবসংহতির নেতারা। এদিকে মেয়র পদে ত্রি-মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টির মোস্তফাজিার রহামন মোস্তফার সাথেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাদের দলের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর। এই নির্বাচনকে আওয়ামী লীগের জন্য সেমিফাইনাল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। শুক্রবার নগরীর সেনপাড়ার একটি পথসভায় তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য এসিড টেস্ট। কারণ, আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বও তারাই পালন করবে। এখন পর্যন্ত এখানে সবার জন্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। ফলে সব রাজনৈতিক দলের উচিত কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সহায়তা করা।’ এ সময় রংপুরের উন্নয়নকাজ শেষ করার জন্য সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে আবারো নির্বাচিত করার আহ্বান জানান তিনি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও তারা আ.লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ঝন্টুকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করছেন না। তাদের মতে বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার সাথে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার লড়াই হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, ২০ দলীয় জোটের ভোট এবং অবাঙালিদের ভোট পুরোটাই পাবে ধানের শীষ। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে। চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও মরিচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। এই ক্ষোভটা ধানের শীষের পক্ষে যাবে। এবাবে ধানের শীষ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। নির্বাচনে এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে প্রার্থীর পথসভায় চেয়ার টেবিল উল্টে দেওয়ার অভিযোগ করেন। টুকু আরো বলেন, মাঠ মনিটরিং করে আমরা বুঝতে পেরেছি এই নির্বাচন ত্রিমুখি লড়াই হবে না। লাঙ্গল ও ধানের শীষের মধ্যেই মূল লড়াইটা হবে। জামায়াতের নীরব ভোটগুলো ধানের শীষের পক্ষেই যাবে। আমরা নির্বাচনের শেষ দেখতে চাই। এসময় তিনি জানান, আগামী ১৮ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর রংপুরে আসার কথা। সেদিন আমাদের সভা করার কথা রয়েছে। কিন্ত পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। উল্লেখ্য, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ১১টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ৬৫ জন এবং ৩৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১’শ ৭৭টি গোপন কক্ষে ভোট প্রদান করবেন ভোটাররা। এবার রংপুর সিটিতে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪২১ ভোটার রয়েছেন। যা গত নির্বাচনের চেয়ে ৩৬ হাজার ভোটার বেশী। এরআগে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছিল। নির্দলীয় ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রথম নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
×