ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

প্রকাশিত: ০১:৩২, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ নরসিংদীর রায়পুরায় প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। গ্রন্থাগারে কিছু বই থাকলেও জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিচিহ্ন নেই। অবহেলায় পড়ে আছে- তার পৈত্রিক ভিটা বাড়িটি। একই সঙ্গে বীরশ্রেষ্ঠের নামে তাদের গ্রামের নামকরণের সরকারি সিদ্ধান্তও আটকে আছে কাগজ-কলমে। ফলে দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগরে গিয়ে নিশ্চিহ্ন স্মৃতিচিহ্ন দেখে হতাশ হতে হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার এই প্রতিবেদন যান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের গ্রামে। রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম রামনগর। প্রবাহমান মেঘনার ঘা ঘেঁষে গড়ে ওঠা গ্রামটি চারপাশের অন্য গ্রামের চেয়ে কিছুটা হলেও আলাদা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাহমুদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের পাশেই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্মৃতিফলক ‘বাংলার ঈগল’। ত্রিমুখী কালো পাথরের স্তম্ভ। এর একটিতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের প্রতিকৃতি, আরেকটি জীবন বৃত্তান্ত। অপর স্তম্ভটিকে খোলা আকাশের প্রতিক হিসেবে ফাঁকা রাখা হয়েছে। মাঝে ত্রিভূজ আকৃতির স্মম্ভে টেরাকুটায় মুক্তিযোদ্ধের বিভিন্ন দৃশ্য ফুটে উঠেছে। সবার উপরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর গ্রামের প্রবেশ নির্দেশক। সেই পথ ধরে গ্রামে প্রবেশ। কিছু দূর এগুলোই পড়ে ৪ রাস্তার মোড়। পাশের দোকানে নামফলকে লেখা রামনগর বড় মসজিদ মোড়। সেই মোড়ে আলাপচারিতায় মগ্ন ৩ বয়োবিদ্ধ। তাঁদের একজন মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ভূঞা। তিনি রামনগর পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাস্টার। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের প্রসঙ্গ তুলতেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ভূঞা। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধের শুরুতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রামে ছিলেন। তিনি স্থানীয় রামনগর দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেন। এখানেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পাকিস্তানী বিমান ছিনতাইয়ের ছক কষেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানে গিয়ে বিমান ছিনতাই করার সময় বিধ্বস্ত হয়ে শহীদ হন তিনি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বীরশ্রেষ্ঠের নামে গ্রামের নামকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও আমি পোষ্ট অফিসের সীলমহরে রামনগরের নাম পরিবর্তন করে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর লিখতে পারছিনা। পাশেই রামনগর হাই স্কুল এবং রামনগর উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলগুলোর মাঠের একপাশে ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। জেলা পরিষদ গ্রন্থাগারটি তত্ত্বাবধান করছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। পাঠাগারে কিছু বই থাকলেও জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠের কোন স্মৃতিচিহ্ন নেই। দুই বছর ধরে শুধুমাত্র তত্বাবধায়ক দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। লাইব্রেরিয়ানের পদটি ২ বছর যাবত শূণ্য। ফলে অযতœ-অবহেলায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরটি। জাদুঘরের সামনে কথা হয় কলেজ ছাত্র আসিফ কাজী ও বিজয় কাজীর সঙ্গে। তাঁরা জানায়, উদ্বোধনের পর দীর্ঘ ৯ বছরে লাইব্রেরীতে নতুন করে বই দেয়া হয়নি। একই সঙ্গে পরিচযার অভাবে জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদন হারাচ্ছে। জানতে চাইলে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের তত্বাবধায়ক এনামুল হক বলেন, দুই জনের কাজ এক জন করলে যেমন হয় সেভাবেই প্রতিষ্ঠানটি চলছে। বছরের অধিকাংশ দিনই দেশের দূর দূরান্ত থেকে আগ্রহ নিয়ে লোকজন আসে কিন্তু জাদুঘরে কোন সংগ্রহশালা না থাকায় তাঁরা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে সম্প্রতি বখাটেদের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি জানান। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের বাড়িতে কেউ থাকেন না। ফলে দরজায় ঝুলছে তালা। বাড়ির সামনে নতুন করে লাগানো হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান যুব সংঘের সাইনবোর্ড। চারপাশের বাড়িগুলোতে থাকে বীরশ্রেষ্ঠের স্বজনরা। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক সৈকত ভূঞা বলেন, সরকার বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের নামকরণটি এখনো পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। একটি সাইনবোর্ড ছাড়া গ্রামের অন্য কোথাও এর প্রতিফলন নেই। একই সঙ্গে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্মৃতি বিজরিত ব্যবহার সামগ্রী না থাকায় জাদুঘরের স্বার্থকতা আসেনি। জানতে চাইলে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান বলেন, যতদিন পর্যন্ত ইউনিয়ন, ডাকঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম না বদলানো হবে ততদিন পর্যন্ত বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর নামটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব হয়ে থাকবে। এটা বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। এই ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ নেয়া হলে পরিবারের পক্ষ থেকে ওনার স্মৃতিকর্ম দিয়ে সহযোগীতা করা হবে। এই ব্যাপারে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজয় দিবসে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের মুর্যালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। একই সঙ্গে শ্রীঘ্রই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে অসমাপ্ত কাজ গুলো সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
×