ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় ৬২ শতাংশ ইটভাটি অবৈধ॥ দূষন হচ্ছেপরিবেশ

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

নওগাঁয় ৬২ শতাংশ ইটভাটি অবৈধ॥ দূষন হচ্ছেপরিবেশ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ॥ সরকারী নীতিমালাকে উপেক্ষা করে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটি। এসব ইটভাটিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, নষ্ট করা হচ্ছে ফসলি জমি, বিপন্ন করা হচ্ছে পরিবেশ। কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা এসব ইটভাটির কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বর্তমানে জেলায় ৬২ শতাংশ ইটভাটাতে অবৈধভাবে ইট পোড়ানো হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসন কার্যত নীরব রয়েছে। নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় মোট ইটভাটির সংখ্যা ১৫৭টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে ১২৮টি ইটভাটি। অর্থাৎ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ২৯টি ইটভাটি। আর চলতি বছর জেলা প্রশাসন থেকে মাত্র ৬৮টি ইটভাটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে। ফলে জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী ৮৯টি ইটভাটি অবৈধভাবে চলছে। জেলা ইটভাটি মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার ১১ উপজেলার ১৮০ জন ইটভাটির মালিক জেলা ইটভাটি মালিক সমিতির সদস্য। সমিতির তথ্যানুসারে জেলায় ইটভাটির সংখ্যা মোট ১৮০টি। এই হিসাব মতে, জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত (লাইসেন্সকৃত) ইটভাটির সংখ্যা ৬৮টি হলে জেলায় বর্তমানে ১১২টি ইটভাটি অবৈধভাবে চলছে। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ইটভাটিই অবৈধ। জেলা ইটভাটি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক জনকন্ঠকে বলেন, ‘ইটভাটির মালিকরা সকলেই লাইসেন্স নবায়ন করতে চান। কিন্তু বিগত ২০১৩ সালের ইটভাটি প্রস্তুত আইন অনুযায়ী ভাটি তৈরির শর্ত পূরণ না হওয়ায় আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট করেছেন। মামলাগুলো অমিমাংসিত থাকায় তাঁরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইটভাটি নির্মাণ করতে পারছেন না।’ অবৈধ ইটভাটি মালিকরা দাবি করছেন, তাঁদের পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথারীতি উৎকাচ দিয়েই ইটভাটি চালু রাখতে হয়েছে। অবৈধ ইটভাটি চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তাঁরা বলেন, শুরুতে তাঁরা ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ভাটিতে ইট পোড়াতেন। পরে সরকার ১২০ ফুট উঁচু পরিবেশ বান্ধব চিমনি দিয়ে ইটভাটি তৈরির নির্দেশনা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ ইটভাটি ১২০ ফুট উঁচু চিমনিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সর্বশেষ সরকার নতুন এক নির্দেশনায় জিগজ্যাগ কিলন, হাইব্রিড কিলন, ভারটিক্যাল স্যাফট কিলন, টানেল কিলন পদ্ধতিতে ইটভাটি প্রস্তুতের নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু নির্মিত ইটভাটির শ্রেণি পরিবর্তন করা সময়সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে দাবী করেন তারা। এদিকে জেলা সদরের হাঁপানিয়া, কীর্ত্তিপুর ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম এলাকার প্রায় প্রতিটি কৃষিজমির মাঠেই গড়ে ওঠেছে ইটভাটি। বিস্তৃীর্ণ ফসলের মাঠ ও ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ভাটিগুলো। চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারপাশ। মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরপুর ইউনিয়নের চৌমাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল, মনসুর আহমেদ ও সামসুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন জানান, ‘নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চৌমাশিয়া গ্রামের ফসলি দুটি কৃষিজমির মাঠে ১২টি ইটভাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইটভাটির কালো ধোঁয়ায় কারণে ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া যায় না। রীতিমত শ্বাসকষ্ট হয়।’ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, ‘বিগত ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটি স্থাপন আইনের তোয়াক্কা না করে আবাসিক এলাকা অথবা কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটি। এসব ইটভাটির ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যতঃ প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’ এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিদর্শক ও নওগাঁ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মকবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতি বছর ইট পোড়ানো মৌসুম শুরু হলে অবৈধ ইটভাটির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এ বছরও অবৈধ ইটভাটি সমূহে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালানার জন্য নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যাঁরা এখনও লাইসেন্স নবায়ন করেনি, তাঁদেরকে বিধি মোতাবেক উন্নত প্রযুক্তিতে ইটভাটি নির্মাণ করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ ইটভাটি চালাতে পারবে না।’
×