ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘একাত্তরের যুদ্ধ শিশু’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন

ইউনিসেফ মীনা এ্যাওয়ার্ড পেলেন জনকণ্ঠের রাজন ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ইউনিসেফ মীনা এ্যাওয়ার্ড পেলেন জনকণ্ঠের রাজন ভট্টাচার্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘একাত্তরের যুদ্ধশিশু’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে ‘ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড-২০১৭’ (প্রথম পুরস্কার) পেয়েছেন জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনিসেফ বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। মিডিয়ায় শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৪৯ জনকে চলতি বছর মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। সম্মেলন কেন্দ্রের সেলিব্রিটি হলে এ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ, সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন। ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত অভিনেত্রী আরিফা জামান মৌসুমী ও জাদুকর জুয়েল আইচও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বক্তৃতায় শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য ইউনিসেফের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে শিশুদেরকেও সচেতন হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগান। তনি বলেন, ‘মীনা এ্যাওয়ার্ড হলো প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আমরা এই এ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে সৃজনশীল কাজকে অনুপ্রেরণা জানায়। তাদেরকে দেখে যেন ভবিষ্যত প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়। মীনা চরিত্রটি কিন্তু অনেক বাধা অতিক্রম করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। প্রত্যেককেই তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই প্রতিবন্ধকতা জয় করতে হবে।’ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান জানিয়ে আমরা এদেশ গড়ব। যেখানে কোন রাজাকার, আলবদররা থাকবে না। শিশুদেরকে এদের থেকে দূরে রাখতে হবে। যারা বোমা বানানোর কাজে শিশুদের ব্যবহার করে, যারা শিশুদের মানবঢাল বানায়- তাদের বিরুদ্ধে ইউনিসেফ ও জাতিসংঘের সোচ্চার হতে হবে। প্রতিবাদ না জানালে জাতিসংঘ, ইউনিসেফ দায়িত্ব পালন করছে না। এদের বিরুদ্ধে মুখ না খুললে সচেতন সমাজ তৈরি সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৮ বছর বয়সের আগে কন্যাশিশুর বিয়ে নয় অন্যদিকে ২১ বছরের আগে ছেলেদের বিয়ে নয়। ভবিষ্যত প্রজন্মকে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় পড়ছি কন্যাশিশুরাই তাদের বাল্যবিবাহ বন্ধ করছে। এভাবেই শিশুদেরকে সাহসী হতে হব। যে কোন প্রতিবন্ধকতা রুখতে হবে মনোবল দিয়ে। ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও জঙ্গিবাদ থাকলে শিশুদের অধিকার ব্যাহত হয়।’ এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে (১৮ বছরের উর্ধে) প্রথম বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্য। একাত্তরের যুদ্ধশিশুদের নিয়ে লেখা প্রতিবেদনে তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে ২০১০ সালেও তিনি এই পুরস্কার পান। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রাজন ভট্টাচার্যের হাতে পুরস্কার হিসেবে নগদ ৫০ হাজার টাকা, সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন। বর্ণিল ও আনন্দঘন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শিশুদের কণ্ঠস্বরকে সবার সামনে তুলে ধরে এবং গণমাধ্যমে যে প্রতিনিয়ত শিশুদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে তা উদ্যাপন করে। দেশের সকল প্রান্ত থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা শিশুদের সুরক্ষা, শিক্ষা, শিশু পাচার, শিশুদের জন্য পুষ্টি, শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং সমাজে শিশুদের প্রভাবিত করে এমন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের কাজ জমা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে সমান জনপ্রিয় এ্যানিমেশন চরিত্র মীনার নামে এই পুরস্কারের নামকরণ করা হয়েছে। মীনা এ্যাওয়ার্ডের ১৩তম বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে অনলাইন/প্রিন্ট মিডিয়া, রেডিও ও ভিজ্যুয়াল এবং সচিত্র সংবাদ বা নিউজ ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে এডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ‘প্রতিবছর মীনা এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কিন্তু প্রতিবারই গণমাধ্যম কর্মীদের বহুমুখী কাজ ও মিডিয়ার মাধ্যমে শিশুদের বিষয়গুলো সামনে এগিয়ে নেয়ার উদ্দীপনা এ আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই প্রচেষ্টার জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, বাস্তুচ্যুত শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর কাজ করার জন্য তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছি। কেননা গণমাধ্যমের এসব বিষয়ে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।’ বিগত বছরগুলোর মতোই ১৩তম মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ডও অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে। যেখানে সাত শ’রও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় একটি বিচারক প্যানেলের মাধ্যমে প্রিন্ট, অনলাইন ও সম্প্রচার মাধ্যম থেকে পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নির্বাচন করা হয়। মূলত, ‘সৃজনশীল’ এবং ‘সাংবাদিকতা’ এই দুই ক্যাটাগরিতে নির্দিষ্ট বয়সসীমার প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়। প্রত্যেক ক্যাটাগরি ও বয়স-শ্রেণীতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ীকে নগদ অর্থ পুরস্কার দেয়া হয়। সৃজনশীল লেখক, অভিজ্ঞ পেশাদার গণমাধ্যম কর্মী ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত এগারো সদস্যের বিচারকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদন মূল্যায়ন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক প্রতিযোগীর নাম নির্দিষ্ট একটি কোড নম্বর দিয়ে বদলে ফেলা হয়, যাতে বিচার প্রক্রিয়ায় কোন পক্ষপাতিত্ব না হয়। বিচারক প্যানেলে ছিলেন- সেলিনা হোসেন, শাহনূর ওয়াহিদ, রোবায়েত ফেরদৌস, ফাহমিদুল হক, জাকির হোসেন রাজু, কাদির কল্লোল, রতন পাল, মিথিলা ফারজানা, রফিকুল ইসলাম, জান্নাতুল মাওয়া ও আবু নাসের সিদ্দিক। ‘মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১৭’তে আরও যারা পুরস্কার পেলেন- রেডিও ক্যাটাগরিতে (১৮ বছরের নিচে) প্রথম হয়েছেন গোলাম মোস্তফা তারেক, দ্বিতীয় আল-মামুন রাজু ও তৃতীয় হামিম রহমান খান। সেই সঙ্গে (১৮ বছরের উর্ধে) প্রথম শ্যামল কুমার দাস, দ্বিতীয় মোঃ মনিরুল ইসলাম ও তৃতীয় শাকিল আহমেদ। ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক ক্যাটাগরিতে (১৮ বছরের নিচে) -প্রথম আবরার তোহা রাহা, দ্বিতীয় তৌফিকুল ইসলাম ও তৃতীয় রাজিয়া সুলতানা। পাশাপাশি (১৮ বছরের উর্ধে)-প্রথম অনিমেষ আইচ, দ্বিতীয় আহনাল আহমেদ ও তৃতীয় শফিক শাহীন। নিউজ রিপোর্টিং ক্যাটাগরিতে (১৮ বছরের নিচে)-প্রথম মোঃ সেলিম, দ্বিতীয় এহতাসুল লিখন ও তৃতীয় তানজিলা হক মিম। এ ছাড়া (১৮ বছরের উর্ধে)-প্রথম হয়েছেন ইবতিসাম নাসিম মৌ, দ্বিতীয় মোঃ আনোয়ার হোসেন ও তৃতীয় কাওসার সোহেলি। ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে (১৮ বছরের উর্ধে)- প্রথম হন সৈয়দ আশরাফুল আলম টিটু, দ্বিতীয় আব্দুস-সালাম ও তৃতীয় সনি রহমান। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক উভয় ক্ষেত্রে সৃজনশীল মাধ্যম ও সাংবাদিকতায় শ্রেষ্ঠত্ব উদ্যাপনে ২০০৫ সাল থেকে চালু হওয়া মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১৭ সালে ১৩তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। অনুষ্ঠানে উৎসবের আমেজ ও বর্ণিলতা যোগ করতে ইউনিসেফ কর্মকর্তার পাশাপাশি একটি মেয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। পাশাপাশি ঢাকায় স্থানীয় ড্রপ-ইন-সেন্টারে বসবাসরত এবং সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক অবস্থান থেকে আসা শিশু এবং শিশুদের থিয়েটার গ্রুপ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করে।
×