ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউইয়র্কে সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

নিউইয়র্কে সন্ত্রাস

জঙ্গীদের কোন দেশ থাকে না। তাদের কাজই হচ্ছে মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংস করা। মানুষের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং মানবিকতাবোধ তাদের মধ্যে কাজ করে না। চরম উগ্র মতবাদকে ধারণ করার কারণে স্বাভাবিক সবকিছু তাদের লুপ্ত হতে থাকে। মানুষ হত্যা যে মহাপাপ এই বোধ কাজ করে না বলেই আত্মঘাতী হতেও পিছপা হয় না এক শ্রেণীর জঙ্গী। ধর্মের নামে যত অধর্ম রয়েছে, সবকিছুই তারা লালন করে ধর্মীয় বর্মে। আর হানাদারের মতো চোরাগোপ্তা হানা দেয়। দেশে-বিদেশে গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গীবাদের যে বিকাশ ঘটেছে বা ঘটানো হয়েছে, তা আতঙ্ক তৈরি করছে বিশ্বজুড়ে। নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে যেমন, তেমনি নিরাপদে বসবাসও দুরূহ পর্যায়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট জঙ্গীরা। সাধারণ মানুষের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর মাধ্যমে তারা নরহত্যার যে পথ বেছে নিয়েছে, তা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কোন মানুষের কাম্য হতে পারে না, বরং তা অপরাধ। কিন্তু যারা জঙ্গী তৈরি এবং তাদের লালন পালন করে, তারা এমনভাবে দীক্ষিত করে যে, আত্মঘাতী হওয়ার মরণ নেশায় আচ্ছন্ন হতেও দ্বিধা করে না। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটেছিল বিএনপি-জামায়াতের হাত ধরে। বর্তমান সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে আসছে। জঙ্গীদের অনেক আস্তানা নির্মূল করা হয়েছে। অনেকের শিকড় উপড়ে ফেলা হলেও জামায়াত ও তার সহযোগীরা এই পথ ও পন্থা থেকে সরে আসছে না। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। অথচ এই জামায়াতকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘মডারেট ইসলামী দল’ হিসেবে অভিহিত করে আসছিল। শুধু তাই নয়, পৃষ্ঠপোষকতাও দিয়েছে। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তীকালে জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিতে দ্বিধা করেনি। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বাংলাদেশী আত্মঘাতী জঙ্গীর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা সে দেশে বসবাসরত বাঙালীদের সংশয়াক্রান্ত করেছে। অবশ্য সে হামলায় কেউ মারা যায়নি, যা স্বস্তিদায়ক। কিন্তু সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারী একজন বাংলাদেশী অভিবাসী এই পরিচিতিটা বিব্রতকর ও দুর্ভাগ্যজনক। ছাত্রশিবিরের এই কর্মীটি কিভাবে জঙ্গীবাদী হয়ে উঠেছে তার ফিরিস্তি হয়ত মিলবে। কিন্তু সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে বৈকি। এই ঘটনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম অভিবাসী নিয়ে বিরূপ সিদ্ধান্তকে যুক্তিযুক্তকরণে সহায়ক হতে পারে। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রবল জনমত রয়েছে। যাইহোক, এটা সন্ত্রাসের অজুহাত হতে পারে। অপর পক্ষে সন্ত্রাস ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান আরও শক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারে। প্রাথমিক তথ্যে এই ঘটনায় তার একা জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে। এর আগে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে হত্যা প্রচেষ্টায় একজন বাংলাদেশী আটক হওয়ার পর জানা গেল, নেপথ্যে পাকিস্তানী সন্ত্রাসীরাও জড়িত। আকায়েদ স্বীকার করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আইএসের অনুসারী হিসেবে সে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। তবে ব্যাপক হতাহতের লক্ষ্য নিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছিল কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটানো হয়, সেই ম্যানহাটনে বাংলাদেশীদের বসবাস বেশি। তারা এই ঘটনার পর মানসিক চাপের সম্মুখীন হতেই পারেন। কিন্তু সময়ে তা অতিক্রম হয়ত করা যাবে। কিন্তু যে কলঙ্কচিহ্ন তৈরি হলো তা সহজে হয়ত মুছে যাবে না। সাধারণ মানুষের ওপর এ রকম চোরাগোপ্তা হামলার প্রবণতা ইউরোপে দেখা গেছে। সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি উদ্বেগজনক বৈকি। ম্যানহাটনের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই আমরা। একই সঙ্গে বিশ্বের শান্তিকামী সব মানুষকে এই অশুভ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার আবেদন রাখছি। দানবের পরাজয় অবশ্যই ঘটবে।
×