ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগ্যবান মাশরাফি, সেরা চমক গেইল

বিপিএলের সাতকাহন

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বিপিএলের সাতকাহন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টি২০ ক্রিকেটের রাজা কে? একবাক্যে সবাই স্বীকার করবেন ক্রিস গেইল। তাহলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) রাজা কে? সবার সামনে একটি নামই ভেসে উঠছে। তিনি হচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রিস গেইল যদি একের পর এক সেঞ্চুরি, ছক্কার বাহার, রানের ফোয়ারা দেখিয়ে টি২০ রাজা হতে পারেন। তাহলে বিপিএলে পাঁচ আসরের মধ্যে চার আসরেই নেতৃত্ব দিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করে বিপিএলের রাজা মাশরাফিই। তার নেতৃত্বেই এবার নতুন চ্যাম্পিয়ন মিলেছে। ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৫৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর। লীগের সেরা ক্রিকেটার হন ক্রিস গেইল। তার অপরাজিত ১৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে ঢাকা কাত হয়ে যায়। সেই সঙ্গে তিনি বিপিএলের আকর্ষণ যে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেন। এবার বিপিএলে অনেক আকর্ষণ ছিল। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বাইলজ কেন্দ্রিক ঝামেলা ছাড়া সবকিছুই খুব ভালভাবে কেটেছে। শুরুতে বিপিএল নিয়ে সবারই উত্তেজনা দেখা গেছে। সিলেট দিয়ে এবার বিপিএল শুরু হয়। এরপর ঢাকায় সেই উত্তেজনা খানিকটা কমলেও আবার চট্টগ্রামে সেই উত্তাপ মিলেছে। শেষে ঢাকায় আবার খেলা আসার পর রোমাঞ্চ দেখা গেছে। এখানেই যে হয়েছে সেরা চারের লড়াই এবং ফাইনাল। শেষ পর্যন্ত মাশরাফির রংপুর এবং গেইলই বাজিমাত করেছেন। বিপিএলের খেলা হয়েছে ৩৯ দিন। চার-ছক্কার ধুন্ধুমার লড়াই শেষে রংপুর রাইডার্সের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে পর্দা নেমেছে বিপিএলের পঞ্চম আসরের। এ আসরে ব্যাটসম্যানদের তালিকার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে আসর শেষে শীর্ষ ১০ রান সংগ্রাহকের ছয়জন বিদেশী আর চার চারজন বাংলাদেশী। আর বল হাতে শীর্ষ ১০ উইকেট শিকারির তালিকার আটজনই দেশী ক্রিকেটার। শীর্ষ রান সংগ্রাহক তালিকায় ৪৮৫ রান করে শীর্ষে আছেন ক্রিস গেইল। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ব্যাটসম্যানদের তালিকার শীর্ষে উইন্ডিজ ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল। ১১ ম্যাচে ৫৩.৮৮ গড়ে দুই সেঞ্চুরি ও সমান সংখ্যক হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৮৫ রান করেছেন গেইল। ৩৯৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ঢাকা ডায়নামাইটস ওপেনার এভিন লুইস। আর ৩৬৫ রানে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রংপুরের আরেক ব্যাটসম্যান রবি বোপারা। তালিকার চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছেন তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ মিঠুন। দু’জনের সংগ্রহ যথাক্রমে ৩৩২ ও ৩২৯ রান। শীর্ষ ১০ জনের বাকি পাঁচ ব্যাটসম্যান হলেন- মারলন স্যামুয়েলস, লুক রনকি, আন্দ্রে ফ্লেচার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েস। শীর্ষ উইকেট শিকারির তালিকায় সবার ওপরে আছেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন সাকিব। ১৩ ম্যাচে বাঁহাতি এই স্পিনার ঝুলিতে পুরেছেন ২২টি উইকেট। সাকিবের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ১৮ উইকেট শিকার করে এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে খুলনার আবু জায়েদ রাহি। ১৬ উইকেট নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন কুমিল্লার পাকিস্তানী পেসার হাসান আলী। চতুর্থ স্থানটি নিজের করে নিয়েছেন মোহামদ্দ সাইফউদ্দিন। তার উইকেট সংখ্যাও ১৬টি। ১৫ উইকেট নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছেন শহীদ আফ্রিদি। শীর্ষ ১০ জনের বাকি পাঁচ বাংলাদেশী বোলার হলেন আবু হায়দার রনি, মাশরাফি, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও নাজমুল ইসলাম অপু। সেরা বোলিং ফিগারে দেশী বোলারদের ছড়াছড়ি। দেশী ক্রিকেটাররা যে বল হাতে দারুণ বোলিং করেছেন তার প্রমাণ সেরা বোলিং ফিগারে। সেরা পাঁচ বোলিং ফিগারের চারটি নামই বাংলাদেশী বোলারদের। সবচেয়ে সেরা বোলিং ফিগারটি ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিবের। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ১৬ রানের বিনিময়ে তিনি তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। পরেরটি কুমিল্লার হাসান আলীর। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৩.৩ ওভার বল করে ২০ রান খরচায় নেন পাঁচ উইকেট। রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে চার ওভার বল করে ২৬ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে এই তালিকার তৃতীয় স্থানে খুলনার শফিউল ইসলাম। ৩১ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে সিলেট অধিনায়ক নাসির হোসেন। রাজশাহীর বিপক্ষে আট রানের বিনিময়ে চার উইকেট তুলে নিয়ে পঞ্চম স্থানটিও নিজের করে নিয়েছেন সাকিব। সেরা জুটিতে অবশ্য সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন রংপুরের গেইল ও ম্যাককালাম। গেইল-ম্যাককালামের ২০১ রানের জুটি শুধু পঞ্চম আসরেরই নয়, বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটিও। ফাইনালের আগ পর্যন্ত বিপিএলে সবচেয়ে সফল জুটি ছিল সিলেট সিক্সার্সের। উদ্বোধনী জুটিতেই ১২৫ রান যোগ করেছিলেন উপুল থারাঙ্গা ও আন্দ্রে ফ্লেচার। তবে ফাইনালে সেই রেকর্ড নিজেদের করে নেন গেইল- ম্যাককালাম। রংপুরকে ২০৬ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দেয়ার পথে তাদের করা ২০১ রান শুধু পঞ্চম আসরেরই নয়, বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটিও। এদিন ৬৯ বলে পাঁচটি চার ও ১৮টি ছক্কায় ১৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন গেইল। ম্যাককালাম ৪৩ বলে চারটি ও তিনটি ছক্কায় ৫১ রানের হার না মানা এক উপহার দেন। সবচেয়ে বড় জয় সিলেট পেয়েছে। আন্দ্রে ফ্লেচার ও উপুল থারাঙ্গার ব্যাটে ঢাকার বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয় পায় সিলেট। এটি বিপিএলের প্রথম ম্যাচ ছিল। ঢাকা ডায়নামাইটসের দেয়া ১৩৭ রানের জবাবে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সিলেট সিক্সার্স। উইকেটের হিসেবে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। ওই ম্যাচে ১৯ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করেছিল নাসির হোসেনের দল। বলের হিসেবেও সবচেয়ে জয়ের রেকর্ডটা সিলেটের দখলে। রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়টা ঢাকা ডায়নামাইটসের। ঢাকার দেয়া ২০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৩৭ রানে গুটিয়ে যায় খুলনা টাইটান্স। ফলে ৬৫ রানের জয় পায় সাকিব আল হাসানের দল। এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড গড়েছেন ক্রিস গেইল। ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে গেইল মোট ১৮টি ছক্কা হাঁকান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়েই যা বিশ্ব রেকর্ড। সর্বাধিক ক্যাচ ধরেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১২ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১৩টি ক্যাচ নিয়েছেন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১০টি ক্যাচ নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে খুলনারই আরেক ক্রিকেটার আরিফুল ইসলাম। দলীয় সর্বোচ্চ রান করেছে খুলনা টাইটান্স। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে ২১৩ রানের পাহাড় গড়েছিল খুলনা টাইটান্স। যা এই আসরের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আর সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৬৭ রানে অলআউট হয়ে এই আসরে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের লজ্জার রেকর্ডের মালিক হয় চিটাগং ভাইকিংস।
×