ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজন

রাজধানীর ৮ মঞ্চে বিজয় উৎসব, বর্ণাঢ্য শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজধানীর ৮ মঞ্চে বিজয় উৎসব, বর্ণাঢ্য শুরু

মোরসালিন মিজান ॥ ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজয় উৎসব। বাঙালীর মহাঅর্জনের ইতিহাস নানা ভাব ও ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছিল। তবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব অন্য অনেক আয়োজন থেকে আলাদা। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। শুরুটা হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে উৎসব আয়োজন করা হয়। এখনও আয়োজনটি আরও বিস্তৃত ও বর্ণাঢ্য হয়েছে। বহু বছরের ধারাবাহিকতায় বুধবার থেকে শুরু হয়েছে এবারের আয়োজন। উৎসবের স্লোগান, ‘৭ মার্চ মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক বাংলার ঘরে ঘরে/৭ মার্চ সম্পদ আজ বিশ্ব-মানবের তরে।’ জোটের অন্তর্ভুক্ত ২০০ সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার শিল্পী উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। সঙ্গীত নৃত্য আবৃত্তি পথনাটক ও চলচ্চিত্রের ভাষায় শিল্পীরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। প্রায় একই সময় রাজধানীর ৮টি মঞ্চে চলবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা। বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিপুল বিশাল উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আয়োজনের শুরুতে শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। পরে একাত্তরের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। গাওয়া হয় জাতীয় সঙ্গীত। জাতীয় পতাকার লাল-সবুজে সেজে আসা শিল্পীরা প্রাণের গভীর থেকে গেয়ে যানÑ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...। তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান সকলে। আবেগঘন সূচনার পর যুদ্ধ জয়ের আনন্দ তুলে ধরে শিল্পীরা গায়Ñ বিজয় নিশান উড়ছে ঐ/খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে/বাংলার ঘরে ঘরে/মুক্তির আলো ঐ ঝরছে...। এ পর্যায়ে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অগ্রজ নারী সংস্কৃতিকর্মী লায়লা হাসান, কাজী মদিনা ও কাননবালা সরকার। এ সময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াসসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ। জোটের সাবেক সভাপতি বলেন, এবারের বিজয় দিবস ভিন্ন এক তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছে। দিবসটি উদযাপনের প্রাক্কালে বাঙালী জাতির ইতিহাসের সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ যা একটি শৃঙ্খলিত জাতিকে মুক্তির স্বপ্নে বিভোর করেছিল, একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য জীবন-মরণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ জয়ে অনুপ্রাণিত করেছিল, সাহসী করে তুলেছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির সনদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এ আমাদের পরম গৌরবের অর্জন। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ কোন দিনই এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বিজয় উৎসব ও সমকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, আর কিছুকাল পর বাংলাদেশ গর্ব ও অহঙ্কারের দুটি ধাপ অতিক্রম করবে। ২০২০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। পরের বছর ২০২১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ৫০ বছর পূর্তি। আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এই দুটি উপলক্ষ বিপুলভাবে উদযাপন করবে বাঙালী। সে লক্ষ্যে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন তিনি। সত্য বলার সাহস অর্জন করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তা না হলে তাসের ঘরের মতো সব কিছু চুরমার হয়ে যাবে। আমাদের পরিষ্কারভাবে বলতে হবে, দেশে যে উন্নয়ন কর্মকা- চলছে আমরা তা সমর্থন করি। কিন্তু কোন লুটেরা গোষ্ঠীকে সমর্থন করি না। এই দেশ সবার। এখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব ইস্যুতে আপোস করা যাবে না। টালবাহান চলবে না। এমন কিছু হলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। চলচ্চিত্র পরিচালক অভিনেতা সুরকার খান আতাউর রহমানকে নিয়ে কিছুদিন আগে চলা বিতর্কটিও সামনে আনেন এই বক্তা। সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একাত্তর সালে কে কী করেছে আমরা তার বিচার বিশ্লেষণ করবই। অনেকেই বলেন, পালিয়ে থাকা লোকেরাও নাকি দেশপ্রেমিক ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কারা বাংলাদেশ বেতারে গিয়ে গান কবিতা রচনা করেছিলেন? গেয়েছিলেন কারা? এইসব বিষয় স্পষ্ট করতে সাংস্কৃতিক জোট কাজ করবে বলে জানান তিনি। এখানে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালা চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৪ ডিসেম্বর থেকে সরব হবে অন্য ৭ মঞ্চ। ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবর, উত্তরার রবীন্দ্র সরণি, মিরপুর ৬, রায়ের বাজার, বাহাদুর শাহ পার্ক ও দনিয়ায় ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বিজয় উৎসব।
×