ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বালু উত্তোলন ১০৪ কোটি টাকার নবনির্মিত সেতু ঝুঁকিতে

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

বালু উত্তোলন ১০৪ কোটি টাকার নবনির্মিত সেতু ঝুঁকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের ইসলামপুর-মেলান্দহ উপজেলার সীমান্তে ফকিরপাড়া পাইলিং ঘাট এলাকায় ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত সেতু নিচে এবং এর আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে চলছে বালুমাটি লুট। আইনের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট নদী খনন ও বালুবিক্রির এই ব্যবসায় চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার ঘনফুট মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে ওই সিন্ডিকেট। এ ছাড়াও প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলাবালিতে ছেয়ে গেছে নদীপাড়ের গ্রামগুলো। অবাধে ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো চলাচলের কারণে পরিবেশের ক্ষতি ছাড়াও প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এলাকাবাসী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। সরজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে ফকিরপাড়া পাইলিং ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর একদম কাছে থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বিশাল গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে একটি স্বয়ংক্রিয় খননযন্ত্র অ্যাস্কেভেটর গাড়ি গিয়ে নদী খনন করে ট্রাকে বালু তোলা হচ্ছে। পুরো ব্রহ্মপুত্রের বুকজুড়ে চলছে বালুমাটি খনন। বিগত অর্থ বছরে প্রায় ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের ইসলামপুর ফকিরপাড়া পাইলিং ঘাট এলাকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সুজন পাল, শাহীন মিয়া ও সোহরাব আলীসহ দশজনের একটি সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন, বিক্রি ও পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। বর্ষার পরপরই প্রতিবছর তারা এই ব্যবসা শুরু করেন। এ বছর দুই মাস ধরে তারা পুনরায় প্রতিদিন অবৈধভাবে নদী খনন করে বালুমাটি বিক্রি করে আসছেন। প্রকাশ্যে নদী খনন করে বালুমাটি উত্তোলন করলেও প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশও ওই সিনিন্ডকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সচেতন জনগণের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেভাবে অবৈধভাবে নদী খনন করে সেতুর নিচ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এতে করে ওই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া এবং নদীতীরের এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়ে ক্ষতির আশঙ্কার করছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই সিন্ডিকেটটি একদিকে আইন অমান্য করে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালু উত্তোলন করছে। অন্যদিকে বালু পরিহনের ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো প্রতিদিন অন্তত ২৫০ বার থেকে ৩০০ বার অবাধে চলাফেরা করার কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়াসহ মাঝেমধ্যেই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। নদী থেকে বালু নিয়ে যখন ট্রাক্টরগুলো নদী পাড়ের গ্রামের পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তখন ধুলাবালি উড়ে পথচারী শিক্ষার্থীসহ সকলেই অতীষ্ঠ হয়ে পড়েন। রাস্তার পাশের বাড়িঘর ঘুলায় ছেয়ে যায়। জানা গেছে, নদী খনন করে বালুমাটি বিক্রির এই ব্যবসা করার জন্য ওই সিন্ডিকেটটি পাশের মেলান্দহ উপজেলার একজন পরিবহন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই মওসুমের বালুমাটি খনন করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় অ্যাস্কেভেটর গাড়ি ভাড়ায় এনে ব্যবহার করছে। ওই খনন গাড়িটির মূল্য ৩০ লাখ টাকা। এক ট্রাক বালুমাটি বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। সেখান থেকে ওই সিন্ডিকেট পায় ১৫০ টাকা। আর অ্যাস্কেভেটরের মালিক পায় ১৫০ টাকা। প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক বালু বিক্রয় হয়। এতে প্রতিদিন প্রতি ট্রাকে ১০০ ঘনফুট মাটি পরিবহনের হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার ঘন ফুট মাটি খনন করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটটি। প্রতি ট্রাক মাটি ৩০০ টাকা মূল্য হিসেবে প্রতিদিন মাটি বিক্রি করে আয় করছে তারা প্রায় ৯০ হাজার টাকা। ওই বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইসলামপুর থানার ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ওই সিন্ডিকেটটি কাউকে কোনো তোয়াক্কা না করে দেদারছে অবৈধভাবে নদী খনন করে বালুমাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের সেতুর নিচে এবং এর আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা প্রসঙ্গে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ওই সেতু এলাকায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু তুলা হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই মানা যায় না। খুব শিগগির সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×