ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধানখালী-লোন্দার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোড়ল বাহিনীর প্রধান ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ধানখালী-লোন্দার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোড়ল বাহিনীর প্রধান ধরাছোঁয়ার বাইরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ ধানখালী-লোন্দার ত্রাস শীর্ষ সন্ত্রাসী মোড়ল বাহিনীর প্রধান পলাশ মোড়ল এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পুলিশ তাকে ধরতে বহুবার হানা দিলেও সফল হয়নি। পলাশ মোড়ল ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেমে নেই। অসংখ্য মামলার আসামী ও একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে পলাশ মোড়ল ও তার কয়েক সহযোগীর বিরুদ্ধে। লোন্দায় তার বাহিনীর বেপরোয়া নিয়ন্ত্রন চলে। গোটা ধানখালীতে রয়েছে তার সন্ত্রাসের ছোবল। রাজনৈতিকভাবে যুবদলের ক্যাডার হলেও তার সন্ত্রাসের তান্ডব চলে আসছে বীরদর্পে। তার মারধর ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে অন্তত ১০টি পরিবার। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। পাঁচটি বছরে বহুবার পুলিশি অভিযান চলেছে কিন্তু পলাশ মোড়ল ধরা পড়েনি। তবে তারই সহোদর মামুন মোড়লকে পুলিশ সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে। এলাকায় অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পলাশ বাহিনীর তান্ডব-চাঁদাবাজী আর সশস্ত্র সন্ত্রাসের ভয়াল চিত্র। তার মারধর সন্ত্রাসের থাবা থেকে রক্ষা পায়নি তার বহু স্বজন পর্যন্ত। এ বাহিনীর রয়েছে অন্তত আট সদস্য। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে কাজ করছে আপন ভাই মামুন মোড়ল। এর চাঁদাবাজির শিকার হয়ে বিদ্যুত প্লান্টের উন্নয়ন কাজের বেসরকারি সংস্থা এনডিই এর সাব কন্ট্রাক্টর বকুল মিয়াকে ঘোলাজল খেতে হয়েছে। সবশেষ মালামাল নিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা দিয়ে ধানখালী ছাড়তে হয়। এ ঘটনায় ম্যানেজার স্বপন থানায় অভিযোগ করেছেন বলে লোকজন জানান। মামুন মোড়লের আড়াই কানি (২০ বিঘা) জমি সাত বছরের চাষাবাদের জন্য বন্ধকী রাখেন কৃষক সেকান্দার আলী। জমি আবাদের পরে ধান কাটতে দেয়া হয়নি। ওই টাকা চাইতে গেলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। চিলা গ্রামের বায়েজিদকে মারধর করা হয় ইয়াবা বিক্রিতে বাধা দেয়ায়। মাছুয়াখালীর জাকারিয়াও মারধরের শিকার হয় একই কারণে। লোন্দা ঘাটে তার ওপর দুই বার হামলা চালানো হয়। ৭৫ হাজার টাকা চুক্তিতে পলাশ মোড়লের কাছ থেকে ৩০ শতক জমি কিনেছিলেন কামাল গাজী। সেখানে বাড়িও করেন। কিন্তু দলিল না দিয়ে আরও টাকা দাবি করে পলাশ মোড়ল। না দেয়ায় কামাল গাজীর ওপর হামলা করা হয়। দাসের হাওলা গ্রামের ফয়জর হাওলাদারের ছেলে বশির হাওলাদারের বাড়িতে ইয়াবা বিক্রির জন্য গেলে বাধা দেয়ায় পলাশ বাহিনীর মারধরের কবলে পড়ে। ফয়জদ্দিন শরীফের ছেলে নিজাম শরীফকে বাংলা লিংকের টাওয়ারের পাশে ফেলে মারধর করে অচেতন করে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এসব জিজ্ঞেস করায় পলাশ বাহিনীর মারধরের শিকার হন খালেক শরীফের ছেলে উজ্জল শরীফ। তার অপকর্মের সমালোচনা ও প্রতিবাদ করায় আলম হাওলাদারের মুখমন্ডলে পানির গ্লাস ছুড়ে মারে পলাশ মোড়ল, যা গিয়ে পড়ে আহত হন জাহাঙ্গীর। ৫০ হাজার টাকা চাঁদার দাবিতে মারধর করা হয় জাকির তালুকদারকে। জাকির কাঁচামাল বিক্রি করত লোন্দায়। এখন দেশছাড়া। চম্পাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিনকে মারধর করা হয় লোন্দা খেয়াঘাটে ফেলে। ইয়াবার ব্যবসায় বাধা দেয়ায় তার ওপর হামলে পড়ে পলাশ বাহিনী। ২৫ হাজার টাকা চাঁদার বিনিময় মারধর থেকে রফা হয় মামুন মৃধার। নয়ন নামের এক যুবককে করা হয় অপহরন। ইয়াবা বিক্রিতে বাধ্য করাতে না পারায় কামালকে মারধর করা হয়। হোন্ডাচালক সুজন মোল্লা ও নান্টু হাওলাদারকে তুচ্ছ ঘটনায় মারধর করা হয়। আট হাজার টাকা চাঁদার জন্য মারধর করা হয় জসিম খাঁকে। হোন্ডা আটকে ৩৫ হাজার টাকা আদায় করা বাতেনের কাছ থেকে। ইয়াবা বিক্রির প্রতিবাদ করায় গড়াৎ খাঁ গ্রামের বাচ্চু গাজীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আদর্শ গ্রামের শামসু মিস্ত্রিকে মারধর করে হাতিয়ে নেয় বিপুল অংকের টাকা। জাফর শিকদারকে মারধরের প্রতিবাদ করায় এ্যাডভোকেট নুর হোসেনের ওপর হামলা করা হয়। স্থানীয় চৌকিদার থানায় ফোন করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এর মারধর সন্ত্রাস হামলা থেকে তার নিকটজন পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। তার ইয়াবা বিক্রি ও সন্ত্রাস বাহিনীর যোগানদাতা হিসাবে কাজ করছে বডি গার্ড নকি দেওয়ান। পাহারাদার রয়েছে ফাতেমা বেগম ও ভাগ্নে দোলন। রয়েছে সহযোগী কালাম মোড়ল। সম্প্রতি পুলিশ ভাই মামুন মোড়লকে গ্রেফতার করলে পলাশ গা ঢাকা দেয়। তবে তার অব্যাহত চাদাবাজি এবং ফের এলাকায় সশস্ত্র হামলা আতঙ্কে দিন গুনছেন লোন্দাসহ ধানখালীর মানুষ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা শহীদুল ইসলাম জানান, ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবধি এই পলাশ বাহিনী এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নেই যে না করেছে। তিনি এও জানান, র্যাবও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে তাকে ধরতে পারেনি। তারাও রয়েছে পলাশ মোড়ল বাহিনীর হামলা আতঙ্কে। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ আলাউদ্দিন জানান, যে কোন মূল্যে পলাশ বাহিনী নির্মূলে তিনি সজাগ রয়েছেন।
×