ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাস নয়, ক্যামিকেলের সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের কারনে অগ্নিকান্ড

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

গ্যাস নয়, ক্যামিকেলের সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের কারনে অগ্নিকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কসমেটিক্স তৈরীর কারখানায় গ্যাসের সিলিন্ডার নয়, ক্যামিকেলের সিলিন্ডার বিস্ফোরনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে দাবী করেছেন অভিজ্ঞরা। কারখানায় ক্যামিকেলের সিলিন্ডার বিস্ফোরনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ওই ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে এক নারী শ্রমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। নিহতের নাম শেফালী আক্তার (৩০)। সে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পলাশতলী এলাকার আব্দুল মান্নানের স্ত্রী। গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাফন কাফনের জন্য নিহতের পরিবারকে আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেছে। এ ছাড়াও দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে ঘটনার তদন্তে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন ও মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই সাইফুল আলমসহ স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জামালপুর এলাকায় এফএস কসমেটিক্স লিমিটেড কারখানায় পারফিউম, বডি স্প্রে, এয়ার ফ্রেশনার, এ্যারোসল, মেহেদী, সেভিং ফোম, সেভিং ক্রীম, ফেস ওয়াশ, হেয়ার কালার ও ক্রীমসহ বিভিন্ন প্রকার কসমেটিক্স সামগ্রী তৈরি করা হয়। কসমেটিক্স তৈরীর জন্য প্রায় সব ধরণের ক্যামিকেল এ কারখানায় তৈরী কসমেটিক্স সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনার, সেভিং ফোম, বডি স্প্রে, এ্যারোসল জাতীয় কসমেটিক্স সামগ্রী তৈরীতে ছোট ছোট সিলিন্ডারে ভর্তি সিএফসি (ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন) গ্যাস এ কারখানায় ব্যবহার করা হয়। (সিএফসি সম্পূর্ণরুপে হ্যালোজেনেটেড প্যারাফিন হাইড্রোকার্বন। যা কেবল কার্বন, ক্লোরিন এবং ফ্লোরাইন ধারণ করে এবং মিথেন, ইথেন এবং প্রোপেনের অস্থির ডেরিভেটিভ হিসেবে উৎপাদিত হয়।) কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, নি¤œশ্রেণীর ক্রেতাদের টার্গেট করে এ কারখানায় কসমেটিক্স সামগ্রী তৈরী করা হতো। ধারণা করা হচ্ছে- মঙ্গলবার বিকেলে কারখানায় উৎপাদন কাজ চলাকালে উত্তপ্ত হওয়ার কারনে ক্যামিকেলের একটি সিলিন্ডার (সিএফসি) হঠাৎ বিকট শব্দে বিষ্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন কারখানায় থাকা অন্যান্য ক্যামিকেলে ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তেই আগুন পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে আরো কয়েকটি সিলিন্ডারের বিষ্ফোরণ ঘটে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে কারখানার ম্যানেজার জাকির হোসেন (৩৮), শেফালী আক্তার (৩০), নাজনীন (২৬) ও তার স্বামী আব্দুর রহিম (৩২)সহ অন্ততঃ ১১ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়। এলাকাবাসি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দগ্ধদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রেরণ করে এবং আগুন নেভায়। দগ্ধদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় তিন নারী ও দুই পুরুষ শ্রমিকসহ ৫জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে শেফালী মারা যায়। তারা আরো জানান, কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর কারখানার গ্যাস সিলিন্ডার, বয়লার ও এয়ার কম্প্রেসার অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের পর কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত প্রত্যেককে দাফন কাফনের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দগ্ধ ও আহত অন্যদের চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তিনি আরো জানান, কারখানার ওই ঘটনা তদন্তে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কালিয়াকৈর থানার ওসি, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক’র একজন প্রতিনিধি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন প্রতিনিধি।
×