ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল অস্ত্রোপচার: ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে ৯ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ভুল অস্ত্রোপচার: ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে ৯ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে ভুয়া চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার মাকসুদা বেগমকে ৯ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর মধ্যে অস্ত্রোপচারকারী ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসকে দিতে হবে ৫ লাখ টাকা; বাকিটা দেবে বাউফলের নিরাময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ওই টাকা ভুল অস্ত্রোপাচারে ক্ষতিগ্রস্ত বরিশালে মাকসুদা বেগমকে পরিশোধ করতে হবে। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সামসাদ। পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবুল। মাকসুদা বেগমের পক্ষে ছিলেন ইমরান এ সিদ্দিক। এছাড়া ক্লিনিকের পরিচালক ও নার্সের পক্ষে আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম শুনানি করেন। ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার মাকসুদা বেগম হাইকোর্টে করা তার আবেদনে ২৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। তবে ওই আবেদনের ওপর বুধবার শুনানি বা আদেশ হয়নি বলে আইনজীবীরা জানান। ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসের আসল নাম অর্জুন চক্রবর্তী। গত ১১ ডিসেম্বর তিনি হাইকোর্টে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করলে তাকে বাউফল থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করার নির্দেশ দেয় আদালত। একটি দৈনিকে গত ২২ জুলাই এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য মাকসুদা বেগমকে (২৫) বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে মাকসুদার একটি মেয়ে হয়। কয়েক দিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফেরেন। এক মাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুই মাস পর মাকসুদার খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে, খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। পরে পটুয়াখালীর এক চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন ওই নারী। সেখানে ১২ জুলাই মাকসুদার পেট থেকে গজ বের করা হয়। চিকিৎসকেরা সে সময় জানান, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালিতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে মাকসুদার। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ২৩ জুলাই আদালতের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা। হাইকোর্ট সেদিন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে তলব করে। ১ অগাস্ট আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাদের। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ নয়জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। সে প্রতিবেদনেই চিকিৎসক রাজন দাসের ভুয়া লাইসেন্সের বিষয়টি ধরা পড়ে।
×