ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনেড হামলা মামলার যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর

তাইজউদ্দিনকে ভুয়া পাসপোর্টে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়া হয়

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

তাইজউদ্দিনকে ভুয়া পাসপোর্টে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেয়া হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১৯তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ভয়াবহ হামলায় গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাইজউদ্দিনকে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২১ আগস্ট হামলার পর অবিস্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করে তা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ না করে আদালতের যথাযত নির্দেশ ছাড়া উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংস করা হয়। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের পরবর্তী যুক্তিতর্কের জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরামউদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। এছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে মোঃ আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরাফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। এঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে বলেন, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়নে দেয়া আশ্বাস অনুযায়ী প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ মামলার আসামি ডিজিএফআই ও পুলিশের কর্মকর্তাগণ। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী (পিডব্লিও-৮৪) মেজর (অব) সৈয়দ মুনিরুল ইসলাম, (পিডব্লিও-৮৫) আবদুস সাত্তার (জব্দ তালিকা), (পিডব্লিও-৮৬) মোঃ খালেক (জব্দ তালিকা), (পিডব্লিও-৮৭) মোঃ ওবায়দুল হক (জব্দ তালিকা), (পিডব্লিও-৮৮) আশিক সাঈদ, (পিডব্লিও-৮৯) খন্দকার ফজলে রহিম, (পিডব্লিও-৯০) লে. কর্নেল মোঃ রফিকুল ইসলাম, (পিডব্লিও-৯১) পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার রেজাউল হাসান, (পিডব্লিও-৯২) হাফেজ হুমায়ূন কবির, (পিডব্লিও-৯৩) রফিকুল ইসলাম, (পিডব্লিও-৯৪) আলমাস উদ্দিন, (পিডব্লিও-৯৫) পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান খন্দকার, (পিডব্লিও-৯৬) পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল হাসান, (পিডব্লিও-৯৭) এইচএম সোহরাওয়ার্দী, (পিডব্লিও-৯৮) মোঃ মাহবুবুর রহমান, (পিডব্লিও-৯৯) খন্দকার মিজানুর রহমান (জব্দ তালিকা), (পিডব্লিও-১০০) মেজর (অব) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী শামস, (পিডব্লিও-১০১) মেজর আবুল মারুফ আশরাফুল কবীরের দেয়া জবানবন্দীর আলোকে যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী এ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিরিহ জজ মিয়ার (জজ মিয়াকে দিয়ে জবানবন্দী আদায় করে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হয়) মা জোবেদা খাতুনের জবানবন্দীর আলোকে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচ- শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাবৃন্দও এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এ ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগপত্রে ৪০৮ জন, সম্পূরক অভিযোগপত্রে ৮৩ এবং রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আরও ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এ সাক্ষ্য শুরু হয়ে শেষ হয় গত ৩০ মে। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। এরপর সব আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়। আসামিপক্ষে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে।
×