ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় তরুণ বখাটে গ্যাংয়ের ভয়াবহ তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকায় তরুণ বখাটে গ্যাংয়ের ভয়াবহ তৎপরতা

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীতে হত্যাকা-ের তদন্ত করতে গিয়ে বের হয়ে আসছে তরুণ বখাটেদের গ্যাংয়ের সন্ধান। এই গ্যাং পার্টি নির্দিষ্ট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে মাদক সেবন, মাদক বিক্রি, তরুণীদের উত্যক্ত করা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই করে বেড়ায়। কেউ প্রতিবাদ করলে পরিণতিতে তাদের হাতে নির্ঘাত খুন হতে হয়। রাজধানীতে খুনের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সন্ধান পায় গ্যাং গ্রুপের। গ্যাং গ্রুপের ৫ সদস্য গ্রেফতারের পর ২ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দীতে এই গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের অপরাধী কর্মকা-ের সন্ধান পায় পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীতে প্রথম তরুণ বখাটে গ্যাং গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায় উত্তরায়। এরপর সন্ধান মিলেছে হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর এলাকায়। রায়েরবাগ এলাকায় সাব্বির গ্রুপের নেতা সাব্বির খুন হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। এই খুনের ঘটনার তদন্ত করে তরুণ বখাটে গ্যাং গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়। রাজধানীর হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর থানার এলাকার দু’টি তরুণ বখাটে সন্ত্রাসী গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় মাদক সেবন, মাদক বিক্রি, তরুণীদের উত্যক্ত করা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করে বেড়াচ্ছে। এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও বিরোধের কারণে গত ৮ নবেম্বর খুন হয় সাব্বির হোসেন (২৪) নামের এক তরুণ। তদন্তে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নিহত সাব্বির ও তার সহযোগীরা আগের রাতে সোহেল নামে এক সন্ত্রাসীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও দুই হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয়। সাব্বিরের গ্রুপের রায়েরবাজার ও জাফরাবাদ এলাকায় আধিপত্য রয়েছে। আর সোহেল ও তার সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণ শংকর এলাকায়। ছিনতাইয়ের ঘটনার জের ধরে পরদিন সকালে সোহেল ও তার সহযোগীরা রায়েরবাজারের একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে হামলা চালিয়ের সাব্বিরকে হত্যা করে। প্রথমদিকে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ক্লু-লেস থাকলেও গত এক মাসের তদন্তে বের হয়ে আসে সাব্বির হত্যার পুরো তথ্য। সাব্বির হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হওয়ার সঙ্গে বেরিয়ে এসেছে গ্যাং গ্রুপের তথ্যও। পুলিশ এরই মধ্যে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে দুই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তবে এখনও এই খুনের প্রধান আসামি সোহেল ও চাচা টুটুলকে গ্রেফতার করতে না পারলেও পুলিশ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করে তরুণ বখাটে গ্যাং গ্রুপের সন্ধান লাভ করার ঘটনাটি এক বিরাট সাফল্য বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের দাবি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর থানার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, সাব্বির হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জনকে। এর মধ্যে ৩ জন এজাহারভুক্ত। প্রধান সন্দেহভাজন সুবলসহ দু’জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। রাজধানীর শংকর এলাকার একটি গ্যাং গ্রুপের ছেলেরা এই হত্যাকা- ঘটায়। আরেকটি গ্যাং গ্রুপের প্রধান ছিল নিহত সাব্বির। ঘটনার আগের রাতে সোহেলের একটি মোবাইল ফোন ও মাত্র দুই হাজার টাকা নিয়ে যায় সাব্বির। এরপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করে ফকে সোহেল। প্রধান সহযোগী চাচা টুটুল। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শংকর এলাকায় একটি বখাটে গ্যাং গ্রুপ ওই এলাকার মাদক ও ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করে। ওই গ্রুপের প্রধান ফকে সোহেল। আর রায়েরবাজার ও জাফরাবাদ এলাকায় গে-ারি সোহাগ আরেকটি গ্যাং গ্রুপের প্রধান। সাব্বির ছিল ওই দলের। তারা এলাকায় মাদক সেবন এবং কারবারও চালায়। এ দুর্বৃত্তরা এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। বছিলা, বেড়িবাঁধ, রায়েরবাজার, জাফরাবাদসহ বিভিন্ন মোড়ে আড্ডাও দেয়। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন রায়েরবাজারের সচিব বাড়ির গলির ৩/৪/৫ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সাব্বির। তার বাবার নাম ডাঃ গোলাম সারোয়ার। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ছোট সাব্বির এসএসসি পাস করার পর আর লেখাপড়া করেনি। তাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছিল পরিবার। রাতের বেলায় প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতো সাব্বির। গত ৭ নবেম্বর বাসা থেকে বের হওয়ার পর তার আর খোঁজ মিলছিল না। ৮ নবেম্বর পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে গিয়ে সাব্বিরের লাশ শনাক্ত করেন। সাব্বিরকে রায়েরবাজারের একটি নির্মাণাধীন ভবনে থাকা অবস্থায় ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। নিহত সাব্বিরের মা শাহিদা বেগম ১০ নবেম্বর ৮ জনের নাম উল্লেখসহ কয়েকজন অজ্ঞাত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলা নম্বর: ৫১ (তাং ১০/১১/১৭) করেন। আসামিরা হলো- সুবল, পান্না, সোহেল, রাজু ওরফে শুভ, মিতা রুবেল, আলম, টুটুল ওরফে চাচা এবং সাব্বির বাবু। রাজধানীর রায়েরবাজারের সাব্বির খুনের তদন্ত করতে গিয়ে হাজারীবাগ ও মোহাম্মদপুর এলাকায় তরুণ বখাটে গ্যাং গ্রুপের সন্ধান পায় পুলিশ। এর আগে গ্যাং গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায় উত্তরায়। রাজধানীর উত্তরায় গত ৬ জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস’ গ্যাং গ্রুপের দ্বন্দ্বে ট্রাস্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আদনান কবীরকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র আদনান কবীর হত্যাকা-ের তদন্তে বের হয়ে আসে। হত্যাকা-ের তদন্ত করতে গিয়েই রাজধানীর উত্তরার পর হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর থানাধীন এলাকাতেও তরুণ বখাটেদের গ্যাং গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায় বলে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের দাবি।
×