ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শৃঙ্খলা বিধিমালায় সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

শৃঙ্খলা বিধিমালায় সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে

বিকাশ দত্ত ॥ অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুসংহত হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা কমেনি বরং একটু বেড়েছে। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হয়েছে। এতে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। বিচার বিভাগের কর্মী এবং বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করেই রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা আরও বেড়ে গেছে। ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সংবিধান নিয়ে ফুটবল খেলেছেন। সরকার আর এই সংবিধান নিয়ে খেলতে দেবে না। অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের পর আইনমন্ত্রী, এ্যাটর্নি জেনারেলসহ আইন বিশেষজ্ঞগণ এমনই আভাস দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ ভিন্নমতও পোষণ করে বলেছেন, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে গেছে। এটা করা উচিত ছিল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কিন্তু তা না করে ১৩৩ অনুযায়ী বিধি করা হয়েছে। যদিও এই ১৩৩ বিধি প্রযোজ্য হয় প্রজাতন্ত্রের সরকারী কর্মচারীদের জন্য। গেজেটে মাজদার হোসেন মামলার স্পিরিটটা ধ্বংস করা হয়েছে। নানা জটিলতা কাটিতে রাষ্ট্রপতির মোঃ আবদুল হামিদের আদেশক্রমে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক স্বাক্ষরিত ২৪ পৃৃষ্ঠার এই গ্রেজেট সোমবার প্রকাশ করা হয়। এই বিধিমালা বাংলাদেশে জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা ২০১৭ নামে অভিহিত হবে। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সময় অধস্তন বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের টানাপড়েন তৈরি হলেও তার পদত্যাগের পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠান খসড়া সুপ্রীমকোর্ট গ্রহণ করেছে। এর আগে পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সময় কয়েকবার সময় নেয়ার পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠান খসড়া ফিরিয়ে দিয়েছিল আপীল বিভাগ। তবে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসে দুই পক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়। সরকারকে এ কারণে ২৫ বার সময় নিতে হয়। সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অধস্তন আদালতের শৃঙ্খলাবিধিমালায় সুপ্রীমকোর্টের ক্ষমতা কোথাও ক্ষুণœ করা হয়নি বরং বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শৃঙ্খলাবিধিমালার ২৯ বিধির (২) উপবিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের (রাষ্ট্রপতির) প্রস্তাব ও সুপ্রীমকোর্টেও পরামর্শ অভিন্ন না হলে সুপ্রীমকোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে। যা আগে কখনই ছিল না। মন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে শিরধার্য মনে করে এই বিধিমালা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে এবং আপীল বিভাগের সকল বিচারপতির সঙ্গে বসেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাজদার হোসেন মামলার যে ১২টি নির্দেশনা ছিল তার সাত নম্বর নির্দেশনায় যা ছিল সেটাকেও এটার মধ্যে গ্রহণ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ আচরণবিধি করা হয়েছে। এই আচরণবিধি করা হয়েছে অধস্তন আদালতের জন্য। সকলের চাহিদা অনুযায়ী এই আচরণবিধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা সিভিল সার্ভিসে আছেন তাদেরও কিন্তু একটা আচরণবিধি আছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস ও সিভিল সার্ভিসের আচরণবিধির মধ্যে যদি আকাশ পাতাল পার্থক্য হয় সেটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিচার বিভাগের জন্য যেখানে বিশেষ বিধান রাখা দরকার সেখানে তা রাখা হয়েছে। সরকার সব সময়ই সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে গাইড লাইন হিসেবে গ্রহণ করেছে। তার কারণ সংবিধান হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। রাষ্ট্রপতি যখন জুডিসিয়ারির ব্যাপারে কোন কাজ করেন, তিনি আইন মন্ত্রণালয়কে তাঁর সেক্রেটারিয়েট হিসেবে ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির কাছে নথি চালাচালির জন্য একটা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শৃঙ্খলা বিধিমালা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা দুই-তিনটা কারণে সমালোচনা করে থাকেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে তারা বুঝুক আর না বুঝুক সমালোচনার জন্য সমালোচনা তাদের করতেই হবে। তাদের যে বিশদ পরিকল্পনা ছিল তা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন খড়-কুটো ধরে তারা সমালোচনা করছেন। সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করতে সরকারের কোন আপত্তি নাই। তবে গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য সমালোচকদের পড়াশুনা করতে হবে। পড়াশুনা করলেই শৃঙ্খলা বিধিমালায় তারা সমালোচনা খুঁজে পাবে না। তিনি সমালোচকদের সংবিধান পড়ে দেখার আহ্বান জানান। সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওনারা ওনাদের ইচ্ছামতো ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সংবিধান নিয়ে ফুটবল খেলেছেন। সরকার আর এই সংবিধান নিয়ে খেলতে দেবে না। এখন অধস্তন আদালতের বিচারকরা স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে বিচার কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ২২ অনুচ্ছেদেও এ বিষয়ে বলা আছে। আর কি লাগবে। সংবিধানতো তিনি সংশোধন করতে পারবেন না। সাবেক প্রধান বিচারপতি শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে কিভাবে বাধা দিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী ছিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদকে নিয়ে। এই ষোড়শ সংশোধনীর আর্গুমেন্টের সময় ৯৬ অনুচ্ছেদের ওপরই কিন্তু আর্গুমেন্ট হয়েছিল। ১১৬ অনুচ্ছেদের ইস্যু ছিল না। কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি তাঁর জাজমেন্টের মধ্যে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে সংবিধান পরিপন্থী করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি থেকেই বুঝতে হবে সাবেক প্রধান বিচারপতি কিভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, সরকার সংবিধান অনুযায়ী কাজ করবে। তিনি মনে করেন, সরকার এখন পর্যন্ত সংবিধান বিরোধী কোন কাজ করেনি। রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নবেন ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিচার বিভাগের কর্মী এবং বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে। সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করেই রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত নেবেন। গেজেট প্রকাশে তিনি অনেকটাই ভারমুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাঝখানে আমাকেই অবস্থান নিতে হয়। যাকে বলে সেতুবন্ধন। সুতরাং সুপ্রীমকোর্টের একটি আগ্রহ ছিল এটা এতদিন হচ্ছে না কেন। আর বার বার আমাকে সময় নিতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য নিশ্চয় বিব্রতকর ছিল। আমার সেই বিব্রতকর অবস্থার পরিসমাপ্তি হলো। আজ বুধবার আদালতের কাছে একটা দরখাস্ত দিয়ে দাখিল করব।’ আগের খসড়া এবং এখনকার গেজেটের মধ্যে মূল তফাতটা কী-জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিল, আমি যতদূর বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো সমস্ত ক্ষমতাটা সুপ্রীমকোর্টের হাতেই থাকবে। সেটা তো সংবিধানবিরোধী একটা অবস্থান। সংবিধানে আছে রাষ্ট্রপতি করবেন কিন্তু সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন।’ সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অবস্থান কি সংবিধান বিরোধী ছিল জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘১১৬ যে পর্যন্ত সংবিধানে আছে, এখন যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তো সর্বময় ক্ষমতা সুপ্রীমকোর্টের হাতে দিয়ে দেয়া যায় না।’ ‘প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যেটা চেয়েছিলেন, যে এটা সম্পূর্ণরূপে বিচার বিভাগের হাতেই থাকবে। সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।’ ‘রাষ্ট্রপতি সংসদ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ। এই সবটারই একজন সেতুবন্ধন বলতে হবে। বা রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ থাকে কিন্তু রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে। এ ব্যাপারগুলোকে বাদ দেয়া যাবে না।’ গোড়াতেই গলদ রয়েছে ॥ গংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম, আমির উল ইসলাম বলেছেন, প্রকাশিত গেজেটের গোড়াতেই গলদ রয়েছে। আমি অবাক হয়েছি, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে গেছে। এটা করা উচিত ছিল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কিন্তু তা না করে ১৩৩ অনুযায়ী বিধি করা হয়েছে। যদিও এই ১৩৩ বিধি প্রযোজ্য হয় প্রজাতন্ত্রের সরকারী কর্মচারীদের জন্য।’ ‘সংবিধান যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করেছে সেই জায়গায় রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয় প্রতিস্থাপিত হতে পারে না। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আইন মন্ত্রণালয় পালন করতে পারে না।’ তিনি বলেন, আমরা যখন সংবিধান তৈরি করেছিলাম তখন বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের বিষয়টাতে প্রধান্য দিয়েছিলাম এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বৈশিষ্ট অক্ষুণœ রেখে। এজন্য অধস্তন আদালতের উপরে ১১৪, ১১৫, ১১৬ পরিচ্ছেদ আমরা দিয়েছিলাম। অর্থাৎ অধস্তন আদালত কিন্তু আমাদের সংবিধানের একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলা যেতে পারে। এখন তাদের যদি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিধি-বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেটা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং এটি মাসদার হোসেন মামলার পরিপন্থী। আইনমন্ত্রীর ভূমিকা দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা রিপ্লেস করা যায় না। এটা করাতে বিচার ভিাগের স্বাধীনতা, বৈশিষ্ট, পৃথকীকরণ খর্ব করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো অবশ্যই সুপ্রীমকোর্টের নজরে আনা হবে। আমি ইতিমধ্যেই দু-তিনদিন কোর্টকে বলেছি। ভেতরে ভেতরে কি আলোচনা হচ্ছে কেউই জানতে পারছি না। আমি উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। কার সঙ্গে কি আলোচনা হচ্ছে, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির। এখানে রাষ্ট্রপতিও অনুপস্থিত প্রধান বিচারপতিও অনুপস্থিত। প্রধান বিচারপতি সবসময়ই থাকতে হবে। ভারপ্রাপ্ত হয় যখন প্রধান বিচারপতি অসুস্থ হন বা কাজ পরিচালনা করতে পারছেন না তখন। কিন্তু রিজাইন দেয়ার পরে প্রধান বিচারপতি অবিলম্বে করা উচিত। ভুুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে ॥ সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।’ ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, অনেক দিনের একটা দাবি ছিল। নিম্ন আদালতের বিচারকদের যারা ম্যাজিস্ট্রেসি করছে তাদের শৃঙ্খলাবিধি এবং আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হোক। বিলম্ব হলেও এটা প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল আমার মনে হয় বিধি প্রকাশের পর ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। এই বিধি অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের কোন রকম অসদাচরণ বা অভিযোগ তোলা হয় তাহলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। সেটা বিস্তারিত আছে এখানে। আগে যে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এই গেজেটে কতটুকু সুরাহা করা হয়েছে? তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রীর কয়েকটা সিটিং দিয়ে সর্বশেষ সুপ্রীমকোর্ট একমত হয়েছে এবং সে আলোকেই কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এটা যখন তিনি অনুমতি দিয়েছেন এটা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ১১৬ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে তা করার কথা। সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা হয়েছে এ বিষয়ে? বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অদক্ষতা যাই থাকুক কোন অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাহেল বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই প্রসেসটা শেষ করার পরে রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই অদেশটি দেবেন। সরাসরি কোন ফাইল রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে পারবে না। এটার প্রসেসটা হলো সুপ্রীমকোর্ট থেকে কোন ফাইল ইনিশিয়েট হলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভার্বেল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আইন বা বিধি তো বাইবেল না যে, পরিবর্তন করা যাবে না। এটার কার্যকারিতা আছে যদি কখনও মনে হয় অসুবিধা আছে তাহলে সংশোধন করা যেতে পারে। যদি এমন বিধান থাকে যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তবে সেটা সংশোধন করা যেতে পারে। আইনও তো বাতিল হচ্ছে। আর এটা তো বিধি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুসংহত হয়েছে ॥ সুপ্রীমকোর্টে আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, মাজদার হোসেন মামলার আলোকে এই গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। সাংবিধানিক বিধিবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকেই এই বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুসংহত হয়েছে। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার কোনরূপ দ্বন্দ্ব বা জটিলতা ও সৃষ্টির সুযোগ নেই। স্পিরিট ধ্বংস করেছে ॥ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মামলার স্পিরিট ধ্বংস হয়েছে। গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।’ মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আজ বুধবার বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
×