ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সহযোগিতা চাইলেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সহযোগিতা চাইলেন শেখ হাসিনা

অনলাইন ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কাছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিস্তারিত জেনে এর স্থায়ী সমাধানের কথা বলেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্টও।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ম্যাক্রোঁ। সেখানে শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে শেখ হাসিনাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন তিনি। পরে বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা ছাড়াও জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস এবং বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান তিনি। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে বিস্তারিত জানতে চান ম্যাক্রোঁ। “ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার অবস্থা এবং তা মেকাবেলায় সরকার কী করছে, তা জানতে চান। আমাদের কাছ থেকে কী আশা করছেন, তাও বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। “মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রায় দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা চলে আসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বোঝা এবং পরিবেশের উপর বড় ধরনের দুর্যোগ।” কয়েক যুগ ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অবস্থানের মধ্যে গত অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, এই পাঁচ দফা বাস্তবায়নের মধ্যেই সমস্যার সমাধান নিহিত। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও চাপ দুটোই অব্যাহত থাকুক। এটা না করলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন করা যাবে না।” ওয়ান প্লানেট সামিটে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে সোমবার সন্ধ্যায় প্যারিসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিন্ন প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের কর্মপন্থা নির্ধারণই প্যারিসের এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছরের মাথায় মঙ্গলবার প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় এবং এ বিষয়ে সম্মেলনের আয়োজন করায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। শহীদুল হক বলেন, “জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার উদ্যোগ থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে নেতৃত্বের অভাব ও একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এই মিটিংটা ডাকা হয়েছে।” জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথাও মাক্রোঁকে বলেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসাবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে সবাইকে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। বৈঠকে দুই দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সর্ম্পকের বিষয়েও আলোচনা হয় জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, “বিনিয়োগে নিজ দেশের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘কোন কোন সেক্টরকে আপনি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন, যেখানে ফ্রান্স বিনিয়োগ করতে পারে’।”জ্বালানি, অবকাঠামো, ওষুধ, তথ্য-প্রযুক্তি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভবনার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন গঠনের কথাও বলেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তা গ্রহণ করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সূত্র:বিডিনিউজ
×