ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকদের শৃংখলাবিধির গেজেট প্রকাশ দুর্ভাগ্যজনক ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০১:১৩, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

বিচারকদের শৃংখলাবিধির গেজেট প্রকাশ দুর্ভাগ্যজনক ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃংখলা ও আচরণ বিধির গেজেট প্রকাশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ আবারও প্রশাসনের হাতে গেলো যা দুর্ভাগ্যজনক। বিচার বিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে বিরোধী মতকে দমন করতেই নি¤œ আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃংখলাবিধির গেজেট প্রকাশ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভয়াবহ চক্রান্তের অংশ এটি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কমরেড তোয়াহা’র ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও রাজশাহীর তানোরে সাম্যবাদী বিপ্লবী শহীদদের স্মরণে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল সাম্যবাদী দল আয়োজি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৮ বছর ধরে মামলা চললো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মামলা। সেই মামলার রায় হলো বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে, বিচার বিভাগে প্রশাসনের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। এ ব্যাপারে রায় দিয়েও দিয়েছিলেন, রায় বাস্তবায়নও করতে বলেছিলেন শাসন বিভাগকে। আর তা বলার কারণে আমাদের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃংখলা ও আচরণ বিধির গেজেট প্রকাশের ফলে এখন সরকারের হাতেই থাকছে নিয়ন্ত্রণ। বিচার বিভাগের যে শৃংখলা বিধান করেছে, এটি ভয়াবহ রকমের একটি বিচ্যুতি। এর মাধ্যমে বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করেই ভিন্ন মতকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার সামলোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংবিধান বাইবেল নয়, তাই জনগণের পওয়োজনে সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে। তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, যার মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্বাচিত করবে। ধানাই-পানাই করে সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচন হবে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, দশ টাকায় চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো সরকার কিন্তু চালের দাম এখন ৬০ টাকা কেজি। এ সরকার প্রতিজ্ঞা করেছিলো কৃষকদেও বিনা মূল্যে সার দেবে। কিন্তু সারের দাম এখন আগের তুলনায় তিন-চারগুণ বেশি। পেঁয়াজের কেজি এখন ১২৫ টাকা। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সবকিছু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।উর্ধ্বমুখী দ্রব্যমূল্যের কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আর শাসক গোষ্ঠী তৃপ্তি লাভ করেছে তারা দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল করেছে। ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে কল্পিত সম্পদের তথ্য দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার নামে বিদেশে সম্পদ রয়েছে বলে যেসব গণমাধ্যমের কথা বলা হচ্ছে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ধরনের ভিত্তিহীন তথ্য তারাই প্রচার করে যাদের পায়ের নিচে কোনো মাটি নাই। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, সরকারি দলের কোনো কোনো বড় নেতা যারা বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন তারা মাঝে মাঝে এসে বড় বড় কথা বলেন। আগে একবার বলেছেন, তার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ জিতবেই। এখন বলছেন, আওয়ামী লীগ আরো বেশি ভোটে জিতবে। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে কোন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ কথা বলেন। তাহলে দেন না একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন তাহলেই তো প্রমাণ হয়ে যাবে। এমন নির্বাচন দিন যে নির্বাচনে আপনারা সরকারে থাকবেন না। নিরপেক্ষ ভোট হবে, জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। এমন নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কত ভোট পায় আর বিএনপি কত ভোট পায় দেখুন। তিনি বলেন, জনগণই হচ্ছে একমাত্র শক্তি যার ওপর আমরা নির্ভর করি। আমরা বাইরের কোন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের উপর নির্ভর করি না। তাই আমাদের বাইরে থেকে ঘুরে এসে বলতে হয় না আমরা জিতব। সরকার অনর্গল মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র হলো দেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান গুলো ধ্বংস করে ফেলা। যারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়, তারাই গুম, খুন হত্যা করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়। নেপালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, সেখানে বিরোধী দল বিপুল ভোটে নির্বাচিত হচ্ছে। তাদের শক্তি জনগণ। তেমনিভাবে জনগণই আমাদের শক্তি। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সভাপতি রেহেনা প্রধান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। এর আগে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতনিধি নির্বাচন-২০১৭ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আঠারো বছর আগে মাসদার হোসেন মামলার পর বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ হয়েছিল। বিচার বিভাগ নিয়ে আমরা বহু কথা বলেছি। এমনকি সংসদে আইন পাস হয়েছে। কিন্তু সেই বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ আবারো প্রশাসনের হাতে নিয়ে গেলো এবং কোনোভাবেই তা আটকানো গেল না। তিনি বলেন, যখনই আমরা কোনো কথা বলতে যাই এবং প্রতিবাদ করি তখন আমাদের ওপর মামলা দেওয়া হয়। রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে স্বাগত জানিয়ে ফখরুল বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে বিএনপি আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবেই অংশ নেয়। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এই গণতন্ত্রের আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্তচিন্তা ও অধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, যতক্ষণ না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো আন্দোলন শুরু হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই আন্দোলন লক্ষ্যে পৌঁছায় না। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট নির্বাচনকে শুধু সিনেট নির্বাচন হিসেবে না নিয়ে আমাদের গণতন্ত্রকে মুক্ত চিন্তার অধিকারকে মুক্ত করার নির্বাচন হিসেবে নিতে হবে। অত্যন্ত কঠিন সময়ে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট নির্বাচন হতে যাচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এই সময়টা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচাইতে কলঙ্কজনক একটি অধ্যায়। আজকে গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের নামে আমাদের শিক্ষক সমাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ছাত্রসমাজের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অথবা তাদেরকে একঘরে করে রাখা হচ্ছে। তাদের কোনো রকম কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি বিশেষ দলের প্রাধান্য বিস্তার করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, সেই চেতনাগুলো আজকে ধ্বংস হতে চলেছে। যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা মুক্তচিন্তার পাদপিঠ বলে মনে করি, দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার বলে মনে করি, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন পুরোপুরিভাবে একটি একদলীয় চিন্তাভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পর আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। আমরা জানি না নির্বাচনের ফল কী হবে? এখানে জয়পরাজয় প্রধান লক্ষ্য হবে না। লক্ষ্য হবে আমাদের লড়াই-সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী পরিষদেও প্রার্থীদেও পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ২৫ জন প্রার্থী হলেন ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. উম্মে কুলসুম রওজাতুল রোম্মান, এ কে এম ফজলুল হক মিলন, এ টি এম আবদুল বারী ড্যানী, এ বি এম ফজলুর করিম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কে এম আমিরুজ্জামান শিমুল, ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ড. জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম, এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, ডা. প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, ডা. মোহাম্মদ রফিকুল কবির লাবু, মো. আশরাফুল হক,এ্যাডভোকেট মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ড. মো. শরীফুল ইসলাম দুলু, মো. সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, মো. সেলিমুজ্জামান মোল্লা সেলিম, শওকত মাহমুদ ও ড. সদরুল আমিন। প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী প্যানেলের সিনেট নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, অধ্যাপক আক্তার হোসেন, ওবায়দুল ইসলাম, ড. মামুন আহমেদ, ড. মোর্শেদ হোসেন, ড্যাব সভাপতি এম এ আজিজ প্রমুখ।
×