ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় নিয়ম ছাড়া চলছে ৩০ ইটভাটা

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

কলাপাড়ায় নিয়ম ছাড়া চলছে ৩০ ইটভাটা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ সাগরপারের প্রাকৃতিক সৈন্দর্যে ঘেরা পর্যটন সমৃদ্ধ জনপদ কলাপাড়ায় ধানক্ষেতে কিংবা নদীরপাড়ে বনাঞ্চল ঘেঁষে ইটভাটা নির্মাণের হিড়িক চলছে। যেন কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা নেই। যে যেভাবে পারছে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। প্রভাবশালী মহল সরকারি দলের নেতাদের পার্টনারশীপে গত এক বছরে অন্তত নতুন ২০টি ইটভাটা করা হয়েছে। বর্তমানে ৩০টি ইটভাটা নির্মাণ হয়েছে। কৃষিজমি, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বনাঞ্চল রয়েছে-এর আশে-পাশের জায়গায় ফ্রি-স্টাইলে ইটভাটা করা হয়েছে। এসব ইটভাটার মালিকরা সরকারি খাসজমি দখল করেছে শত শত একর। কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষিজমির টপসয়েল। পরিবেশ অধিদফতরের কোন নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে ৩/৪টি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। করা হয়েছে জেল-জরিমানা। কিন্তু অবৈধভাবে ইটভাটা তৈরির কাজ বন্ধ থাকছেনা। ফলে পর্যটন এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ কৃষিজমি এখন চরম বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স-মিল করা হয়েছে। অথচ নীলগঞ্জের অধিকাংশ জমি তিন ফসলী। অর্ধেক জমিতে ১২ মাস সবজির আবাদ হয়। রয়েছে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নদীর চারদিকে রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আন্ধারমানিক নদীর দীর্ঘ এলাকা সাগর মোহনা পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম। অথচ এই নদীরপার ঘেঁষে একের পর ইটভাটা করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্যানুসারে নীলগঞ্জে ১০টি, টিয়াখালীতে ১০টি, মিঠাগঞ্জে দুইটি, চম্পাপুরে একটি, চাকামইয়ায় একটি, ধানখালীতে একটি, লতাচাপলীতে দুইটি, মহিপুরে তিনটি ইটভাটা করা হয়েছে। আরও দুই/একটি ইটভাটা করার প্রস্তুতি চলছে। সরকারি হিসেবে ইটভাটা কতটি তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। এসব ইটভাটায় কয়লার পাশাপাশি জালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর ইটভাটার ইট পরিবহনে ব্যবহৃত ছয় চাকার অবৈধ দৈত্যাকৃতির যান ট্রলি ব্যবহৃত হওয়ায় সরকারি অর্থায়নে করা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এনিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ক্যাডার দ্বারা লাঞ্ছিত করা হয় সাধারণ মানুষকে। ইটভাটার কারনে এখন বেড়িবাঁধের বাইরের বনাঞ্চল সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ হয়ে গেছে। পাউবোর সরকারি খাস জমি পর্যন্ত দখল করে ইটভাটা করা হচ্ছে। বসতভিটা পর্যন্ত বসত উপযোগিতা হারাচ্ছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৩ এ বলা হয়েছে- লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা করা যাবে না। কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুতে কৃষিজমি কিংবা পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া খাল, পুকুর, নদীরপাড় কিংবা চরাঞ্চল কেটে মাটি সংগ্রহ করতে পারবে না। ৫০ শতক ফাঁপা ইট (হলো ব্রিক) প্রস্তুত করতে হবে। এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত কোন সড়ক ইটসহ কাঁচামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোন ধরনের কাঠ পোড়ানো যাবে না। এমনকি মান সম্পন্ন কয়লা পোড়াতে হবে। আবাসিক, সংরক্ষিত বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা কিংবা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান কিংবা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। এসব মেনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে নিষিদ্ধ এলাকার এক কিমি দুরে। বনাঞ্চলের দুই কিমি দুরে, ক্লিনিক হাসপাতালের দুই কিমি দুরে এবং গ্রামীণ সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দুরে ইটভাটা করতে হবে। এসব নিয়ম মেনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে ইটভাটার জন্য আবেদন করতে পারবে। জেলা প্রশাসক তদন্ত করে আইনের সবকিছু ঠিক থাকলে লাইসেন্স দেয়ার বিধান রয়েছে। প্রত্যেক লাইসেন্সএর মেয়াদকাল হবে তিন বছর। কিন্তু কলাপাড়ায় অধিকাংশ ইটভাটার ক্ষেত্রে এসব নিয়ম-কানুনের বালাই নেই। এসব নিয়ম-কানুন না মানলে জেল-জরিমানাসহ বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে যে যার মতো করে ইটভাটা নির্মাণ করে পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। নীলগঞ্জের একাধিক সবজিচাষী জানান, ইটভাটার কারনে কৃঝিজমি থেকে শুরু করে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাড়িঘরের গাছপালা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। ছাই কিংবা এ্যাশে বাড়ি-ঘরে বসবাস করা যায়না। নদীরপাড়ের মনোরম পরিবেশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। একাধিক নতুন ইটভাটার মালিকের দাবি তারা আবেদন করেছেন। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করায় ইতোমধ্যে কয়েকটি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তানভীর রহমান। তার মন্তব্য, আইনের প্রয়োগ চলমান রয়েছে। বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (উপ-সচিব) মোঃ আহসান হাবিব বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের প্রচলিত আইন মেনেই ইটভাটা করতে হবে। এর ব্যত্যয় পেলে তার বিরুদ্ধে বিধিমতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
×