ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি ॥ পশ্চিমা মিত্ররাও ক্ষুব্ধ

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার এক সপ্তাহ পার হয়েছে। এ পরিকল্পনা তিনি কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এ মুহূর্তে ইসরাইলের পক্ষ থেকে কোন চাপও ছিল না বা ওয়াশিংটনেরও এমন অবস্থা তৈরি হয়নি যে, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। বিবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্ট। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের নীতি বিসর্জন দিয়েছেন। ফিলিস্তিনীদের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি তিনি ভ্রুকুটি দেখালেন। জেরুজালেম প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়ার কথা ছিল। মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র দুই রাষ্ট্র সমাধান নীতি দীর্ঘদিন সমর্থন করে এসেছে। জেরুজালেম স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ওই নীতি পরিত্যাগ করল। ট্রাম্পের এ ঘোষণার তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন জানিয়েছেন, মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে আনার কাজটি সম্ভবত আগামী বছরের মধ্যে হবে না। ট্রাম্পের নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন, তার এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে এবং একটি টেকসই চুক্তিতে পৌঁছানো সহজ হবে। কিন্তু তিনি যা বলেছেন, বাস্তবে তার উল্টোটিই ঘটতে চলেছে। ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে একটি পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন। চলতি মাসে আরও পরের দিকে পেন্স মধ্যপ্রাচ্য সফরকালে রামাল্লায় তার সঙ্গে আব্বাসের বৈঠক করার কথা ছিল। পেন্সের সফরসূচীর মধ্যে মিসরে যাওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। মিসরের শীর্ষ মুসলিম ও খ্রীস্টান নেতৃবৃন্দও পেন্সের সঙ্গে তাদের পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাত বাতিল করেছেন। ফিলিস্তিনী ইসলামপন্থী গ্রুপ হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ইন্তিফাদা বা অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছেন। মিসরের কপটিক খ্রীস্টানদের প্রধানও ট্রাম্পের জেরুজালেম স্বীকৃতির সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প যেন তার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন সে লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ফ্রান্স ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও রিসেপ তাইপ এরদোগান। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে মুসলিম দেশগুলোর রাজধানীগুলোতে। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গাজায় ইসরাইলের সামরিক হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। রবিবার একদল প্রতিবাদকারী বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত আট জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সিএনএনের উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়া তার রবিবারের অনুষ্ঠানে বলেন, পূর্ব জেরুজালেমের অংশ বিশেষ ফিলিস্তিনীদেরকে দিয়ে জেরুজালেম ইস্যুটির এখনও সমাধান সম্ভব। ট্রাম্প যে পরিকল্পনার কথা গত বুধবার ঘোষণা করেন তার মধ্যে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না তা পরিষ্কার নয়। তবে জাকারিয়া একথাও স্বীকার করেন যে সেটি করা হলেও সমস্যার পুরো সমাধান সম্ভব নয়। কারণ ট্রাম্প এরই মধ্যে যে বার্তাটি দিয়ে ফেলেছেন তা শান্তির অনুকূলে নয়। তাছাড়া চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পোপ, জর্দান ও সৌদি আরবের বাদশাহদ্বয় যখন এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন তখন সিদ্ধান্তটির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। ফিলিস্তিনীদের অব্যাহত দুর্দশা আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জন করলেও এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত তাদের সমর্থনে সেভাবে এগিয়ে আসেনি। ট্রাম্পের জেরুজালেম স্বীকৃতির পর এ বিষয়ে সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এরদোগান রবিবার ইসরাইলকে একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বললেও দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কথা এখনও বলেননি। জর্দান ও মিসরের মতো মার্কিন মিত্ররা জনমতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিক্ষোভে বাধা না দিলেও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনার কথা বলেনি। এদিকে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্যারিসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসারাইলের প্রধানমন্ত্রীকে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত না করার অনুরোধ করেছেন। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমি তাকে বলছি, অনুগ্রহ করে শান্তি আনতে আরেকটি সুযোগ দিন। ফিলিস্তিনীদের কথা ভাবুন, শান্তি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। শান্তি রয়েছে দুই দেশের দুই নেতার হাতে তাদের শান্তি স্থাপনের উদ্যোগের ওপর’। নেতানিয়াহু বলেন, শান্তির জন্য ফিলিস্তিনীদের অবশ্যই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। গত তিন বছর ধরে জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী এবং এটি কখনোই অন্য কোন দেশের রাজধানী ছিল না। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নিয়েছিল। পরে সেটি নিজের সঙ্গে জুড়ে দিলেও তা কখনও আন্তর্জাতিকভাবে দেশটির বৈধ ভূখ-ের মর্যাদা পায়নি। ওল্ড সিটি নামে পরিচিত শহরের পুরনো অংশও ইসরাইলের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। ফিলিস্তিনীরা এই শহরকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন দেশ গড়তে চায়। ট্রাম্পের ৬ ডিসেম্বরের ঘোষণা শুধু আরব দেশগুলোই নয়, বরং পশ্চিমা মিত্ররাও সমালোচনা করেছে।
×