ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে নৌবাহিনীর সংরক্ষিত জমিতে অবৈধ লবণ চাষ

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭

কক্সবাজারে নৌবাহিনীর সংরক্ষিত জমিতে অবৈধ লবণ চাষ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ প্রভাবশালী চক্র পেকুয়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণকৃত সংরক্ষিত জমিতে অবৈধভাবে লবণ চাষ করছে। স্থানীয় ওই চক্রটি ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক একর জমিকে লবণ উৎপাদন উপযোগী করে নিয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় ইউপি সদস্য জায়েদুল হক, আশু মাঝি, বাদশা মাঝি ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহ আলম, সেলিম, মনির, বেলাল, হবিব, নুর আহম্মদ, আকতার, গিয়াস উদ্দিন ও আবুল হোসেনরা সংঘবদ্ধ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ইশারায় নৌবাহিনীর অধিগ্রহণকৃত সংরক্ষিত জমিতে লবণ চাষের পায়তারা করছে। পেকুয়া মগনামার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ৪১৯.৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন স্থাপনের জন্য নির্ধাল করে সরকার। ওসব জমির ক্ষতিপূরণও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে জমির মালিকদের। সাবমেরিন স্টেশন স্থাপন কাজ শুরু না হওয়ায় ওসব জমি সাময়িক অবৈধ করেছে প্রভাবশালীরা। অধিগ্রহণ করা মোট জমির মধ্যে চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে ৩১৩ একর। এক হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন সক্ষমতা এসব জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি টড়েছে প্রভাবশালীদের। স্থানীয়রা জানান, চাষাবাদ যোগ্য এসব জমি চলতি মৌসুমে লিজের জন্য জমির মালিকসহ প্রভাবশালীদের বেশ কয়েকটি পক্ষ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক তা নাকচ করেন। একইভাবে লিজের জন্য নৌবাহিনীর কাছে আবেদন করা হলে সেখানেও লিজ আবেদন নাকচ করা হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, লিজ আবেদন নাকচ হওয়াতে অধিকাংশ আবেদনকারী জমিতে লবণ আবাদ থেকে সম্পূর্ণ সরে গেলেও সরকারী এসব সম্পত্তির ১৫০ একর জমি অবৈধভাবে লাগিয়ত দিয়েছেন মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। বর্তমানে যারা নৌবাহিনীর এসব জমিতে লবণ চাষে নেমেছেন তারা সবাই চেয়ারম্যান ওয়াসিমের লোক বলে জানা গেছে। ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, অধিগ্রহণ করা জমিতে নিদিষ্ট প্রকল্প কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত ভূমির মালিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে চাষাবাদ করতে পারবে। কিন্তু এসব আইনকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে এসব জমিতে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিমের লালিত ওসব লোকজন। স্থানীয় ইউপি সদস্য জায়েদুল হক বলেন, জমির পূর্বের মালিকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কিছু চাষী নৌবাহিনীর জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে লবণ উৎপাদনে নেমেছিল। কিন্তু নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষের বাঁধার মুখে তাঁরা সরে এসেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের এই অপকর্মের বিরুদ্ধে যাতে কেউ সোচ্চার হতে সাহস না পায়, সেজন্যে পুরো মগনামা জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিমের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র বাহিনী। তারা প্রত্যেক রাতেই ফাকা গুলিবর্ষণ করে ভীতি ছড়াচ্ছে মগনামায়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে রাখায় ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তারা। কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ও পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লবণ মাঠ ও চিংড়ি ঘের জবর দখল করতে মগনামা ব্যাপক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করেছে চেয়ারম্যান ওয়াসিম বাহিনী। তারা পুরো মগনামাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। এ ব্যাপারে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। অতিদ্রুত মগনামার এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হোক। পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, বৃহত্তর স্বার্থ না থাকলে জমিগুলো পতিত না রাখায় ভাল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার দাবি, মধ্যস্তত্বভেীদের না দিয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের চষাবাদের অনুমতি দেয়া হোক। এতে তারা উপকৃত হবে। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, আমি শুনেছি কিছুদিন আগে অধিগ্রহণকৃত এসব জমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় কিছু মানুষ লবণ চাষের চেষ্টা চালায়। এসময় তাদের সরিয়ে দেয় নৌবাহিনী। তবে এসব জমির দেখভালের দায়িত্ব নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষের। বর্তমান পরিস্থিতি সর্ম্পকে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।
×