ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরে তিন শ্রমিককে ইট ভাটা থেকে উদ্ধার

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

নাটোরে তিন শ্রমিককে  ইট ভাটা থেকে উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ মুক্তিপনের দাবীতে অপহরণকৃত তিন শ্রমিককে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আও য়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের টিবিএম ইট ভাটা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে ইট ভাটা ম্যানেজার মোঃ কালামকে আটক করা হয়। শনিবার রাতে শহরের কান্দিভিটাস্থ টিবিএম ইট ভাটা থেকে তাদের উদ্ধার ও আটক করা হয়। পরে রবিবার দুপুরে অপহৃতের চাচা কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের এবং আটককৃত ম্যানেজারকে বিকেলে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ৫ লাখ টাকা মুক্তিপনের দাবীতে তিন শ্রমিককে অপহরন করে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান তার ইট ভাটায় আটক করে রেখেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের কাছে এমন সংবাদ জানতে পেরে তিনি ইট ভাটায় অভিযান চালায়। অভিযানকালে ভাটা থেকে তিন শ্রমিককে উদ্ধার ও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ভাটার ম্যানেজারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে বরিবার দুপুরে উদ্ধারকৃতদের চাচা কফিল উদ্দিন বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর বিকেলে উদ্ধারকৃতদের আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। আদালত আটককৃত ভাটা ম্যানেজারকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। উদ্ধারকৃতরা যশোহরের কেশবপুরের বরনডালী গ্রামের পলাশ ,মনিরুল ইসলাম ও টিপু সুলতান। এ বিষয়ে নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি নাটোর জেলার একজন সনুামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার ভাটা থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তারা সেই ভাটার শ্রমিক। তাদের কেউ অপহরন করেনি বা মুক্তিপনও দাবী করেনি। ভাটার প্রায় সব শ্রমিকই অগ্রীম টাকা নিয়ে কাজ করে। প্রকৃত ঘটনা তার ইটভাটার লেবার দেওয়ার কথা বলে যশোরের বেল্লাল ৩ লাখ টাকা আগাম গ্রহণ করে। কিন্তু মাত্র ৫জন শমিক দিয়ে বাকী শ্রমিকদের অন্য একটি ইট ভাটায় লাগায়। তিনি সাংবাদিকদের কাছে লেবার সরদার বিল্লাল হোসেনকে আগাম প্রদানের চেকের ফটোকপি এবং তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে এগ্রিমেন্টের কাগজ প্রদান করেন। গত শনিবার টাকা আদায়ের জন্য তাদের অভিভাবকদের ডেকে এনে টাকা ফেরৎ চাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন একজন শ্রমিকের কাছ থেকে মুক্তিপন চাওয়ার বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি ভালো ভাবেই জানেন শ্রমিকরা কিভাবে টাকা উপার্জন করেন। তাদের কত পরিশ্রম করে টাকা আয় করতে হয়। তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমন অনেক শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও শ্রমিকদের অগ্রীম টাকা দেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট প্রমান রয়েছে তার কাছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দেওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্যর মাথায় বাঁজ পরেছে। কারণ তিনি জানেন আওয়ামীলীগের কোন নেতা-কর্মী তার সাথে নেই। এজন্য তাকে ভয় পেয়ে এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল স্বশরীরে থানায় গিয়ে মামলা নেওয়ার জন্য তদবির করেন। এছাড়া সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, যশোহরের এক আওয়ামীলীগ নেতা ও সেখানকার সংসদ সদস্য তাকে মোবাইল ফোনে জানায় নাটোরের টি বি এম ইট ভাটার মালিক তার নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন শ্রমিককে অপহরন করে ৫লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করেছে। তিনি আরো বলেন সেই ইট ভাটার মালিক আওয়ামীলীগ নেতা বিষয়টি আপনি একটু দেখবেন। পরে শফিকুল ইসলাম শিমুল ঘটনাটির সত্যতা জানতে নাটোরে পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার ও সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবু হাসনাতকে বলেন। পরে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে শনিবার রাতে শহরের কান্দিভিটাস্থ টি বি এম ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং সেই ভাটার ম্যানেজারকে আটক করে। ইট ভাটা মালিক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়। অপরাধ যেই করুক তার শাস্তি দিতেই হবে। দলের ভিতরে থেকে আগামী নির্বাচনে তার সুনাম ও অর্জন নষ্ট করতে একটি মহল এসব কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ঘটনাটি দলের সব্বোর্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে সে বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
×