ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

জামালপুরে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দেশের প্রথম সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ এখন যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। তিন মেগাওয়াট ক্ষমতার এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সুনামগঞ্জে ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি ফটোভোল্টাইক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট ৩২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দশ উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেছেন তিনি। গণভবনে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। এ কারণে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়ন করছে। সরিষাবাড়ীর সিমলা বাজারে দেশের প্রথম সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে। ‘এনগ্রিন সরিষাবাড়ী সোলার প্ল্যান্ট লিমিটেড’ নামের এই কেন্দ্রে জমি দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আর বিনিয়োগ করেছে জার্মানির আইএফই এরিকসেন এজি, বাংলাদেশের কনকর্ড প্রগতি কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ও জুপিটার এনার্জি লিমিটেড। আট একর জমিতে সাড়ে ১১ হাজার সোলার প্যানেল ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে তিন মেগাওয়াটের এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আগামী এক বছরের মধ্যে এরকম আরও পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ৩৩২ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সুনামগঞ্জের সাল্লায় ৪০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ফটোভোল্টাইক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়েছে দুই হাজার ৩২২টি সোলার প্যানেল। এই কেন্দ্রের ফলে হাওড়ের ৪০০ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “ভবিষ্যতে সোলার বিদ্যুতের উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে চলে আসবে।” চট্টগ্রামের পটিয়ায় শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস টারবাইনে ১৫০ এবং স্টিম টারবাইনে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হবে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরার ঝিলিম বাজারে চালু হওয়া নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসবে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফরিদপুর সদর উপজেলা, মাদারীপুরের রাজৈর, নওগাঁ সদর, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সদর, মাগুরার শালিখা, মেহেরপুর সদর, নেত্রকোণার মদন এবং নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব আহমদ কায়কাউস এ সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তখন ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট; গ্রাহক ছিল এক কোটি আট লাখ। সেই উৎপাদন ক্ষমতা এখন বেড়ে ১৬ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট হয়েছে। আর গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে বলে জানান আহমদ কায়কাউস। ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আট বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ পিছিয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। “বিএনপি দিয়েছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। আর আমরা দিচ্ছি ১৬ হাজার মেগাওয়াট।”এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২০০৯ সালের শুরুতে দেশে ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এখন ১১২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উন্নয়নে বিদ্যুৎ উৎপাদন একান্ত অপরিহার্য। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল; কত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।”এর অংশ হিসেবে রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু করা এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথাও শেখ হাসিনা বলেন। তিনি বলেন, “ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। আমরা চাই, মানুষ যেন উন্নত জীবন পায়। সেজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।… আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন যে সম্ভব; তা আমরা প্রমাণ করেছি।” উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতার পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। নেত্রকোণায় শিক্ষিকা আয়েশা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী হাওড় অঞ্চলে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল-মুতাইরি এবং বাংলাদেশে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ এএইচ হায়াৎ উপস্থিত ছিলেন গণভবনের এ অনুষ্ঠানে।
×