ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৫তম দিনে অনশন ভাঙ্গলেন ওয়ালিদ

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

১৫তম দিনে অনশন ভাঙ্গলেন ওয়ালিদ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আশ্বাস নিয়ে অবশেষে অনশন ভাঙ্গলেন সেই ওয়ালিদ আশরাফ। ১৫তম দিনে এসে অনশন ভাঙ্গলেও ডাকসু নির্বাচনের দাবীর প্রতি তার অবস্থানে তিনি অটল রয়েছেন। শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ডাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে কলা ও পানি খাইয়ে ওয়ালিদ আশরাফের অনশন ভাঙান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী। অনশন ভাঙার আগে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ডাকসু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ডাকসু নির্বাচন যেন হয় সেজন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। আশা রাখি সবার কাক্সিক্ষত সেই ডাকসু নির্বাচন হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার অপসংস্কৃতি থেকে আমার বের হয়ে আসতে পারব। এ ব্যাপারে সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করব আমরা। ওয়ালিদ আশরাফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আজ নানান সমস্যায় জর্জরিত। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কৃপায় হলে থাকছে। যখন-তখন দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে নেয়া হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে আজ ডাকসু নেই। ডাকসু থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নেতারা ধরনা দিতেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আফসোস এখানে শিক্ষার্থীদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন হচ্ছে। হয় না কেবল ডাকসু নির্বাচন। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। ডাকসু আমাদের অধিকার। ডাকসু নির্বাচন দিতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবী তুলে ধরার প্রতিষ্ঠান ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৭টি বছর অতিবাহিত করেছে। এর মধ্যে থেমে নেই শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারি সংশ্লিষ্ঠ নির্বাচন। তবুও ডাকসু নির্বাচনের কোন উদ্যেগ নেই। কবে হবে ডাকসু নির্বাচন? ডাকসু নির্বাচন কি আর হবে না? ২৭ বছরের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মনে এমন প্রশ্নই কাজ করেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রগতিশীল ছাত্র-সংগঠনগুলো বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন করেছে। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। বিগত ২৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার মতো কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের কোন অংশগ্রহন নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা ভেবে গত ২৫ নবেম্বর অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ। একাই ডাকসুর দাবীতে দাড়িয়ে যান। হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন ‘অনশন’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্মৃতি চিরন্তন’ নামক চত্বরে অবস্থান নেন তিনি। স্মৃতি চিরন্তনীর কড়ইগাছের নিচে ছোট্ট একটি অস্থায়ী তাঁবু গাড়েন তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর কম্বল নিয়ে মশার কামড় আর শীত উপেক্ষা করে সেখানে কাটিয়ে দেন ১৫টি দিন। সংশ্লিষ্টরা ওয়ালিদের এই সাহসিকতাকে প্রশংসা করে এটাকে অভিনব আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অনশনের প্রথম পাঁচ দিনে কিছুই খাননি ওয়ালিদ। পরের পাঁচ দিনে শুধু খাবার স্যালাইন খেয়েছেন। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবুও হাসপাতালে যেতে রাজি হননি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী তাকে জোড় করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার হাসপাতালে ভর্তি হবার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। পরে ডাক্তার তাঁর তাবুতে এসে স্যালাইন দিয়ে যান। পরামর্শ দেন, প্রতিদিন তিনটি করে স্যালাইন দিতে। এভাবে না খেয়ে খাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন ডাক্তার। ওয়ালিদের দাবী, না খেয়ে মারা যাব তবুও ডাকসু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি না নিয়ে ঘরে ফিরবো না। ওয়ালিদের সাথে সংহতি জানিয়েছেন আসন্ন রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রগতি পরিষদের পক্ষে অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা। বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোট ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছেন। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট এবং ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক ছাত্রনেতারা কর্মসূচিতে সংহতি জানায়। ডাকসু নির্বাচনের স্লোগানে নতুন করে লেখা হয়েছে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে। এছাড়া ডাকসুর দাবীতে প্রতিবাদী গান গেয়ে ডাকসুর দাবী জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, ডাকসুর দাবিতে মিছিলও করছেন তারা। ডাকসুর দাবিতে দেয়াল লিখন, গ্রাফিতিও করেছেন অনেকে। ওয়ালিদের সঙ্গে স্মৃতি চিরন্তনে অবস্থান নিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ১৯৯৮ সালে ডাকসুর কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে (৫০তম) বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ আ মাস্ট (হতেই হবে)। নির্বাচন না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে।’ সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আগামী ১৩ ডিসেম্বর উন্মুক্ত আলোচনা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন। ওইদিন ডাকসুর সাবেক সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকদেরও থাকার কথা রয়েছে।
×