ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ০২:৪৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘আমরা তোমাকে ভুলবো না’ কালো ব্যানারের শীর্ষে সাদা হরফের এই লেখা মূলমঞ্চে জ্বলজ্বল করছিল। হাস্যোজ্জল আনিসুল হকের ছবিও যেনো বলে দিচ্ছিল-আমিও তোমাদের সঙ্গে আছি, ভুলবো না কোনদিন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর আইডিইবি ভবন কাকরাইলে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। আনিসুল হক পরিষদ, এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে এই মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এফবিসিসিআিইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুল হকের সঞ্চালনায় মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রয়াত আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হাসান। বাবার স্মৃতি হাতড়িয়ে তিনি বলেন, মেয়র হলেও বাবার রুট ছিল ব্যবসায় ও পরবর্তীতে ব্যবসায়ী নেতা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেই তিনি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করেছেন। বিজিএমইএ ও এফবিবিসিআইয়ের মতো সংগঠনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, মেয়র হওয়ার পরও তিনি বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সময় দিতেন। তাদের অনুষ্ঠানে বেশি মাত্রায় অংশগ্রহণ করতেন। ছেলে হিসেবে আমি তাঁকে এ বিষয়ে নিরৎসাহিত করলে তিনি একদিন জবাব দিলেন, ওটাই আমার মূল শিকড়। পাঁচ বছরের জন্য মেয়র হয়েছি, এর মধ্যে কাজ শেষ করে এখান থেকে বিদায় নিয়ে আবার আসল জায়গায় ফিরে যাবো। বাবার এই ইচ্ছাটা পূরণ হওয়ার আগেই তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তবে তাঁর সন্তান হিসেবে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকবো। কিংবা আপনারা আমাকে সঙ্গে রাখবেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এ কে আজাদ, সংগঠনটির সাবেক প্রথম সভাপতি মোহাম্মদ আলী, আবুল কাশেম আহমেদ, মো. জসিম উদ্দিন ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি আবু আলম চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান ও সাবেক পরিচালক ও সাধারণ সদস্যরা দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালীর মানুষ হিসেবে তাঁর সঙ্গে আগে থেকেই আমার পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। তিনি যখন মেয়র নির্বাচন করেন, তাঁর প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে আমার ছেলে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। দলীয় মেয়র হলেও আনিসুল হক ছিলেন সবার মেয়র। তাঁর অকাল মৃত্যুতে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও আনিসুল হক সফল মানুষ ছিলেন। এ কে আজাদ বলেন, তত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি বিশেষ মহল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য চাপ ছিল। ওই বিপদের সময় আনিসুল হক সর্বশক্তি দিয়ে আমার পাশে ছিলেন। সফিইল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আনিস ভাই ও আমি এফবিসিসিআইয়ের পাশাপাশি বিজিএমইএতেও নেতৃত্ব দিয়েছি। ব্যবসায়ী সমাজ তাঁর কাছে চিরদিন ঋণী থাকবেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি থাকলেও নেতা হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সালমান এফ রহমান রহমানের নেতৃত্বে আমরা সবাই এক সময় তারপক্ষে কাজ করেছি। তিনি বলেন, তার অসমাপ্ত কাজগুলো যাতে দ্রুত শেষ সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, আনিসুল হককে আমরাই এফবিসিসিআইতে নিয়ে এসেছিলাম। তার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমরা সেই সময় জেলা চেম্বার উন্নয়নে প্রতিটি চেম্বারে বিল্ডিং ও এ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবন নির্মানে জমি কিনেছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা চেম্বারের ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছিল। মেয়র হিসেবে এখন তার অসমাপ্ত কাজ সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, আনিসুল হকের মৃত্যু নেই। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন। আব্দুল হক বলেন, আনিসুল হকের নেতৃত্বে আমরা এক সময় এফবিসিসিআইর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তার নেতৃত্বে আনিসুল হক পরিষদ গঠিত হয়েছিল। ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে কোন বিভক্তি নেই। আনিসুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, তিনি ছিলেন আধুনিক ঢাকা শহরের রূপকার ও ব্যবসায়ী নেতা। কাজের মাধ্যমেই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
×