ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে ধর্ষণের অভিযোগে তান্ত্রিক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ভারতে ধর্ষণের অভিযোগে তান্ত্রিক গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক ॥ তান্ত্রিকের সঙ্গে কথা বলে স্বামী এসে জানিয়েছিল, ছেলের ফাঁড়া রয়েছে। সে জন্য বাড়িতে পুজোপাঠ করাতে হবে। অন্ধবিশ্বাসে তা বিশ্বাস করে তান্ত্রিকের কথায়, শোওয়ার ঘরে দরজা-জানলা বন্ধ করে পুজো পাঠের আয়োজন করেছিলেন বধূ। পুজো দূরের কথা, সেই সুযোগ নিয়ে তান্ত্রিক সেই বধূকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। সেখানেই শেষ নয়। কিছু দিন পরে জায়ের বাড়িতেও সেই তান্ত্রিকই ওই বধূকে ফের ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। বধূর অভিযোগে সেই তান্ত্রিককে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার তো করলই, ষড়যন্ত্রের মামলায় ধরা হয়েছে বধূটির স্বামী ও বড় জা-কেও। শুক্রবার বাঁকুড়ায় জয়পুর থানা এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তান্ত্রিক অশোক কর্মকার পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের বাসুদা গ্রামের বাসিন্দা। এলাকায় তিনি ‘অশোক বাবা’ নামে পরিচিত। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তান্ত্রিক-সহ বাকিদের শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়।’’ এ দিন ধৃতদের বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী সঞ্জীব দাস জানান, পুলিশ তদন্তের কাজে ধৃতদের পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল। বিচারক ধৃতদের চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বছর আটাশের ওই বধূর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে বিয়ে হওয়ার পরে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে তিতিবিরক্ত হয়ে তিনি ২০১৪ সালের মে মাসে জয়পুর থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। বাপের বাড়ি বিষ্ণুপুরে তিনি উঠে গেলেও সেখানে বেশি দিন থাকতে পারেননি। ২০১৬ সালে ফের তিনি জয়পুরে স্বামীর কাছে ফিরে যান। কিন্তু তখনও মামলাটি চলছিল। এ বার অবশ্য শ্বশুরবাড়িতে সবাই তাঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে থাকে। সবাই শুধরে নিয়েছেন ভেবে বধূটি মামলা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তারপর যে এমন মর্মান্তিক পরিণতি অপেক্ষা করছিল, তিনি ভাবতে পারেননি। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বধূটি জানিয়েছেন, মামলা করার আক্রোশেই স্বামী আক্রোশবশত তান্ত্রিককে কাজে লাগিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করায়। তিনি জানান, তাঁর ছেলের বয়স ন’বছর। এক দিন স্বামী এসে তাঁকে জানায়, এক তান্ত্রিকের কাছে তিনি শুনেছেন, ছেলে যখন ১২ বছরের হবে, তখন সে মারা যাবে। সেই বিপদ কাটাতে বাড়িতে বন্ধ ঘরের ভিতরে পুজোর আয়োজন করতে হবে। সেই ঘরে শুধু তান্ত্রিক ও শিশুর মা থাকতে পারবে। বধূটি জানান, এর পিছনে যে ষড়যন্ত্র রয়েছে, তা তিনি গোড়ায় আঁচ করতে পারেননি। স্বামী ও বড় জায়ের কথা মতো, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শ্বশুরবাড়িতে শোবার ঘরে তিনি পুজোর আয়োজন করেন। দরজা বন্ধ করে সেখানেই অশোক তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। স্বামীকে পরে ঘটনাটি জানালে, তিনি ছেলের মুত্যুর ফাঁড়া কাটানোর অজুহাত দিয়ে সব মেনে নিতে বলে। অক্টোবর মাসে তাঁর জা ও স্বামী ডাক্তার দেখানোর জন্য তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে যান। সেখানে বড় ভাসুর বাড়িতে তাঁরা ওঠেন। তাঁর অভিযোগ, ভাসুরের অনুপস্থিতিতে বড়জা ও স্বামী অশোককে সেখানে নিয়ে আসে। তারাই অশোককে দিয়ে ফের তাঁকে ধর্ষণ করায় বলে বধূর অভিযোগ। দরজার বাইরে সেই সময় স্বামী ও বড় জা ছিল। জয়পুরে বধূটিকে ফিরিয়ে আনা হলেও শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে আর বেরোতে দেওয়া হয়নি। কোনওরকমে বৃহস্পতিবার ভোরে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরে তিনি বাপের বাড়িতে ফিরে যান। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ ভাতারে গিয়ে অশোককে গ্রেফতার করে। ধরা হয় স্বামী ও জা-কেও। এ দিন বধূকে ফোনে ধরা হলে তিনি কথা বলতে চাননি। তবে তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আমরা ওই তিন জনের কঠিন শাস্তি চাই।’’ ধৃত অশোকের জামাই বলেন, ‘‘বাড়িতে কালী মন্দিরে উনি পুজো করেন, তন্ত্র সাধনাও করেন। জ্যোতিষ চর্চাও করেন। আমরা মনে করি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×