ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খৈইয়ারছড়া ঝর্ণা

কলতানে মুখরিত ছড়া প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

কলতানে মুখরিত ছড়া প্রকৃতিপ্রেমীদের আকর্ষণ

মাকসুদ আহমদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই এলাকা হঠাৎ করেই পরিচিতির শিখরে উঠতে শুরু করেছে। এর কারণ এই এলাকায় রয়েছে অগণিত পাহাড়ী ঝর্ণা। স্থানীয়রা এসব ঝর্ণার মর্ম না বুঝলেও পর্যটকদের ঘন ঘন উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এসব ঝর্ণার মূল্য কতটুকু। স্থানীয়দের মতে, পাহাড় থেকে নেমে আসছে পানি এতে আবার দেখার কী আছে। কিন্তু মাত্র ২/৩ বছরের ব্যবধানে আর পর্যটকদের অবস্থানের কারণে এখন ধারণা ক্রমশ পাল্টাচ্ছে স্থানীয়দের। এসব ঝর্ণা পুরো সীতাকুন্ড--মীরসরাইয়ের পাহাড়ী এলাকা জুড়েই রয়েছে। মীরসরাইয়ের বড় দারোগা হাট এলাকায় রয়েছে খৈইয়ারছড়া ঝর্ণা, কমলদহ এলাকায় রয়েছে রূপসী ঝর্ণা, নাপিত্যারছড়া ঝর্ণা ছাড়াও নামে বেনামে ছোট বড় ঘোষিত অঘোষিত আরও কত ঝর্ণা। খৈইয়ারছড়া ঝর্ণা দেখতে হলে বাসে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে পৌঁছাতে হবে বড় দারোগার হাট। মহাসড়ক থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় পাড়ি দিতে হয় পাহাড়ের কোল পর্যন্ত। প্রাইভেট গাড়ি হলে সরু রাস্তা ধরে পাহাড়ের কোল পর্যন্ত তথা ছরার কাছাকাছি যেতে পারবেন। এছাড়াও যাত্রী পরিবহনে রয়েছে সিএনজিচালিত ট্যাক্সি। জনপ্রতি ১০ টাকা করে ভাড়া নেয় ট্যাক্সিতে। নামতে হবে কাঁঠাল বাগান। ছোট্ট এলাকা জুড়ে গাড়ির পার্কিং। পার্কিংয়ে প্রতিটি গাড়ির জন্য ৫০ টাকা হারে দিতে হয়। তবে তা অনেক বেশি এমন মন্তব্য গাড়িচালকদের। গাড়ি কিংবা হেঁটে পৌঁছানোর পর চোখের সামনে পড়বে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে টিনের চালা দোকান। ফ্রিজের ঠা-া পানীয়জল তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে খাবারও মেলে। সেখানে দেদার বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ী বাঁশের ছোট লাঠি। এছাড়াও প্লাস্টিকের জুতো, শর্ট প্যান্টসহ র‌্যাপলিং ও জুমারিংয়ের নানা উপকরণ ও সরঞ্জাম। এসব কেনার প্রয়োজন রয়েছে অত্যধিক। পাহাড়ের ছড়ায় থাকা ঝর্ণা দেখতে হলে পাহাড়ে উঠতে হবে লাঠির সাহায্যে। কারণ যারা আগে কখনও পাহাড়ে উঠেননি তাদের জন্য বিশেষ করে এই লাঠি খুবই প্রয়োজন। এছাড়া ঝর্ণার পানিতে গোসল করে আসা পর্যটকদের গায়ের কাপড়ের ভেজা পানিতে হেঁটে চলার পথটুকু প্রতিনিয়ত পিচ্ছিল থাকে। দোকানটি অতিক্রম করে একটু সামনে গেলেই খৈইয়ারছড়া ঝরণার প্রবাহিত কোমল পানির ছড়ার ওপর দিয়ে পারাপারে কাঠের সাঁকো লাগানো হয়েছে। সাঁকো পার হলেই আবারও পাহাড়ের ঢালু জমিতে আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঘেঁষেই যাত্রা শুরু করতে হবে। আবারো প্রায় ২/৩ কিলোমিটার উঁচু নিচুতে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষেই বয়ে চলেছে দূর পাহাড় থেকে পানির কলতানে মুখরিতছড়া। পরিচিতি মিলছে দেশীয় পর্যটকদের মাঝে। তবে তা আস্তে আস্তে সরকারী ও বেসকারী পর্যটন সুবিধা পাওয়া গেলে বিদেশীদের আকৃষ্ট করবে এমন ধারণা আগতদের। ঝর্ণার উদ্দেশ্যে কেউবা চলছে ছড়ার জলরাশি ধরে, আবার কেউবা পানি না মাড়িয়ে পাহাড়ের কোলে কোলে মাটির পথ ধরে হাঁটতে পারেন। প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে সবুজ অরণ্যের পাহাড়ী ঝর্ণার পদতলে। পাহাড়ের কোলে কোলে গেলে ছোট বড় দোকান মিলবে আর ছড়ার পানিতে পা ভিজিয়ে চললে দেখা মিলবে নুড়ি, পাহাড়ের সঙ্গে ছরা দিয়ে বহমান ঝর্ণার পানির মিতালী। ঝর্ণার হিম শীতল পানির ছড়া দিয়ে ঝর্ণার গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক মনোরম। তবে যারা পানিতে পা ভেজাতে রাজি নন তারা মাটির মেঠোপথ ধরে পাহাড়ের কোলে কোলে যাওয়াটাই উত্তম। আর যারা পানিকে ভালবাসেন তারা পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল টিপে টিপে ছড়ার পথ ধরে চলাটাই যেন আরামের। এপাশ ওপাশ করে ছাড়ার দুকূল দিয়ে যেন মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পাহাড়ী জনপদ। পাহাড়ী মাটির নুড়িগুলো আস্তে আস্তে পাথরে পরিণত হবার বিষয়টিও আঁচ করতে পারবেন। দল বেঁধে গেলেই মজাটুকু একটু অন্যরকম। হৈ হুল্লোড় করে পানিতে থপাস থপাস পথ চলার শব্দ যেন অনেকদূর থেকে ভেসে আসবে কানে। তখন নিজের কাছেও মনে হবে একই ভাবে পথ চলতে। এছাড়াও সরকারের অনুন্নয়ন খাত হিসেবে খ্যাত দীর্ঘমেয়াদী একটি বাগানও চোখে পড়বে পর্যটকদের। ২০০৮-০৯ সালের দীর্ঘমেয়াদী এই বাগানটি বড়তাকিয়া বিট হিসেবে খ্যাত। এর আয়তন প্রায় ১০ হেক্টর। কুন্ডের হাট ব্লকের বারৈয়াঢালা রেঞ্জের আওতায় পড়েছে এই বিশাল পাহাড়ী বনভূমির অবস্থান। গর্জন, ঢাকিজাম, লুম্বক, চিকরাশি, গামারী, আমলকী ও কাঁঠাল গাছসহ নানান প্রজাতির গাছ রয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায় থাকা এই বনবিট যেন সবুজ অরণ্যে ঘেরা। কিছুদূর যাওয়ার পর ঝর্ণার একটি ধাপ পাওয়া যাবে। এই ধাপটির উচ্চতা প্রায় ৩০/৪০ ফুট। এই ধাপ পার হতে হলে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পথ ধরে উপরে উঠতে হবে। তবে সাবধান! খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পথ। কেউ কেউ এই ধাপের নিচে থাকা জমানো পানিতে ডুব দিয়ে শীতল পানির পরশ নিচ্ছে। আবার কেউবা ঝর্ণার বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ পানিতে শুয়ে শুয়ে ছবি তুলছেন অনেকেই। আবারও ঝর্ণার পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কখনও ঝর্ণার জলরাশি মাড়িয়ে আবার কখনওবা পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢাল মাড়িয়ে অবশেষে পরিপূর্ণ ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবেন।
×