ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন

প্রকাশিত: ০৩:০৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর কোন সম্প্রদায়িক শক্তি দেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অনেক আগেই সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছে। এজন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। সম্প্রতি নিজ দেশে হত্যাকান্ডের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে তিনি ‘ মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি পেয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সম্প্রদায়িক ও উগ্র ধর্মান্ধতা শক্তির জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকান্ডের অভিজ্ঞতা ভুলে যায়নি দেশবাসী। তাই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন অসম্প্রদায়িক চেতনার এবং স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তিকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বিজয় মুকুট পরাবে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ। শুক্রবার রাজধানীর বনানী হাই স্কুল প্রাঙ্গণে ঢাকাবাসী গারো সম্প্রদায় আয়োজিত দিনব্যাপী ‘ ঢাকা ওয়ানগালা - ২০১৭’ উদযাপনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা ওয়ানগালার নকমা দেবারসন মানখিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জুয়েল আরেং, এমপি, গারো ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মুকুল চিছাম ও সেক্রেটারী খোকন রিছিল, দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল মানখিন প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সার্বিক তত্ত্বাবধানকারী গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাস। আওয়ামীলীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে বাংলাদেশ, বিশেষ করে স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়ন ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত। বিশ্ব ব্যাংকসহ বিশ্বের অনেক বুদ্ধিজীবি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ মধ্যম আয়ের দিকে ধাবিত। উন্নয়নের রাস্তায় রয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন কর্মসূচীর মূলধারায় গারোসহ দেশের বিভিন্ন জাতিস্বত্তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে বর্তমান সরকার। প্রতিটি জাতিস্বত্তা থেকে নেতৃত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে, দূর করা হয়েছে বৈষম্যতা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সম্প্রদায়িক ও অপশক্তি দ্বারা দেশের কোন জাতিস্বত্তার সদস্যকে আক্রান্ত হতে দেয়া যাবে না বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এদিকে শুক্রবার রাজধানীর বনানী হাই স্কুল প্রাঙ্গণে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে শুক্রবার রাজধানীতে উদযাপিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান ‘ ওয়ানগালা’। অনুষ্ঠিত উৎসবে আট সহস্র্রাধিক গারো নর-নারীর সমাগম ঘটে। শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর তারা নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে থাকে। স্কুল মাঠে গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী স্টল। ওই সব স্টলে স্থান পায় গারো সংস্কৃতি ও আবেগবিজড়িত পোশাক, খাবার, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য। খাবারের দোকানে ঘুরে ঘুরে স্বাদ নেয় নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবারের। কেউ কেউ বাসায় খাবার জন্য কিনে নেন জুমের আলু, কুমড়া, শামুক, কাঁকড়াসহ নিজেদের সংস্কৃতির বিভিন্ন পণ্য। দিনব্যাপী পূজা-অর্চনা, আলোচনা, নাচ-গানে এই উৎসবটি পালন করেছে রাজধানীতে বসবাসরত গারো সম্প্রদায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ানগালা উৎসবে আগত প্রায় সব নারীর শরীরে গারো সংস্কৃতির ছাপ। গারো পোশাক নকমান্দা ও টি শার্ট পরে স্কুল প্রাঙ্গণের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মঞ্চে চলছে গারো নাচ ও গান। মনের অজান্তেই নিজেদের সংস্কৃতির অতি পরিচিত গানের তালে তালে নাচতে কেউ কেউ। বছরে একদিন এমন পোশাক পরার এবং সকলের সঙ্গে নিজেদের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পায় তারা। শুক্রবার ঢাকায় বসবাসরত সব বয়সের কয়েক হাজার গারো আদিবাসী করে তাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব ‘ ওয়ানগালা’। ঢাকা ওয়ানগালার বিদায়ী নকমা (সমাজ প্রধান) দেবারসন মানখিন জনকণ্ঠকে জানান, ওয়ানগালা' ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। আদিবাসী গারোদের বিশ্বাস, শস্য দেবতা বা 'মিশি সালজং' পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারা বছর পরিমাণ মতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভালো শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নবান্নে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় 'মিশি সালজং'কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা। ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোন খাদ্য ভোগ করে না। 'ওয়ানগালা' আদিবাসী মান্দি বা গারোদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। দেড় এক যুগ ধরে প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় বসবাসরত গারোরা এ উৎসব আয়োজন করছে। যুগ যুগ ধরে গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছে। খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর গারোদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয়। অর্থাৎ এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিষ্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন। এ সময় সামাজিক নানা আয়োজনসহ ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানাদিও পালন করা হয় বলে জানান দেবারসন মানখিন। শুক্রবার সকালে দেবতাদের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ‘ওয়ানগালা উৎসব ’। ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’র মতো ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। দুপুরের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নিজস্ব ভাষায় গান গেয়ে শোনান গারো শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী জুম নাচ। উৎসবে উপস্থিত গারারো জানায়, ওয়ানগালা একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। ওয়ানগালা উৎসব পাহাড়ি জুমচাষকে কেন্দ্র করে উদযাপিত হয়ে থাকে। নতুন ফসল তোলার পরে নকমা (গ্রাম প্রধান) সবার সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন।
×