ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ঝরে গেল দুটি তাজা প্রাণ

প্রকাশিত: ০০:১৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ঝরে গেল দুটি তাজা প্রাণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার ॥ তারা সকলেই একই দলের কর্মী। প্রায় সমবয়সীও। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে আছেন একই গ্রুপে। মূলত দ্বন্ধ নিজ গ্রুপে নিজেদের আদিপত্য নিয়ে। সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে মনস্তাতিক এ দ্বন্ধ চলছে দীর্ঘ প্রায় ৩-৪ মাস আগে থেকে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে দ্বন্ধ বহিপ্রকাশ হচ্ছিলনা। নিজ গ্রুপের বড় ভাইদের কাছেও এবিষয়টি জানায়নি তারা। কিন্তু একপর্যায়ে জেনে যান গ্রুপের বড় ভাইরা। তারা প্রায় মাস দিন আগে বিষয়টি সমাধান করে দেন। এরপর থেকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় বিষয়টা। কিন্তু যাদের মধ্যে এ দ্বন্ধটি হয়েছিল তারা আগের মত আর একে অন্যের সাথে বেশি মিশতনা। দলের কর্মী,সহপাঠী,স্বজন ও পুলিশ সুত্রে জানা যায় নাহিদ আহমদ মাহি ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে দিবা শাখার একজন নিয়মিত ছাত্র। ৯ম শ্রেণী থেকে সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। দলের বড় ভাইদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠায় বয়সের কারনে সে ছাত্রলীগের পদ পদবীতে না থাকলেও ছিল একজন সক্রিয় কর্মী। নিজগ্রুপের কর্মী ও একই স্কুলের ৯ম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী মাহিসহ অনান্য সিনিয়রদের নাম ধরে ডাকতো। এবিষয়টি পচন্দ হয়নি গ্রুপের উঠতি কয়েকজন নেতার। এবিষয়টি পছন্দ না হওয়ায় ওদের সাথে মাহিও নালিশ দিয়েছিল গ্রুপের বড় ভাইদের কাছে। নালিশ করার করনে জুনিয়ররা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। স্কুল কর্মীদের ওই গ্রুপটি দেখভাল করত মোহাম্মদ আলী শাবাব। শাবাব ছিল মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ ও সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনির্ভাসিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রনির অনুসারী ও সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা। শাবাব জুনিয়র সিনিয়র নিয়ে ওদের মধ্যে দ্বন্ধের এঘটানাটি শুনে দু’ পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিটমাট করে দেন। এরপর থেকে মাহি সামনে এসএসসি পরীক্ষা থাকায় দলে ও গ্রুপে বেশি সময় দিতে পারত না। এটা যাদের সাথে আগে দ্বন্ধ হয়েছিল তারা ও গ্রুপের অন্যরা খুব সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সারাদিন কোচিং ও প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে গ্রুপের সক্রিয় কর্মী বেরির চরের রুবেল তাকে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠের পশ্চিম প্রান্তের নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে যায়। রুবেল ও তার সহযোগীরা ওখানে নিয়ে তাকে মারধর করে। এসময় মুঠোফোনে শাবাবকেও ওই স্থানে নেওয়া হয়। শাবাব ওখানে পৌঁছালে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রুবেলসহ অন্যরা তাদের দুজনকেই স্টেপিং করে। পরে আহত অবস্থায় তাদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেয়ার পর কর্মরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত দুই ছাত্রলীগ কর্মী সাহবাব ও মাহির মরদেহ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ময়না তদন্ত কাজ সম্পন্ন শেষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় পরিবারের কাছে হস্তাস্থর করা হয়। বড়িতে লাশ নিয়ে গেলে পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহত নাহিদ আহমদ মাহির নামাজে জানাযা বাদ জুম্মা সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দূর্লভপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত মোহাম্মদ আলী সাহবাবের নামাজে জানাযা মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। একই স্থানে মাহির ২য় নামাজে জানাযাও অনুষ্ঠিত হবে। সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন ও জেলা প্রশাসক নিহত দুই ছাত্রলীগ কর্মীর লাশ দেখতে হাসপাতালের মর্গে যান। মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুহেল আহমদ জানান আজ ভোর রাতে পুলিশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে রুবেল নামে একজনকে রাজনগর উপজেলা থেকে প্রেফতার করেছে।
×