ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বেটজেম্যান পুরস্কারজয়ী আমিনেহ আবু কেরেচ

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বেটজেম্যান পুরস্কারজয়ী আমিনেহ আবু কেরেচ

ইংল্যান্ডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাব্য পুরস্কার ‘বেটজেম্যান পুরস্কার।’ দশ বছর বয়স থেকে তেরো বছর বয়স্ক কিশোর-কিশোরী কবি এ পুরস্কারের আওতাভুক্ত। ইংরেজ কবি বেটজেম্যানের স্মরণে ২০০৬ সালে প্রবর্তন করা হয় এই সম্মানজনক পুরস্কারটি। ২০১৭ সালের এ কিশোর বয়সী পুরস্কার লাভ করেন সিরিয়ান শরণার্থী কিশোরী আমিনেহ আবু কেরেচ। দুই হাজারেরও অধিক প্রতিযোগীকে টপকিয়ে এই সম্মান বহন করে এনে শরণার্থী একটি পরিবারকে আনন্দে ভাসিয়ে দেন আমিনেহ। আরব বসন্তের ফলে ছড়িয়ে পড়া গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এখন প্রায় বিধ্বস্ত। আমিনের বয়স যখন আট বছর ছিল তখন সে তার পিতা-মাতা তাম্মাম ও ব্যাসমেহ এর সঙ্গে ২০১১ সালে মিসরে চলে আসেন। মিসরে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তাদের অনেক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমিনেহ দুজন ভাই-বোন আছেন। বড়বোন ফতুন যার বয়স এখন চৌদ্দ বছর ও আমিনার ছোট্টভাই মোহাম্মদ যার বয়স এখন এগারো বছর। এই পাঁচজনকে নিয়ে তাম্মাম ও ব্যাসমেহ দম্পতি নিজ দেশ মাতৃকার মায়া ত্যাগ করেছিলেন। আমিনেহ‘র পরিবার দামেস্ক’র দারাইয়্যা নামক একটি স্থানে বাস করতেন যেটি আসাদ সরকারবিরোধীর কেন্দ্র নামে খ্যাত ছিল। তাই এই পার্শ্বিক অবস্থাও তাদের তাড়িয়ে দিতে উস্কানি দিচ্ছিল স্বৈর শাষক আসাদকে। দারাইয়্যাতে একটি ফ্যাব্রিকের দারুণ ব্যবসা ছিল আমিনেহদের। সেটি আজ নিশ্চিহ্ন। মিসর থেকে আমিনেহরা গত গ্রীষ্মে চলে আসেন ইংল্যান্ডে। ইংলান্ডের অক্সফোর্ডে ত্রিশটি ভাষা নিয়ে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানে আমিনেহ ও তার বোন ফতুন ইরাকী কবি আদনান আল সায়েকের কাছে কবিতার কলা শিখছেন। নিজ মাতৃভূমি সিরিয়ার কথা মনে পড়তেই আমিনেহ মিশর থাকাবস্থায় কবিতা লিখা শুরু করেন। সিরিয়ার স্মৃতিকে কবিতায় ভাস্বর করে রাখতে চান আমিনেহ। ‘বেটজেম্যান পুরস্কার কমিটি’সহ সংবাদ মাধ্যমগুলো এই কিশোরী কবির কবিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। গভীর অনুভূতি সম্পন্ন কবিতা, বিশ্ব বিবেককে নাড়ানো কবিতা, স্বৈরাচারদের ধিক্কার জানানোর কবিতা, কিশোরের খাতায় অংকিত শান্তির শ্বেত কবুতর ইত্যাদি পুরোধা পেয়েছিল আমিনেহ’র কবিতা। ‘খধসবহঃ ভড়ৎ ঝুৎরধ’ বা সিরিয়ার জন্য শোকগাথা কবিতাটিতে আমিনেহ তার দেশকে অংকন করতে চেয়েছেন। আমিনেহ কেঁদেছেন এ কবিতা লিখতে। আমিনেহ চান না আর একটি সৈন্যও তার মুখাবয়বরূপী সিরিয়ার জমিনে তাণ্ডব চালাক। এই কবিতাটির প্রথমাংশ তিনি ইংরেজীতে লিখেছিলেন। বাকি অংশ আরবিতে লিখেছিলেন। আরবি অংশটুকুর ইংলিশ অনুবাদকরণে তিনি তার বড় বোন ফতুন এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়েছিলেন। আমিনেহ আবু কেরেচ এর পুরস্কার লাভকরা সেই সাড়া জাগানো কবিতাটির অনুবাদ আমি ‘সিরিয়ার জন্য শোকগাথা’ শিরোনামে বাংলায় রূপান্তর করেছি। সেই সাড়া জাগানো কবিতাটি হচ্ছে, সিরিয়ার শ্বেত কবুতরগুলো আমার মাথার উপরে বিলাপ করছে তাদের ডাকগুলো আমার চোখে কান্না করছে। আমি একটি দেশকে আঁকার চেষ্টা করছি যেটি আমার কবিতার মতোই হবে আর আমি যখন চিন্তা করব তখন আমার চিন্তাকে ভঙ্গ করবে না যেখানে সৈন্যরা আমার মুখাবয়বের উপর দিয়ে হাঁটবে না। আমি এমন একটি দেশ আঁকার চেষ্টা করছি আমি যদি একজন কবি হই সেই দেশটি আমার যোগ্য হবে আর অনুমতি দিবে যদি আমি কাঁন্নায় ফেটে পড়ি। আমি একটি নগর আঁকার চেষ্টা করছি ভালোবাসার, শান্তির, উৎকর্ষের সম্মিলনের। অরাজকতা, যুদ্ধ, ধ্বংসাবশেষ ও দুঃখমুক্ত। পরিশেষে আমিনেহর কবিতার চাওয়া থেকে বর্তমান বিশ্বমোড়লসহ সকল শাষকদের কাছে চাওয়া হচ্ছে, আর কোন নগরী ধ্বংস না হোক, উদ্বাস্তু না হোক কোন পরিবার। মানবতার জয় হোক! সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
×