ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলী যাকের

মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ!

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ণ!

পূর্বলেখ : ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর, যশোর রোডের ধারে রাতে একটা দোকানে বসে আমার রাজনৈতিক ধারাভাষ্য রেকর্ড করলাম। ইংরেজী ভাষায় সারা বিশ্বকে জানালাম আমরা স্বাধীন। তারপর সেই টেপটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে ওই ধারাভাষ্য প্রচারিত হলো। এরপর যশোর হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের উচ্ছ্বাস এবং পরশ নিয়ে সারা দেহ-মনে, ফিরে এলাম কলকাতায়। তখনও শরণার্থীদের ঘরমুখী যাত্রা শুরু হয়নি। সাধারণ মানুষ তখনও বুঝে উঠতে পারেনি কী করবে? ভারত কিংবা বাংলাদেশ সরকার তখনও কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি এই ব্যাপারে। বাংলাদেশের সর্বত্র পরিস্থিতি তখনও সম্পূর্ণ স্থিতাবস্থায় পৌঁছেনি। কিছু কিছু স্থানে, যেমন ঢাকার মিরপুর, রংপুরের সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, লালমনিরহাট, খুলনার খালিশপুর- এসব এলাকায়, যেখানে অবাঙালীদের সংখ্যাধিক্য ছিল সেখানে, পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের পরও অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বাংলাদেশের অবাঙালী অধ্যুষিত এসব এলাকাতে যারা পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বাঙালীদের হত্যা কিংবা নির্যাতন করেছিল, তারা তখনও মুক্ত বাংলাদেশের অনিবার্যতাকে কিছুতেই গ্রহণ করতে পারছিল না। সেই কারণে বাংলাদেশের সর্বত্র নিরাপদে যাওয়া-আসা করায় এক ধরনের সমস্যা ছিল বৈকি। স্মর্তব্য যে, আমাদের বিজয়ের কিছু দিনের মধ্যে, জানুয়ারির ৩০ তারিখে, জহির রায়হান ঢাকার মিরপুরে পুলিশ পাহারায় প্রবেশ করেছিলেন তার বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সার এর খোঁজে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারও ছিলেন। কিন্তু নানা রকম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কিছু বাংলাদেশ বিরোধী অবাঙালী এবং তাদের সঙ্গে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের গুলিতে এরা সবাই শহীদ হন। বস্তুতপক্ষে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীরা নিজেদের বাসভূমির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে আরও অনেক পরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশ সরকারের গুছিয়ে বসে কার্যক্রম শুরু করার পর। মনে পড়ে, ডিসেম্বরের ২২ কী ২৩ তারিখে আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য ইংরেজীতে একটি রাজনৈতিক ধারাভাষ্য লিখি, যার শিরোনাম ছিল,’ তুমি আজ কোথায় পিতা?’ অত্যন্ত ভাবাবেগে আক্রান্ত এই ধারাভাষ্যে আমি লিখেছিলাম যে,’ যখন বাংলার আকাশ-বাতাস, বনভূমি এবং জল বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা, তখনো কোন অদৃশ্য শঙ্কায় আমাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। কেননা তুমি এখনও আমাদের মাঝে নেই, পিতা!’ ক্রমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কাজ ক্ষীণ হতে হতে বন্ধ হয়ে গেল। ততদিনে বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত বেতারকেন্দ্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার কাজ শেষ। আমি কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। কিন্তু আমার যাবার উপায় নেই। কেননা আমার ওপরে অর্পিত দায়িত্ব তখনও শেষ হয়নি। আমার কলকাতায় থাকতে ভাল লাগছিল না আর। ঢাকা শহর দেখার জন্য মন আকুল হয়ে উঠেছিল। দেখতে দেখতে জানুয়ারি মাস চলে এলো। আমার বিদায়ের দিনও ঘনিয়ে এলো। ৮ জানুয়ারি আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলাম যথাযথ কর্তৃপক্ষকে। এবার বাড়ি ফেরার পালা। আমরা বেশ কয়েকজন সহকর্মী মিলে একটি বাস ভাড়া করলাম, যা আমাদের পদ্মার পাড়ে গোয়ালন্দে পৌঁছে দেবে। তারপর সেখান থেকে আমরা নৌকা ভাড়া করে নদীর ওপারে গিয়ে আরিচা থেকে যেভাবে পারি, ঢাকায় পৌঁছাব। আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবিরে অংশগ্রহণকারী বেশকিছু নানা বয়সী নারীও ছিলেন। ৯ জানুয়ারি আমরা ঢাকার উদ্দেশে কলকাতা ত্যাগ করলাম। যাত্রা শুরু করেছি ভোর ৬টায়। কলকাতা থেকে বনগাঁ হয়ে যশোর রোড ধরে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা হয়ে দর্শনা পৌঁছতে আমাদের সারাদিন পেরিয়ে গেল। গোয়ালন্দে যখন পৌঁছলাম তখন সন্ধ্যা হয় হয়। গোয়ালন্দে নদীর অদূরেই একটি ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ডাক বাংলোয় রাতের মতো আশ্রয় নিলাম। যুদ্ধের সময় সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এখন পরিত্যক্ত। আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম, তখনও জায়গাটি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই ছিল। পথে আসতে আসতে আমাদের সঙ্গীরা ঐকতানে একের পর এক গান করছিল। নানা রকম গান। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে আরম্ভ করে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, নজরুলের, ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী’ হয়ে হেমন্তের গাওয়া ‘মা গো ভাবনা কেন’, এই সকল গান। এ জীবনে কখনও বাংলাদেশের এত ভেতরে আসতে পারব কল্পনাও করিনি। জীবনে এই প্রথম দেখছি, এমন মানসিকতা নিয়ে সকল দৃশ্য চেখে চেখে দেখছিলাম। কী আনন্দ, কী আনন্দ! আমার দেশের ক্ষেত খামার, বৃক্ষরাজি, ছোট ছোট গ্রামীণ ঘরবাড়ি, বাচ্চাদের খেলে বেড়ানোর কলকাকলী, পুকুরঘাটে বঙ্গ ললনার কলসি কাঁখে পানি নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, সবকিছুই নতুন বলে মনে হচ্ছিল। কিছু যখন ফিরে পাওয়ার আশা থাকে না, তখন অকস্মাত তা পেলে মানুষ সত্যিই আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। আমারও হয়েছিল সেই দশা। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম, মনে হচ্ছিল দীর্ঘদিন পরে এক ভীত, শঙ্কিত মানবগোষ্ঠী যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে আবার। বাধা-বেদনার অর্গল ভেঙ্গে গেছে। তাই অবলীলায় তারা হাসছে, খেলছে, কাজ করে চলেছে। পথে আরও লক্ষ্য করছিলাম যে, বিভিন্ন গ্রামে সব মানুষ হাত লাগিয়েছে ভেঙ্গে যাওয়া পায়ে চলার পথকে পুনর্নির্মাণ করতে। কোথাও বিধ্বস্ত সাঁকো নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছে। দ্বিধাহীনভাবে মাথায় মাটি বয়ে নিয়ে আসছে কিংবা বাঁশ আর দড়ি নিয়ে কাজে ব্যস্ত। আমরা গান গাইতে গাইতে বাসের জানালা দিয়ে তাদের প্রতি হাত নাড়লে তারাও সহাস্যে হাত নেড়ে আমাদের সম্ভাষণ জানাচ্ছে। বার বারই মনে হচ্ছে কী সহজে নিশ্বাস নিতে পারছি এই বাংলার বাতাসে। যে বাতাস এখন অবাধে বিচরণ করছে সারাদেশে। পারছি হাসতে, গাইতে। ভাবতে ভাবতেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথাও মনে পড়ে যাচ্ছে। দেশ ছেড়ে যখন বেরিয়েছিলাম, তখনকার মানসিক অবস্থার সঙ্গে আজকের মানসিক অবস্থার কোন মিল নেই কোথাও। তখন ভেবেছিলাম কোনদিন যদি ফেরা না হয়, সেই করুণ পরিণতির কথা। আর এখন ভাবছি সবকিছু খোয়া গেলেও নিজের দেশের মাটিতে ফিরে আসছি আবার, সেই আনন্দ উপলব্ধির কথা। আর কিছু না হোক হাত দুটো তো আছে আমাদের ? এই দিয়েই গড়ব আবার দেশ নিজেদের মতো করে। আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হবে আমাদের মুক্তি। আমাদের স্বাধীনতা। গোয়ালন্দে সন্ধ্যাবেলায় সবাই ক্লান্ত-অবসন্ন, কিন্তু গান চলেছে অবিরাম। কোরাসে গাইছে সবাই, ’ ... ওমা দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দিপ জ্বালিস ঘরে/ তখন খেলাধুলা সকল ফেলে তোমার কোলে ছুটে আসি...’। শুনতে শুনতে নিজের অজান্তেই ডাক বাংলো ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম নদীর ধারে। এই সেই পদ্মা, আমার বাল্যকালে দেখা পদ্মা। বাবা মায়ের সঙ্গে স্টিমারে করে কতবার এই নদীর বুক চিরে যাওয়া-আসা করেছি তার হিসাব নেই। পদ্মার জলের ধারে দাঁড়িয়ে বাতাসে মন মাতানো সোঁদা গন্ধে চোখ ভিজে আসে আমার আবার। আমি আমার শরীর-মন দিয়ে যতটুকু পারছি নিংড়ে নিচ্ছি সদ্য স্বাধীন দেশে আমার প্রথম সন্ধ্যার এই আদরকে। যেন মা হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন সারা শরীরে। যেন অস্ফুটে বলছেন, ‘বাছা ঘরে আয়...।’ তখন খেলাধুলা সকল ফেলে তোমার কোলে ছুটে আসি...। অন্ধকার হয়ে এলো। ডাক বাংলোয় ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও যেতে তো হবেই। কেননা পরদিন অতি প্রত্যুষে নৌকার খোঁজে বের হতে হবে যা দিয়ে আমরা পার হব এই বিশাল নদী। অতএব, আস্তে আস্তে আবার ডাক বাংলোর পথে ফিরে যেতে হলো। পথের মাঝে হঠাৎ পেছন থেকে কিশোর কণ্ঠে কে যেন ডাকল আমায়। ফিরে তাকালাম। ছেলেটি আমার কাছে এসে বলল, ‘স্যার রাতে আপনারা খাবেন না?’ ছেলেটি হাত তুলে ইঙ্গিত করল উত্তর দিকে। দেখলাম একটা পুড়ে যাওয়া বাজারের মাঝখানে কয়েকটি চট দিয়ে তৈরি ঘরের মতো কিছু দেখা যায়। ছেলেটির কাছে জানলাম যে, ওই বাজারেই এদের সবার হোটেল ছিল এক সময়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সব পুড়িয়ে দেয়। গত দু’দিন ধরে ওরা এসে আবার জড়ো হয়েছে। সেখানেই তিনটি দোকানে রান্না চড়ানো হয়েছে। আমি দ্রুত ডাক বাংলোতে গিয়ে আমার সঙ্গীদের খবর দিলাম। সবাই মিলে হই চই করে চললাম সেই চট বাঁধানো হোটেলে। গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। এরই মধ্যে মাটিতে গর্ত করে কাঠের চুলায় ওরা রান্না করেছে ভাত। রান্না হচ্ছে ইলিশ মাছের ঝোল। মাছগুলো আজই ধরা হয়েছে পদ্মা থেকে। মনে হলো কত যুগ পরে যেন ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাব আমরা। সেই ইলিশের গন্ধে পেটের খিদে বেড়ে গেল কয়েক গুণ। সেই রাতে আর ঘুমাইনি আমি। অর্ধেক রাত পর্যন্ত বসেছিলাম পদ্মার পাড়ে। বসে বসে ঢেউ গুনেছি। নানা চিন্তা মনে ভিড় করে এসেছে। অবসাদে শরীর ভেঙ্গে আসছিল। এই অবসাদ কাজ শেষের অবসাদ। যতদিন কাজের দায়িত্ব ছিল মাথার ওপরে, স্বপ্ন ছিল যুদ্ধ জেতার, ততদিন শরীর ছিল টানটান। সেই কাজ শেষ, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। অতএব উত্তেজনা আজ প্রশমিত। শরীর ছেড়ে দিয়েছে তাই। চিন্তা দেখা দিয়েছে মনে। জীবনের একটা অধ্যায়তো শেষ হলো। এখন আবার নতুন পথ চলা শুরু করতে হবে। কী করব ফিরে গিয়ে? জানি না যে চাকরি ছেড়ে এসেছি, সেটা আছে কি না। ওই প্রতিষ্ঠানটিই, ইস্ট এশিয়াটিক, আছে কি না, কে বলতে পারে? এক সময় সকল চিন্তা কে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিই। কী হবে অত ভেবে? দেশ স্বাধীন হয়েছে। একটা জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কী চাওয়ার থাকতে পারে একজন মানুষের? গভীর রাতে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসি ডাক বাংলোয়। বারান্দায় একটা কাঠের খুঁটির ওপর হেলান দিয়ে রেলিংয়ের ওপরে বসে আছি। ভেতরে আমার সঙ্গীরা সব নিদ্রামগ্ন। মনে মনে উচ্চারণ করি জয় বাংলা, বাংলার জয়। আস্তে আস্তে আকাশ ফিকে হয়ে আসে। গ্রামবাসীরা নানা রকম তৈজসপত্র নিয়ে, যার বেশিরভাগই আনাজপাতি, বাংলোর সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ফেরি ঘাটের দিকে। আমরাও এখান থেকে নৌকা ধরব। কেননা, ফেরি বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ওগুলো ব্যবহার করছিল গত কয়েকমাস ধরে পাকিস্তানি বাহিনী। ফলে ওগুলোকে ডুবিয়ে দিয়েছে প্রথমে আমাদের নৌ-কমান্ডোরা এবং পরে ভারতীয় বিমান বাহিনী, গোলা বর্ষণ করে। ঠিক একইভাবে পাকিস্তানিদের বহু জাহাজও আমাদের দুর্ধর্ষ নৌ-কমান্ডোরা উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরে। আমি একজন পথচারীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম নদী পেরুবার জন্য একটা বড় নৌকা দরকার, পাওয়া যাবে কিনা। জবাবে সে বলল, এপারে নৌকার অভাব আছে তবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই প্যাসেঞ্জার নিয়ে আরিচা থেকে নৌকা আসতে শুরু করবে গোয়ালন্দে। তার মধ্যে যে কোন একটা আমরা ভাড়া নিতে পারি। ইতোমধ্যে সঙ্গীরা সব উঠে পড়েছে। আমাদের সঙ্গের ব্যাগগুলোকে সাথে নিয়ে আমরা একবারেই ডাকবাংলো থেকে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য, চটের পর্দায় ঘেরা সেই হোটেলে নাশতা করা এবং তারপর নৌকার খোঁজে বেরিয়ে পড়া। গত রাতের সেই হোটেলেই ভেতরে-বাইরে আমরা জায়গা করে নিলাম। তখন গরম গরম পরোটা ভাজা হচ্ছে। পরোটা দিয়ে আলু ভাজা অমৃতের মতো লাগলো। স্বাধীন বাংলাদেশে আসার পর থেকে আমাদের মানসিক অবস্থা এমন যে, যা দেখছি, যা শুনছি, যা খাচ্ছি, সবই অমৃত সমান মনে হচ্ছে। সকাল ৮টার দিকে একটা নৌকার সাথে রফা হলো। তারা আমাদের সবাইকে পৌঁছে দেবে আরিচা ঘাটে। আমাদের মধ্যে দুজন মুক্তিযোদ্ধা তাদের হাতিয়ার, সেই স্টার্লিংস্টেন, সাথে করে নিয়ে এসেছিল কিন্তু তাতে কোন গুলি ছিল না। ওই স্টেনগানগুলো গ্রামের সাধারণ মানুষ একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। যেহেতু হাতিয়ারগুলোতে ম্যাগাজিন লাগানো ছিল না, সেহেতু আমরা ওদের হাতে দিই। ওরা অস্ত্রগুলোর ওপরে হাত বুলায় স্নেহে। যেন ওদের হাতের ভাষায় বুঝিয়ে দিতে চায় যে এই অস্ত্রগুলোর জন্যই ওরা আজ স্বাধীন। চলবে...
×