ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমকে রাজধানী স্বীকৃতির প্রতিবাদে বিশ্বে সমালোচনার ঝড়

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

জেরুজালেমকে রাজধানী স্বীকৃতির প্রতিবাদে বিশ্বে সমালোচনার ঝড়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ। এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে ও বিভিন্ন মার্কিন বন্ধুরাষ্ট্রসহ বিশ্বনেতৃত্ব অস্থিরতা কবলিত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন প্রশাসনের অন্যতম মিত্র সৌদি আরব ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে অন্যায্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেছে। ফিলিস্তিনী ভূখ-ে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ চলছে। হামাস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থের ক্ষেত্রে জাহান্নামের দরজা খুলে দেবে। তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলকেই, আগুনের কু-লিতে নিক্ষেপ করবে। বুধবার ইস্তানবুলের মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। হাজার হাজার জনতা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ট্রাম্প বিরোধী স্লোগান দেয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, এটা খুবই গভীর উদ্বেগের সময়। কারণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ছাড়া এর আর কোন বিকল্প নেই। শুক্রবার এ নিয়ে আলোচনায় বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশের আটটি দেশ জরুরী অধিবেশন ডেকেছে। এসব দেশের মধ্যে ব্রিটেন ও ফ্রান্স রয়েছে। শনিবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে আরব লীগ। অবশ্য ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটা একটি ঐতিহাসিক দিন। খবর এএফপি, বিবিসি ও এএফপির। অপরদিকে ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, এই পদক্ষেপ নেয়ায় শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বদানকারী ভূমিকার জলাঞ্জলি দিয়েছে। ইসমাইল রাদওয়ান নামের হামাসের একজন মুখপাত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এ ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নরকের দরজা খুলে গেল। তারা আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজ নিজ দেশ থেকে মার্কিন দূতকে বহিষ্কারের আহ্বান জানায়। জর্দান বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমের ওপর ইসরাইলী দখলদারিত্বকে দৃঢ় করায় ট্রাম্পের পদক্ষেপ আইনী বৈধতা হারিয়েছে। সৌদি আরব জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যায়িত করে এটি ফিলিস্তিনী জনগণের ঐতিহাসিক এবং স্থায়ী অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে বলে অভিহিত করেছে। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের দেয়া প্রস্তাবের লঙ্ঘন অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা করেছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূর্খতাবশত এহেন সিদ্ধান্তের ফলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ভুল বলে মন্তব্য করেছে তুরস্ক। এটি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ ট্রাম্পের পদক্ষেপকে উড়িয়ে দিয়ে এতে ফিলিস্তিনীদের অধিকারকে দমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, জেরুজালেম কোন সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রের ইচ্ছার ফসল নয়। এর ইতিহাস, সংস্কৃতি, বাস্তবতা বিচার করলে দেখা যাবে যতদিন না জেরুজালেম প্যালেস্টাইনের রাজধানী হবে ততদিন আরবের চেতনার মধ্যেই এটি জাগ্রত থাকবে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের দূতবাস জেরুজালেমকে সরিয়ে নেয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছে। ট্রাম্পের একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ফ্রান্স, পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখারও আবেদন জানিয়েছে। ব্রিটেন বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শান্তি উদ্যোগের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখবে না এবং জেরুজালেমে ইসরাইল ও ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব থাকা উচিত। জার্মানি বলেছে, জেরুজালেমের মর্যাদা শুধু দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হতে পারে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এসব প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করে এর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রথমদিন থেকেই এটি আমাদের লক্ষ্য ছিল। এটি শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নেতানিয়াহু অবশ্য আশ্বস্ত করে বলেছেন, মুসলিম, ইহুদী ও খ্রীস্টান এই তিন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর পুণ্যভূমি হিসেবে জেরুজালেমের যে অবস্থান, ট্রাম্পের এই ঘোষণায় এর কোন পরিবর্তন হবে না। উল্লেখ্য জেরুজালেম শহর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইল-ফিলিস্তিনীদের মধ্যে বিরোধ চলছে। শুধু এই শহরটি নিয়ে দশকের পর দশক ধরে থেকে থেকেই সহিংসতা হচ্ছে ও রক্তপাত হয়েছে। ফলে কোন পক্ষকেই স্বীকৃতি না দেয়ার মার্কিন নীতি চলে আসছে বহুদিন ধরে। তবে ট্রাম্পের বুধবারের এই সিদ্ধান্ত কয়েক দশকের মার্কিন নীতিকে বদলে দিয়েছে।
×