স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। এ জন্য ৪র্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে এখন কথা বলার সময় এসেছে। কারণ দ্রুত বদলে যাওয়া প্রযুক্তি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনছে। যার প্রভাব দেখা যাবে সরকার, ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের জীবনেও। আগামীর বাংলাদেশ পৃথিবীর এসব উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির মহাসম্মেলন ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’ এর দ্বিতীয় দিনে মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্সে এসব কথা বলেন। এ সময় পাঁচ দেশের মন্ত্রীসহ সাত দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকার বেসরকারী খাতকে সঙ্গে নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কাজ করছে। জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির সুফলও ভোগ করছে। ফলে বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডেই আপনারা দেখেছেন ড্রোন, বিশ্বের উন্নত রোবট সোফিয়াকে। ভবিষ্যতে মোবাইল সুপারকম্পিউটিং, চালকহীন গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট, নিউরো প্রযুক্তির ব্রেন, জেনেটিক এডিটিং দেখতে পাবে। প্রযুক্তির এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য আমাদেরকে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে হবে।
গ্লোবাল কনসাল্টিং গ্রুপ-এর জারফ মুনিরের সঞ্চালনায় এই কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ সময় তিনি বলেন, অর্থনীতির বিকাশ ও শিল্পায়নও দ্রুত ঘটছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই ন্যানোম্যাটেরিয়ালের বাণিজ্যিক ব্যবহার দেখা যাবে। এসব ন্যানোম্যাটেরিয়াল স্টিলের চেয়েও ২০০ গুণ শক্ত, কিন্তু চুলের চেয়েও পাতলা। থ্রিডি প্রিন্টেড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে। ১০ শতাংশের বেশি গাড়ি হবে চালকহীন।
নেটওয়ার্ক এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও প্রকৌশলীদের জন্য আগামী ভবিষ্যত হবে এবং এজন্য নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে জয় বলেন, বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতে প্রাথমিক স্তরেও আইসিটি শিক্ষা দেয়া হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে আইটি শিক্ষা প্রাইমারি লেভেল থেকে শুরু করার। তিনি বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর চেয়ে প্রাথমিকে আইটি শিক্ষা শুরু করা কঠিন হবে না এ লেভেলে শুধু লেখা শেখানো বা তাদের হোমওয়ার্ক ট্যাবের মাধ্যমে করা ইত্যাদি করা যেতে পারে। এখানে আমাদের রিসোর্স একটি চ্যালেঞ্জ, স্বল্পমূল্যে ট্যাবলেট ও কম্পিউটার দেশে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যে প্রাথমিক থেকে এ শিক্ষা শুরু করা যাবে যোগ করেন তিনি।
২০০৮ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হওয়ার পর বর্তমানে দেশের ৪০ শতাংশ সরকারী সেবা ডিজিটাইজড হয়েছে জানিয়ে জয় বলেন, ‘আগামীতে বেশিরভাগ সেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হবে। ভবিষ্যতে ৮০ শতাংশ সরকারী সেবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা হবে।’
এ সময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ‘গত ৯ বছরে বাংলাদেশ দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা দ্রুত এগিয়েছি। ভবিষতের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছি। তরুণদের উদ্যোক্তা হতে পথ দেখাচ্ছি। ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি।’
কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা ডায়োডোনি কালোম্বো কোলি বাডিবাং, কম্বোডিয়ার ডাক ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কান চানমেটা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কনফারেন্সে ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী দিনা নাথ ডঙ্গায়েল, মালদ্বীপের সশস্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপমন্ত্রী থরিক আলী লুথুফি, ফিলিপাইনের আইসিটি অধিদফতরের পরিচালক নেস্টর এস বোঙ্গাটা, সৌদি আরবের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ও মন্ত্রীর উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাহাদ আলী প্রমুখ অংশ নেন।
পরবর্তী সেশনে আয়োজন করা হয় ‘স্মার্ট ফার্মিং, স্মার্ট ফিউচার’ শীর্ষক সেমিনার। এ সময় আলোচকরা স্মার্ট ফোনভিত্তিক বিভিন্ন এ্যাপস ডেভেলপ করা হয়েছে সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষি সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখা সম্ভব সে বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সেমিনারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. সিকান্দার আলী, ডিরেক্টরিয়েট অব ই-এগ্রিকালচার ই-এ্যাম্পাওয়ারমেন্টের প্রতিনিধি হাসিব আহসান, গ্রামীণ ইনটেলের রেহানা আক্তার, বারির ডিজি ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আইসিটি ইন ডেভেলপমেন্টের ডেপুটি ম্যানেজার জুবায়ের রহমান বলেন, সরকার ই-কৃষক নামের একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। এখান থেকে কৃষকরা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সহায়তা পাবেন। যা কৃষি সম্প্রসারণে কাজ করবে। পাশাপাশি এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে একজন কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। সেমিনারে বক্তারা বলেন, কৃষকদের তথ্যপ্রযুক্তিতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারা স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস ব্যবহার করে স্মার্ট ফার্মিংয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। ফলে কৃষির যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি দেশও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে এখন বেশ কিছু এ্যাপস ডেভেলপ করা হয়েছে। এসব এ্যাপস থেকে কৃষি তথ্য মিলবে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ কৃষির উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। এ ছাড়াও মোবাইল ফোন অপারেটররা আলাদা আলাদাভাবে বিনামূল্যে কৃষকদের তথ্য সরবরাহ করছে।
প্রথম দিনে নারী রোবট সোফিয়ার সঙ্গে কথোপকথনসহ আরও কয়েকটি আকর্ষণীয় আয়োজন শেষে দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে মোট ১২টি সেশন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেশনগুলো হলো- হাইস্কুল প্রোগ্রামার কনফারেন্স, মিট নাফিস বিন জাফর, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, অপরচুনিটি ফর ইনভেস্টরস এ্যান্ড স্টার্টআপস, সাইবার সিকিউরিটি রিস্কস, সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ইথিক্যাল হ্যাকিং, এমপ্লয়মেন্ট অব পারসনস নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅএ্যাবিলিটিজ ইন দ্য আইটি ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি।
আয়োজকরা জানান, এবারের মেলা বৃহৎ পরিসরে ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ৪ দিনব্যাপী এই আয়োজনে গুগল-নুয়ান্সসহ খ্যাতিমান তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক বক্তা মোট ২৪ এর অধিক সেমিনারে অংশ নেবে।