ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোন প্রয়োজন নেই;###; আগামী নির্বাচনে দলের বিজয়ে আশাবাদ

জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ॥ আগাম নির্বাচন নয়

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ॥ আগাম নির্বাচন নয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আগাম নির্বাচন এবং বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার এমন কোন দৈন্যদশায় পড়েনি যে আগাম নির্বাচন দিতে হবে আর আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোন প্রয়োজন নেই। কোন্ দল নির্বাচনে এলো কি এলো না সেটি সম্পূর্ণই সেই দলটির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নির্বাচন করতে চাইলে আসবে, নইলে আসবে না। এ ব্যাপারে সরকারের কিছু করণীয় নেই। তবে গতবার বিএনপি যে ভুল করেছে আমার মনে হয় এবার তা করবে না। বিএনপি নাকে খত দিয়েই এবার নির্বাচনে আসবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে একাধিক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনেও তাঁর দলের বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনীতি করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়, আমরা চাই তারাই ক্ষমতায় আসুক। কোন যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী, দুর্নীতিবাজ, বিদেশে অর্থ পাচারকারী, জঙ্গীবাদ সৃষ্টিকারী খুনীদের দল ক্ষমতায় এলে দেশ আবারও ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা বর্তমান উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে পারবে, দেশকে আর পেছনের দিকে টানবে না, আমরা চাই তারাই নির্বাচিত হবে। দেশের জনগণও এটাই চায়। তাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বর্তমান উন্নয়ন ও সফলতার গতিধারা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। আগামীতে আমরা আরও নতুন নতুন আসনে বিজয়ী হব বলেই আমরা দৃঢ় বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটাকে উন্নত করব, সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশ চালাচ্ছি। তারপর জনগণের ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা ভোট দেবে। কারণ আমিই সেøাগান দিয়েছিলাম আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। না দিলে আফসোসও থাকবে না। কারণ সুযোগ পেয়ে জনগণের জন্য কাজ করেছি। প্রমাণ করেছি দেশের উন্নয়ন করা যেতে পারে। এটাই আমার সন্তুষ্টি। প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এবার কেউ নির্বাচনে না এসে আগুনসন্ত্রাস করলে জনগণই তার জবাব দেবে। জনগণই ব্যবস্থা নেবে। সৌদি আরবে বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিশ্বের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দেশের মানুষই এর বিচার করবে আর দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ীও তাঁর বিচার হওয়া উচিত। অবশ্যই তাঁর বিচার হবে আর সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনতেও ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। একদিন না একদিন তারেক রহমানকেও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সম্প্রতি তাঁর কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও প্রায় এক ঘণ্টার প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, জিয়া পরিবারে বিদেশে অর্থ পাচার, বিএনপির সঙ্গে সংলাপ, রোহিঙ্গা ইস্যু, ফিলিস্তিন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তসহ নানা বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের সম্পাদক প্রধানদের নানা প্রশ্নের সাবলীলভাবেই উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এছাড়া সেখানে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সরকারের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর ঝাড়ি বা অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই ॥ আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে আরও সময় দরকার। আমরা গেলে উন্নয়নের কাজের কী অবস্থা হয় সেটা দেশবাসী আগেও দেখেছে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে আমরা যে উন্নয়ন করেছি, আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি, এত অল্প সময়ে সেটা অতীতে আর কেউ করতে পারেনি আর এমন কোন দৈন্যদশা সরকারের হয়নি যে আগাম নির্বাচন দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার কোন উদ্যোগ নেবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা? কিসের প্রস্তাব? তাদের (বিএনপি) কাছে কি বরণডালা পাঠাতে হবে? সংসদীয় গণতন্ত্রে মাল্টি পার্টি সিস্টেম। কোন্ দল নির্বাচনে আসবে কি না আসবে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যারা বিশ্বাস করে তারা নির্বাচন করবে। আর যারা মনে করে যে, কেউ উপর থেকে ফলটা ছিঁড়ে খাইয়ে দেবে, নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, সেখানে আমাদের কী করণীয় আছে? আমাকে বলে তো লাভ নেই। এ প্রসঙ্গে গত নির্বাচনের আগে নির্বাচনে নিয়ে আসতে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে গণভবনে দাওয়াত প্রদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, একবার তাঁর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আমন্ত্রণ জানিয়ে যে ঝাড়ি খেয়েছি, যে অপমানিত হয়েছি। আর তেমন ঝাড়ি খাওয়ার বা অপমানিত হওয়ার ইচ্ছে নেই। যাদের মধ্যে সামান্যতম ভদ্রতাজ্ঞানটুকু নেই, তাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন কোন্ মুখে। আমার ওপর আপনারা এত জুলুম করেন কেন? ছেলের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হয়েও তাঁর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দরজায় তালাবন্ধ করে দিয়ে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পকেট গেট দিয়েও ঢুকতে দেয়নি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তারপরও দেশের স্বার্থে আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই তাদের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সাংবাদিকদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, এ ধরনের ছোটলোকিপনা যারা করে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন কোন্ মুখে। কোন্ দল নির্বাচন করবে কি করবে না, তা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের কী করার আছে। নির্বাচন গণতান্ত্রিক ধারায় হবে। যে দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা নির্বাচনে আসবে আর যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তারা চাইবে নির্বাচনে না এসে একটা অঘটন ঘটাতে। কিন্তু দেশের জনগণ গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে। তাই যারা দেশে আবারও কোন অঘটন কিংবা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করবে, দেশের জনগণই তাদের প্রতিহত করবে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা নিয়ে একাধিক প্রশ্নের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনা নিয়ে যদি আপনাদের এতই আগ্রহ থাকে, তাহলে তেলের টিন, ঘিয়ের টিন নিয়ে সেখানে যান। আমি অপাত্রে ঘি ঢালি না।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমানকে মেজর থেকে মেজর জেনারেল বানিয়েছেন আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু)। বউ (খালেদা জিয়া) উনি প্রায়শই আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমাদের বাসার নিচে মোড়া পেতে বসে থাকতেন। তাঁকে (জিয়াউর রহমান) অনেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলেন! অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে উনি যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন, নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়ে খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। এটাই কী তাঁর (জিয়াউর রহমান) বহুদলীয় রাজনীতি? প্রতিদিন রাতে কার্ফু দিয়ে দেশ চালানোকে বহুদলীয় গণতন্ত্র বলে? খালেদা জিয়ারই ক্ষমা চাওয়া উচিত ॥ ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি’-সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারর্সন খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে কেন ক্ষমা করবে? আমি কী করেছি? বরং উনার (খালেদা জিয়া) উল্টো মাফ চাওয়া উচিত। আসলে উনি কি ক্ষমা করেছেন, না ক্ষমা চেয়েছেন- এ ক্ষমার বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তাঁর উচিত দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। আমি কোন অপরাধ করেছি নাকি যে আমাকে ক্ষমা করতে হবে? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করিয়েছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমি বেঁচে গিয়েছিলাম, এর জন্য কী আমাকে ক্ষমা করেছেন? ওই হামলায় আমি প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভী রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। এ জন্য বরং খালেদা জিয়ারই জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদার বিরুদ্ধে যে মামলা তা আমাদের সরকার দেয়নি বরং আমার বিরুদ্ধে তো বিএনপি এক ডজন মামলা দিয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যারা মামলা দিয়েছে সেই মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা তো তাঁদেরই নিজেদের লোক। খালেদা জিয়াই ৯ জনকে ডিঙ্গিয়ে মঈন-উ আহমদকে সেনাপ্রধান করেছিলেন, জাতিসংঘ থেকে এনে ফখরুদ্দীন আহমদকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর করেছিলেন। তাঁরাই তো এই মামলা করেছেন। তিনি বলেন, এই মামলা থেকে তাঁর (খালেদা জিয়া) পলায়নপর নীতি আপনারা তা দেখেছেন। ১৫০ বার মামলার স্ট্রে নিয়েছেন, ২২/২৩ বার মামলা বন্ধ করতে রিট করেছেন আর কোর্টে যাওয়া নিয়েও তা-ব হয়েছে। এর আগে উনি হাজিরা দেয়ার সময় আওয়ামী লীগের এমপি ছবি বিশ্বাসের গাড়ি ভাংচুর করেছে, আগুন দিয়েছেন। এবার পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। যখনই উনি বেরচ্ছেন তখনই একটা না একটা ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এর আগে নির্বাচন ঠেকানোর নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। এ জন্য খালেদা জিয়ারই উচিত দেশবাসীর সামনে ক্ষমা চাওয়া। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা সমর্থন পাচ্ছি। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন- আসিয়ানে এ বিষয়ে কথা বলবেন। মিয়ানমারকে তারা চাপ দিচ্ছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে না বললেও চাপ দেয়া হচ্ছে। সবাই চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যাক। আমরাও তাই প্রত্যাশা করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমি চাই তাদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় থাকুক। আমরা সম্পূর্ণ মানবিক কারণে মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু অবশ্যই মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে। তিনি বলেন, এই ইস্যুতে গোটা বিশ্ববাসীর সমর্থন আমরা পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ ব্যাপারে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। জয়েন্ট স্ট্রিয়ারিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা দেশকে ৩০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে ॥ অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মধ্যে ৩০ বছরই দেশের মানুষ ছিল অবহেলিত, বঞ্চিত আর এই ৩০ বছরই ছিল হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বিদেশে অর্থ পাচার, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস-খুন আর ভোট কারচুপির ইতিহাস। ত্রিশটা বছর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র ৮ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছে তা কেউ করতে পারেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করে এটা আমরা প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, খুনী-জঙ্গীদের দল ক্ষমতায় থাকলে দেশের কোন উন্নয়ন হয় না বরং তারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করে। দেশের কোন উন্নয়ন হোক, দেশ এগিয়ে যাক তারা কোনভাবেই তা চাইতে পারে না। তাই দেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিই ক্ষমতায় থাকুক এটাই আমরা চাই। শত ফুল ফুটতে দিন ॥ আসন্ন নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থিতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত ফুল ফুটতে দিন, এটা রাজনৈতিক তাদের অধিকার। তবে সব থেকে যেটা ভাল ফুল সেটাই আমরা বেছে নেব। সময় হলেই সবাই তা দেখতে পারবেন আর আওয়ামী লীগ একটা বড় রাজনৈতিক দল। মনোনয়ন চাওয়া তাদের রাজনৈতিক অধিকার। নির্বাচনী হাওয়া বইয়ে যাওয়া ভাল। দেশের মানুষ গণতন্ত্রের সুবাতাস গ্রহণ করেছে, নির্বাচনী হাওয়া বয়ে যাওয়া মানেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই একটি বড় প্রমাণ। মাঠপর্যায় থেকে প্রার্থীদের বিষয়ে জরিপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের কাছে কার কেমন গ্রহণযোগ্যতা আছে তা আমাদের খেয়াল রাখতে হয়। তবে যার (দলের এমপি-মন্ত্রী) কোন দুর্বলতা দেখি, তাকে সতর্ক করি। একটা কথা মনে রাখতে হবে- দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। এটা অব্যাহত রাখলেই মানুষই আপনাকে বেছে নেবে। তবে কেউ রেড জোনে নেই। তিনি বলেন, আমরা সারাদেশেই সুষম উন্নয়ন করেছি। সেই উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করছে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের মানুষ এত উন্নয়ন ও দেশের অগ্রগতি দেখে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। আমরা আগামী নির্বাচনে আরও নতুন নতুন আসন আশা করি আর কোন মন্ত্রী-এমপির এলাকায় দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই প্রার্থিতা পরিবর্তন হবে। দেশের উন্নয়ন চাইলে সরকারে একমাত্র আওয়ামী লীগকেই দরকার, আমরা তা প্রমাণ করেছি। জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা গ্রহণযোগ্য না ॥ ফিলিস্তিনের জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি সুয়োমোটো যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমার কাছে মনে হয় এটা ইসলামিক ওয়ার্ল্ডে কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না। কারণ এখানে জাতিসংঘের রেজুলেশন রয়েছে। রেজুলেশন অনুযায়ী কিন্তু পদক্ষেপ নেয়া উচিত। জাতিসংঘের রেজুলেশনকে এভাবে অগ্রাহ্য করা কিন্তু কেউ বোধহয় মেনে নেবে না। এটা ফিলিস্তিনের বিষয়ে আমার বক্তব্য। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনের একটা অধিকার রয়েছে। তাদের একটা নিজস্ব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অবশ্যই দিতে হবে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের (আরব-ইসরাইল যুদ্ধ) পরে তাদের যে ভূখ-টা এবং যে সীমানাটা তাদের ছিল, যেটা তাদের রাজধানী হওয়ার কথা, সেটাই থাকা উচিত। তিনি বলেন, এখানে এভাবে একতরফাভাবে করা মানে, অশান্তি সৃষ্টি করা এবং যে শান্তি প্রক্রিয়া, যেটা আমেরিকা শুরু করেছিল, সেটার জন্য নোবেল প্রাইজও দেয়া হলো। একবার তারা নিজেরা শুরু করল, এই ঘোষণায় এখন অশান্তির পথে ঠেলে দেয়া সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। ফিলিস্তিনের জনগণ যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায়, সে ব্যাপারে সকল মুসলিম দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমি পত্রিকা পড়ে দেশ চালাই না ॥ অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি পত্রিকা পড়ে দেশ চালাই না। দেশকে, দেশের মানুষকে ভালবেসে দেশ চালাই। বাবার (বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে যা শিখেছি, দেশের উন্নয়ন কিভাবে করতে হয়; সে চিন্তা করেই দেশ চালাই।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেশে-বিদেশে যান। এক সময় গেলে কি হতো, বাংলাদেশ শুনলে মনে করত ভিক্ষা চাইতে আসছে, কিন্তু তারাই এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে চলে। আগে যেখানে ছিল ভিক্ষুক জাতি, এখন সেই বাংলাদেশ সারাবিশ্বের সামনে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। অন্তত এই জায়গাটায় আপনাদের এনে দিতে পেরেছি। বাংলাদেশটাকে এই জায়গাটায় আনতে পেরেছি। এটা হয়তো সবাই উপলব্ধি করবেন না, করেনও না। তিনি বলেন, পত্রিকা মানে হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে পত্রিকা চলেই না। তো পত্রিকা চালানোর ব্যবসাটাই মনে আছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সেটা চোখে দেখেও দেখেন না। এতে তো আমাদের কিছু করার নাই আর আমি তো পত্রিকা পড়ে দেশ চালাই না। দেশকে ভালবেসে দেশ চালাই। সেজন্য সফলতাও আসে দেশের। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
×