ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এখন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লড়াই সংগ্রাম শেষ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানের বর্বরবাহিনীর সঙ্গে ৯ মাস যুদ্ধ করেছিলেন। শহরের তথাকথিত শিক্ষিতজনেরা জ্ঞানীজনেরা যখন ভীতুর মতো ঘরে ঢুকে দরজা দিয়েছিলেন, তখন অস্ত্র হাতে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন গ্রামের সাধারণ তরুণ যুবকেরা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাত ধরেই এসেছিল বিজয়। প্রতি বছরের মতো এবারও ডিসেম্বরে ঢেউ খেলছে লাল-সবুজ। শহীদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা এখন সবার হাতে হাতে। ঢাকার রাস্তায় নামলেই চোখে পড়ছে লাল-সবুজের ওড়াওড়ি। ফেরি করে পতাকা বিক্রি করছেন হকাররা। দেখে মন গুনগুন করে গেয়ে ওঠে ওই পতাকা আমার মায়ের মুখের মতো/কারুকার্যময়/ওই পতাকা আমার বাবার চোখের মতো/দূরদৃষ্টিময়/ওই পতাকা আমার প্রতিটি দিনের মতো/চির বিস্ময়...। বিস্ময়কর অর্জন পিতা তার এইটুকুন সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন। শিশুটিও মনের আনন্দে ঝা-া ওড়াচ্ছে। বার বার দেখা দৃশ্য গত বুধবার শাহবাগ এলাকায় আরও একবার দেখা হলো। শোয়েব আহমেদ নামের এক বাবা তার শিশু সন্তানের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে বলছিলেন, দেশ বোঝাতে এই ছোট্ট পতাকাটিই যথেষ্ট। তাছাড়া আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ কারণে পতাকা নিয়ে বিশেষ গর্ব করি। স্বতন্ত্র আবেগ কাজ করে। বাচ্চার হাতে পতাকা তুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে তাকেও বলতে পারেন প্রস্তুত করছি। ডিসেম্বরে প্রচুর আনুষ্ঠানিকতা হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে বীর যোদ্ধারা দেশের জন্য প্রাণ বাজি রেখেছিলেন তাদের সে তুলনায় সামান্যই স্মরণ করা হয়। টেলিভিশন টকশোর এই যুগে গ্রামের সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের একটু খুঁজে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রতিবারের মতোই চলছে উৎসব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। এবারও সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব আয়োজন করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক উৎসব মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন প্রাঙ্গণে আগামী ১০ ডিসেম্বর শুরু হবে। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। চারটি মঞ্চে থাকবে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশনা। মিরপুরে অবস্থিত জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হবে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। ১৬ ডিসেম্বর সকালে থাকবে শিশু-কিশোরদের আনন্দানুষ্ঠান। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গত বুধবার থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭। তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে বিপুল বিশাল আয়োজনে মেতেছে রাজধানীর তরুণ প্রজন্ম। চারদিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম দিন উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। প্রধান অতিথি হিসেবে তিনিই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধন করেন। এ সময় তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা তরুণদের আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলছি। সমগ্রবিশ্ব এখন তাদের হাতের মুঠোয়। এই তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে জাতির জনকের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে সার্থক করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। এদিন প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন সোফিয়ার সঙ্গে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আগেই সবার মন জয় করেছিল নারী রোবট। এবার মুগ্ধ করেছে ঢাকাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চমৎকার হেসে কথা বলে সোফিয়া। শিশুটির মতো উপভোগ করেন সত্তরোর্ধ শেখ হাসিনা। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য ছিল ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ পর্ব। এই পর্বে অংশ নিতে এসেছিল হাজার হাজার ছেলেমেয়ে। ¯্রােত থামাতে সবকিছু অনেক্ষণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন আয়োজকরা। হল অব ফেইমে বেলা আড়াইটা হতে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন সোফিয়া। সঙ্গে ছিলেন সোফিয়ার উদ্ভাবক ডেভিড হ্যানসন। সোফিয়া নিজের পরিচয় নিজেই দেয়। তার কথাগুলো ছিল এরকম হ্যালো বাংলাদেশ। আই এ্যাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইন্ট্রিগ্রেটেড রোবট সোফিয়া। আমি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি পরেছি। মিহি সুতার তৈরি আরামদায়ক পোশাকটি পরে আমারও ভাল লাগছে। এখানেই শেষ নয়, নিজের প্রেম, বিয়ের সম্ভাবনা, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনায় চলে এসেছে সোফিয়া। শহরের সবখানে সবার মুখে সোফিয়া। রোবটের মতো তার উদ্ভাবক ড. ডেভিড হ্যানসনও আলোচনায়। ঢাকায় এসেছেন। সোফিয়ার সঙ্গে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট মানুষের হয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশ চাইলে সোফিয়ার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে বলে জানান তিনি।
×