ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার\ শুল্ক জটিলতায় সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে দীর্ঘ আট মাস ধরে ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। ভারতের উচ্চ আদালত কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় অনেক দিন ধরে এ বন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ আছে। কিন্তু সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা চার মাসের জন্য তুলে নেয়া হলেও শুল্ক জটিলতায় তামাবিল দিয়ে কয়লা আমদানি হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে তামাবিল স্থলবন্দর থেকে চলতি অর্থবছরে রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আদায় নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে কয়লা না এনে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করায় খরচ পড়ছে বেশি। এর প্রভাব পড়ছে ইটের দামেও। জানা গেছে, পরিবেশ আইনে ভারতের উচ্চ আদালতে কয়লা রফতানি নিয়ে একটি মামলা চলমান। প্রায় ৮ মাস আগে দেশটির আদালত কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর থেকে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে বন্ধ হয়ে পড়ে কয়লা আমদানি কার্যক্রম। আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে কয়লার অন্যতম প্রধান বাজার ইটভাটাগুলো। ইটভাটায় অক্টোবর থেকে শুরু হয় ইটপোড়ানো। ইটভাটার চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়ে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানি খরচ বাড়ার পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় বাড়ায় টনপ্রতি কয়লার দাম বেড়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইটের দামেও। গত বছর এই সময়ে প্রতি হাজার ইট সাড়ে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা সাড়ে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিলেট নগরের শেখঘাটের এমএইচ ব্রিক ফিল্ডের সত্ত্বাধিকারী দিলওয়ার হোসেন বলেন, তামাবিল দিয়ে কয়লা আমদানি বন্ধ। ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কয়লা আনতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইটের দামও বেড়েছে। তামাবিল দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু না হলে দাম আরো বাড়বে। কয়লা আমদানিকারক জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতে আমরা ইটভাটায় কয়লা দিয়ে পুরনো বছরের বকেয়া আদায় করি। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরুতে কয়লা দিতে না পারায় বকেয়া আদায়ও সম্ভব হয়নি। কয়লা আমদানির জন্য আমরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এলসি খুলি। বর্তমানে সেই ঋণ পরিশোধ আর বকেয়া আদায় নিয়ে শঙ্কায় আছি। এদিকে গত ২১ নবেম্বর ভারতের আদালত চার মাসের জন্য কয়লা রফতানির অনুমতি দিলেও তামাবিল দিয়ে আমদানি করছেন না বাংলাদেশি আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, সম্প্রতি তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দরে উন্নীত করার পর থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সিলেটের অন্যান্য শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানিতে যে শুল্ক লাগে, এখন তারচেয়ে বেশি লাগে তামাবিল দিয়ে আমদানি করতে। এছাড়া আগে তামাবিলে ‘হলিডে ট্যাক্স’ বলে কিছু ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি ছুটির দিনে হলিডে ট্যাক্স অন্তর্ভূক্ত করায় আমদানিকারকদের বাড়তি ব্যয় বইতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা আমদানি করছেন না। তামাবিল দিয়ে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন কয়লা আমদানিকারকরা। তামাবিল স্থলবন্দর মূলত কয়লা ও পাথরনির্ভর। কয়লা ও পাথর আমদানি থেকেই সিংহভাগ রাজস্ব আসে এ বন্দরের। তবে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও। তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা। গত পাঁচ মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। গত নবেম্বর মাসের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ কোটি টাকা থাকলেও আদায় হয়েছে মাত্র ৮৪ লাখ টাকা। কয়লা আমদানি চালু না হলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। ##
×