ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমকে ট্রাম্পের স্বীকৃতি ॥ প্রত্যাখ্যান আরব, ইউরোপ ও জাতিসংঘের

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

জেরুজালেমকে ট্রাম্পের স্বীকৃতি ॥ প্রত্যাখ্যান আরব, ইউরোপ ও জাতিসংঘের

অনলাইন ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে ‘অস্থিরতা কবলিত অঞ্চলটিতে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিন বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বদানকারী ভূমিকার জলাঞ্জলি দিয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছে। জেরুজালেম বিষয়ে কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি পাল্টে দেওয়া ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্ররা। ট্রাম্পের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে ফ্রান্স, পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখারও আবেদন জানিয়েছে দেশটি। ব্রিটেন বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শান্তি উদ্যোগের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে না এবং জেরুজালেমে ইসরায়েল ও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব থাকা উচিত। জার্মানি বলেছে, জেরুজালেমের মর্যাদা শুধু দ্বি-রাষ্ট্রীক সমাধানের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র আরব রাষ্ট্রগুলোও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সৌদি আরব বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা ‘অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইসরায়েলে সঙ্গে প্রথম শান্তিচুক্তি করা মিশর ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এতেও জেরুজালেমের আইনি মর্যাদা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটবে না। জর্ডান বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে দৃঢ় করায় ট্রাম্পের পদক্ষেপ ‘আইনি বৈধতা হারিয়েছে’। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, জেরুজালেমের বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সঙ্কট সৃষ্টি করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। এই সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে আর তাতে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছে তুরস্ক। ট্রাম্পের এই ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যুক্তরাষ্ট্রের কন্স্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে কয়েকশ প্রতিবাদকারী। কন্স্যুলেট ভবনের দিকে কয়েন ও অন্যান্য বস্তু ছুড়ে মারে তারা। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের দেওয়া প্রস্তাবের লঙ্ঘন অভিহিত করে এর ‘তীব্র নিন্দা’ করেছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “ইসরায়েলে প্রথম দিন থেকে এটি আমাদের লক্ষ্য ছিল, এটি শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
×