ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী আইএইচটিতে তুলকালাম, অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজশাহী আইএইচটিতে তুলকালাম, অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বহিরাগতদের উৎপাত বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত নিজ দলের নারী কর্মীদের ওপর লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেল্্থ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) এ হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আইএইচটি ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ব্যাপক তুলকালামের পর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জের ধরে ইনস্টিটিউট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে দুপুর ১টার মধ্যে ছাত্রদের এবং ৩টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহিরাগতসহ ছাত্রলীগের নেতাদের উৎপাত ও নিরাপত্তার দাবিতে আইএইচটি‘র ছাত্রীরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের নারী কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে ছাত্রলীগের একটি অংশ তাদের পাশে ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার পরে পুলিশ গিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রীদের অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে ছাত্রীরা হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি জাহিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক তুহিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশি বেরিকেড ভেঙ্গে গিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। ছাত্রীদের ব্যাপক মারপিটও করে তারা। এ সময় ছাত্রদের পাশে থাকা ছাত্রলীগের এক কর্মীকেও মারপিট করে তারা। হামলায় মিম, জ্যোতি, মোহনা ও নাদিরাসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। এদের মধ্যে জ্যোতি, মোহনা ও নাদিরাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নারী ছাত্রলীগ কর্মী নাদিরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রলীগ সভাপতি জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক তুহিনসহ তার অনুসারীরা ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন, অকথ্য ভাষায় গালাগাল এমনকি যৌন হয়রানি করে আসছে ক্যাম্পাসের ভেতরে। তাদের এমন আচরণের কারণে গত ৩ নবেম্বর জেল হত্যা দিবসে ছাত্রলীগের নারী কর্মীরা তাদের কর্মসূচীতে উপস্থিত হয়নি। তারা নগর ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার জন্য বের হলে জাহিদ ও তুহিন হলের গেটে বাহির থেকে তালা দিয়ে দেয়। তাদেরকে নগর ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া হয়নি। এ সময় তারা দুই নারী ছাত্রলীগ কর্মীকে চড়থাপ্পড়ও মারে। এর পর থেকে তাদের হলের সাধারণ ছাত্রীসহ নারী ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। এর প্রতিবাদে বুধবার তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। নাদিরা আরও বলেন, কয়েক মাস আগে জাহিদ ও তুহিনের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে। এরপরও তাদের কলেজের ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে অবস্থান করে বিভিন্নভাবে ছাত্রীদের নির্যাতন করে আসছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। ছাত্রীরা বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং অনেকের চুল ধরে টানাটানি করেন। চড়-থাপ্পড় এমনকি কিল-ঘুষিও মারা হয় ছাত্রীদের। তবে ছাত্রীদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইএইচটি ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, ছাত্রীদের সঙ্গে তার আপন বোন এবং ভাতিজিও ছিলেন। তাই তাদের ওপর হামলার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, ছাত্রীদের সঙ্গে পাঁচজন ছাত্রদল নেতা ছিল। তারা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলো। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকেই ধাওয়া দিয়েছিলেন। এ সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে পড়ে কয়েকজন ছাত্রী আহত হন। ছাত্রীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলে জাহিদ বলেন, ছাত্রী হোস্টেলে সন্ধ্যা ৬টার আগে সবার ঢুকে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত তারা বাইরে থাকে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে বদনাম হয়। তাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়েই ছাত্রীরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ গিয়ে তাদের প্রতিহত করেছে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ডাঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন দাবি নিয়ে ছাত্রীরা আমার কাছে এসেছিল। দাবি মানার আশ^াস দিয়ে ছাত্রীদের হলে পাঠানো হয়। কিন্তু হলের সামনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অধ্যক্ষ বলেন, এই ঘটনার পরে তাৎক্ষণিকভাবে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকা হয়। সভাশেষে রাজশাহী আইএইচটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পর পরই মাইকে তা জানিয়ে দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
×