ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন

প্রকাশিত: ০১:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

সৌদি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সৌদি ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। বিশে^র মধ্যে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য চমৎকার স্থান। এখানে অতি অল্প খরচে বিশ^মানের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুবিধা জনক বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বুধবার ঢাকার গুলশানে হোটেল আমরিতে এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশে সফররত সৌদি আরবের উচ্চ পর্যায়ের ২১ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সাথে বিজনেস মিটিং-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এসব ইকোনোমিক জোনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। সৌদি বিনিয়োগকারীগণ একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীগণ এখন শতভাগ বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। কোন ধরনের বাধা ছাড়াই যে কোন সময় লাভসহ পুরো বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরিয়ে নিতে পারবেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে দ্বৈত শুল্কনীতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ¯^ার্থ রক্ষার জন্য আইন পাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে উন্নত বিশ^ থেকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সে সুবিধাও ভোগ করতে পারবে। সৌদি ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ শুধু পাট, চা ও চামড়াসহ মাত্র ২৫টি পণ্য রপ্তানি করে আয় করতো ৩৪৮.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজ সেই বাংলাদেশ সাড়ে সাত শত পণ্য বিশে^র প্রায় সকল দেশে রপ্তানি করে সার্ভিস সেক্টরসহ আয় করছে ৩৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এখন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশে^র মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য সংখ্যা ও বাজার বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ¯^াধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি দাড়াঁবে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তোফায়েল আহমেদ বলেন, সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে উভয় দেশের বাণিজ্য ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে সীমাবন্ধ। উভয় দেশের ব্যবসায়ীগণ এগিয়ে এলে এ বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি করা সম্ভব। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে স্থানীয় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ এবং পরিচালকবৃন্দ। সৌদি আরবের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট গ্রæপের সভাপতি মোসাবাব আব্দুল্লাহ আলকাহতানি’র নেতৃত্বে সেদেশের ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ি প্রতিনিধিদল সভায় অংশ নেন। সৌদি আরবের অবকাঠামো নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ সামগ্রী, পর্যটন, কৃষি এবং খাদ্য ও পানীয় খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগকারী ও আমদানি-রপ্তানিকারকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও দেশের শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী ও আমদানি-রপ্তানিকারকগণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজি এম. আমিনুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)’ সফলভাবে অর্জনের পর বাংলাদেশ ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ‘শিল্প ও সেবা নির্ভর’ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৮তম শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) তাঁর বক্তব্যে সৗদি প্রতিনিধিদলকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল এবং আথর্-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটছে। সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বিশেষ করে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় জনাব মহিউদ্দিন দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সহযোগিতাকারী দেশ এবং বিগত বছরগুলোতে দেশটির সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌছেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে সৌদি আরবের বৃহৎ বিনিয়োগ হয়েছে: যা সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতেও সম্প্রসারিত করতে পারে। তিনি বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হালকা প্রকৌশল পন্য, আসবাব পণ্য, প্লাস্টিক পন্য, সিরামিক সামগ্রী, হিমায়িত মাছ, হালাল খাদ্য সমাগ্রী এবং পাদুকা ও পাটজাত পণ্যের বিপুল বাজার রয়েছে। বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি অনুক‚ল থাকায় প্রতিনিধিদলের এ সফরের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতার ¯^র্ণদুয়ার উন্মোচিত হবে বলে এফবিসিসিআাই সভাপতি আশা প্রকাশ করেন। সভার উদ্বোধনী পর্ব শেষে দুদেশের ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ ‘বিজনেস টু বিজনেস’ সভায় মিলিত হন। সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ থেকে অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি, তেল ও গ্যাস, বস্ত্র ও এ্যাপারেল, ব্যাংকিং ও ফাইনান্স, তথ্য প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ, ¯^াস্থ্য ও ঔষধ খাত, হিমায়িত খাদ্য, পাট, পর্যটন, কৃষি এবং খাদ্য ও পানীয় খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ ‘বিজনেস টু বিজনেস’ সভায় সম্ভাব্য ব্যবসা স্থাপনে কার্যকর আলোচনা সম্পন্ন করেন। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে এফবিসিসিআই এবং সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারার ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আলফানার এনার্জি’র মধ্যে একটি ‘সমঝোতা স্মারক’ ¯^াক্ষরিত হয়। ¯^াক্ষরিত স্মারক অনুযায়ী আলফানার এনার্জি বাংলাদেশে ৪০-১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে এবং তা বাস্তবায়নে এফবিসিসিআই প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে সংগঠনের মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) হোসাইন জামিল এবং আলফানার এনার্জি’র পক্ষে প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মুহাম্মদ ইরফান স্মারকে ¯^াক্ষর করেন। ‘বিজনেস টু বিজনেস’ সভার পর বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্ভাবনাময় বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সেশনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, বিজিএমইএ ইত্যাদি সংগঠন থেকে দেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আকর্ষণ করে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৮৫.২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য সৌদি আরবে রপ্তানি করে এবং সৌদি আরব থেকে ৬০৫.৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে কৃষি পণ্য, নীটওয়্যার, ওভেন গামেন্টস, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাবার। আর সৌদি আরব থেকে মুলত প্লাস্টিক এবং রাবার সামগ্রী, খণিজ পণ্য, রাসায়নিক সামগ্রী এবং বেস মেটাল সামগ্রী আমদানি করা হয়।
×