ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁর গণহত্যায় এখনও মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পায়নি ১৪ শহীদ

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

নওগাঁর গণহত্যায় এখনও মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পায়নি ১৪ শহীদ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁর ধামইরহাটের কুলফৎপুরে একাত্তরের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতাকামী ১৪ জন নিরীহ কৃষককে গুলি করে হত্যা করে পাকি হানাদার বাহিনী। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাইনি তাঁরা। ওই ১৪ জন শহীদকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মর্যাদা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ওই ১৪জন শহীদকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মর্যাদা দেয়ার দাবী জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদের হুইপ ও মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু এমপি, লেখক ও গবেষক আতাউল হক সিদ্দিকী, নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সাপাহার মুক্তিযোদ্ধা ফোরামের কমান্ডার আলতাফুল হক চৌধুরী, একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী, সাধারণ সম্পাদক মেহমুদ মোস্তাফা রাসেল ধামইরহাট এমএম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট প্রাণ হারানো শহীদ আমজাদ হোসেনের ছেলে উমার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নাজমুল হক বলেন, আমি তো বাবাকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু তিনি যেন স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের মর্যাদা পান, এইটুকু চাই। স্বাধীনতার পর অনেক সরকারই ক্ষমতায় এসেছে। সব আমলেই বাবার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদন তদবির করেছি। কিন্তু সরকারই চোখ তুলে তাকাচ্ছেন না। শহীদ পরিবারের সন্তান চানমদ্দিন, ফেরদাউস হোসেন ও মনোয়ারা বেগম শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ও গণকবরটি সংরক্ষণের জন্য দাবি জানান। হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু এমপি বলেন, গণকবরটি সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকল্পের অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা চলছে। আমার তত্ত্বাবধানে কয়েক বছর আগে এখানে শহীদদের নামের তালিকা বিশিষ্ট স্মৃতিফলক করা হয়েছে। আশা করছি, শিঘ্রই গণকবরটি সংরক্ষণের জন্য প্রকল্পও পেয়ে যাব। এব্যাপারে ধামইরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুুর রঊফ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যে কাউকে অন্তর্ভূক্ত করা যায় না। অনেক ত্যাগ, সংগ্রাম ও নির্যাতনের নাম মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই ১৪জন শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। যুদ্ধকালিন কমান্ডার মোঃ ফরমুদ হোসেন বলেন, ১৪জন নিরীহ গ্রামবাসী তারা কোন মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক মনে করে পাকি বাহিনী তাদেরকে হত্যা করেছে। সে হিসেবে তারা শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পেতেই পারে। জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৪ আগষ্ট এই দিনে ধামইরহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী কুলফৎপুর গ্রামে পাকি হানাদার বাহিনী ১৮ জন কৃষককে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্র্যাশ ফায়ার করে। সেখানে ১৪ জন কৃষক প্রাণ হারান। শহীদরা হলেন, তজোমুদ্দীন, বিজুমুদ্দীন, আব্বাস আলী, রহিম উদ্দীন, ফয়জুল ইসলাম,আফতাব উদ্দীন, তায়েজ উদ্দীন, ছয়েফ উদ্দীন, কছিমুদ্দীন, আমজাদ হোসেন, চানমুদ্দীন, অবির উদ্দীন, মতিবুল ইসলাম ও আবেদ আলী। ঘটনাক্রমে এদের মধ্যে চারজন প্রানে বেঁচে যান। হানদাররা চলে গেলে গ্রামবাসীরা এর মধ্যে ১২ জন শহীদকে কালাহারের পুকুর পাড়ে কবর দেন। অন্য দুইজন শহীদকে গ্রামের উত্তর পাড়ায় কবর দেয়া হয়।
×