ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কঙ্গোর উদ্দেশে তারা ৭ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়বেন

দেশের প্রথম দুই নারী বৈমানিক শান্তিরক্ষা মিশনে যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

দেশের প্রথম দুই নারী বৈমানিক শান্তিরক্ষা মিশনে যাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম দুই নারী বৈমানিক এমআই-১৭ হেলিকপ্টার উড্ডয়ন করেন। তারা আগামী ৭ ডিসেম্বর কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। আগামী এক বছর কঙ্গোয় বৈমানিকের দায়িত্ব পালন করবেন। সোমবার ঢাকা সেনানিবাসস্থ ঘাঁটি বাশারে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার উড্ডয়ন বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফি। শান্তিরক্ষী মিশনে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করলেন তারা। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দুই নারী পাইলট সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। ঢাকা ত্যাগের জাতিসংঘ মিশনে যোগদানের উপর তাদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন। নারী বৈমানিক দ্বয় তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে সামরিক বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে পারার বিষয়টি গৌরবের বলে উল্লেখ করে বলেন, এই পেশায় মেধা বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। সমাজের সবক্ষেত্রে নারীর সম-অংশগ্রহণই নিশ্চিত করতে পারে দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ২০০০ সালে প্রথম সামরিক বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় বিমানবাহিনীর বিভিন্ন শাখার নারী কর্মকর্তারা বিমানবাহিনী ছাড়াও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রথমবারের মত দুই জন নারী বৈমানিককে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দিয়েছে। সামরিক বৈমানিকের মত চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারী বৈমানিকদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যাচাই বাছাইয়ের পর বিমানবাহিনীতে কর্মরত দুই জন নারী কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুৎফি মনোনিত হন উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নং স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য মনোনিত হওয়া দুই নারী কর্মকর্তা ২০১৪ সালের গত ৩ আগস্ট গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত তাদের উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরবর্তীতে ২৫ ঘণ্টা সফল প্রশিক্ষণ উড্ডয়ন শেষে তারা একক উড্ডয়ন তথা প্রথম একক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন। এভাবে নারী বৈমানিকদ্বয় ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাদের প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করে বৈমানিক হয়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে নেন। প্রশিক্ষণরত বৈমানিকদ্বয় বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করার পর পরবর্তীতে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করেন। তারা ২০৬ হেলিকপ্টার কনভার্সন কোর্স, এমআই-১৭, এমআই-১৭১ এবং এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হন। তারা ভারত থেকে এভিয়েশন মেডিসিনে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন্স উত্তরণে অপারেশনাল পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই দুই নারী বৈমানিক। পেশাগত জীবনে বৈমানিক হিসেবে তাদের এই সাফল্য বিমানবাহিনী এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উড্ডয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। বিমানবাহিনীর এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের মেয়েদের অগ্রযাত্রায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল। দেশের গন্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের যোগদান বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে এক গৌরব উজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা হলো।
×