ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জোরালো হচ্ছে ডাকসু নির্বাচনের দাবী

ডাকসু নির্বাচনের দাবীতে ৯ দিন ধরে অনশনে এক শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

ডাকসু নির্বাচনের দাবীতে ৯ দিন ধরে অনশনে এক শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবীতে এক অভিনব আন্দোলন করে যাচ্ছেন এক শিক্ষার্থী। ২৭ বছর যাবৎ বন্ধ থাকা এই ডাকসু নির্বাচনের দাবীতে বিগত ৯ দিন যাবৎ একক অনশন করছেন তিনি। আন্দোলনরত ঐ শিক্ষার্থীর নাম ওয়ালিদ আশরাফ। প্রথম দিকে একা আন্দোলন শুরু করলেও এখন তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো একাত্বতা প্রকাশ করেছেন। ক্রমশ এই আন্দোলন বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে বলে জানা গেছে। ডাকসুর দাবীতে একটি বৃহৎ আকারের আন্দোলনের চেষ্টা চলছে। ওয়ালিদ আশরাফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন ছাত্র। পাশাপাশি ভাষা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভাষা শিখেন তিনি। তার দাবী একটাই- ‘ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে’। বিগত আট দিনের অনশনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওয়ালিদ। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্মৃতি চিরন্তন’ নামক চত্বরে তিনি অবস্থান নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের স্মরণে নির্মিত এই চত্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের ঠিক পাশে। গত ২৫ নবেম্বর শুরু হয় এই অনশন। একে একে নয় দিন পার হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনীর কড়ইগাছের নিচে ছোট্ট একটি অস্থায়ী তাঁবু গেড়েছেন ওয়ালিদ আশরাফ। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর কম্বল নিয়ে সেখানেই কাটাচ্ছেন দিন-রাত। ওয়ালিদ আশরাফের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে প্রতিদিন। পথচারীরা কেউ কেউ তার সাথে আলাপ-আলোচনাও করছেন। টানা অনশনের কারণে শারীরিকভাবে অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়েছেন ওয়ালিদ। স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে ডাক্তার জানিয়েছেন, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনেক কমে গেছে, রক্তচাপও অনেক কম। তাই যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। ওয়ালিদ আশরাফ জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আফসোস এখানে শিক্ষার্থীদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। আবাসিক হলে থাকতে হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কৃপায় থাকতে হয়। যখন-তখন দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে নেয়া হয়। ক্যানটিনের খাবার, বিছানায় ছারপোকাসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়। এর কারণ হচ্ছে আজ ডাকসু নেই। ডাকসু থাকলে এমনটা হতো না। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এখন কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায় না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে ছাত্র প্রতিনিধির কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন হচ্ছে। হয় না কেবল ডাকসু নির্বাচন। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। ডাকসু আমাদের অধিকার। সবার আগে ডাকসু নির্বাচন দেয়া দরকার। ওয়ালিদের অনশনের পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ অপু। তিনি বলেন, ওয়ালিদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। ডাকসু না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাদেশে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্বের জন্যও ডাকসু নির্বাচন দরকার। ওয়ালিদ অনশন শুরুর পর ডাকসু নির্বাচনের দাবী আবারও সোচ্চার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্রসংগঠনগুলো তাঁর দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওয়ালিদের কাছে গিয়ে সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন। ডাকসু নির্বাচনের স্লোগানে নতুন করে লেখা হচ্ছে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে। এছাড়া ডাকসুর দাবীতে প্রতিবাদী কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়ালিদের সঙ্গে স্মৃতি চিরন্তনে অবস্থান নিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, ডাকসুর দাবিতে মিছিলও করছেন তারা। ডাকসুর দাবিতে দেয়াল লিখন, গ্রাফিতিও করেছেন তারা। গত শনিবার ওয়ালিদের সঙ্গে সংহতি জানাতে আসেন ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশের নেতৃত্বে আসন্ন রেজিস্ট্রার গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রগতি পরিষদের পক্ষে অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা। এসময় তারা ডাকসুর দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রশাসনের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। এর কিছুসময় পরেই সংহতি জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোট ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছেন। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট এবং ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক ছাত্রনেতারা কর্মসূচিতে সংহতি জানায়। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। ১৯৯৮ সালে ডাকসুর কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে (৫০তম) বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ আ মাস্ট (হতেই হবে)। নির্বাচন না হলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে শূন্যতার সৃষ্টি হবে।’ সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে আমরা বিশেস গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। এ ব্যাপারে আমাদের কোন ঘাটতি নেই। নির্বাচনে পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি আমরা। আশা করছি সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সামনে একটা উদ্যোগ নিতে পারব।
×