ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে প্রভাষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বরিশালে প্রভাষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ ও একাধিক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে ওই প্রভাষকের বিচার দাবি করে ইউএনও, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি, অধ্যক্ষ, থানার ওসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। চলতি বছর ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করা বাকাল গ্রামের ভূক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ছাত্রী একই কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারুক ফকিরের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণসহ তার একই ব্যাচের বিভিন্ন ছাত্রীর শ্লীলতাহানী ও যৌণ নিপিড়নের স্বাক্ষী হিসেবে ফিরিস্তি তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত প্রভাষক ফারুক ফকিরকে অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করবেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক প্রভাষক ফারুক ফকিরের নিজ গ্রামের ভূক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগে জানা গেছে, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারুক ফকির কলেজে ভর্তির সময় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগীতার আশ্বাসে ভূক্তভোগী ছাত্রীসহ বিভিন্ন ছাত্রীদের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। বাকাল গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই শিক্ষার্থী তাদের একই গ্রামের বাসিন্দা সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারুক ফকিরের কাছে পড়াশুনায় সহযোগীতা কামনা করেন। সহযোগীতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষক ফারুক ফকির কৌশলে তাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকাবর ওই ছাত্রীর সাথে দৈহিক মেলামেশা করে প্রভাষক ফারুক ফকির। অভিযোগে আরও জানা গেছে, ভূক্তভোগী ছাত্রীর মতো অনেক ছাত্রী ফারুকের লালসার শিকার হলেও লোকলজ্জা আর মান সম্মানের ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। এর আগে ফারুকের লালসার শিকার হয় একই গ্রামের সংখ্যালঘু সস্প্রদায়ের অন্য এক ছাত্রী। এছাড়াও সাবেক এক প্রকৌশলীর মেয়ের শ্লীলতাহানী ঘটায় লম্পট ফারুক। বিষয়টি জানাজানির পর ফারুক ওই ছাত্রীর পরিবারের কাছে পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিস্তার পায়। গত দুইবছর পূর্বে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্র্রদায়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার ঘটনায় ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ওই শিক্ষার্থী। একারণে কলেজ থেকে তাকে (ফারুক) বহিস্কারও করা হয়েছিলো। বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে প্রভাষক ফারুক কলেজ গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে মামলার বাদি ছাত্রীকে ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। সোমবার সকালে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি সাবেক অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী হাওলাদার অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগের মধ্যে অনেক ঘটনাই সত্য। এক ছাত্রীর মামলা দায়েরের পর প্রভাষক ফারুক ফকিরকে বহিস্কারও করা হয়েছিল। সে সময় শিক্ষার্থী মামলা না তুললে ফারুককে চাকরীতে সুযোগ দেয়া হতোনা। এবারের অভিযোগ পেয়ে গভর্নিং বডির সভায় নৈতিকতা ও শৃংখলা পরিপন্থী এজেন্ডায় ফারুক ফকিরকে সতর্ক করা হয়েছে। তাকে কলেজে চাকরী করতে হলে বিয়ে করার জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিয়ে না করলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কমলা রানী মন্ডল জানান, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবহিত রয়েছেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গভর্নিং বডির সভায় ফারুক ফকিরকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহম্মেদ রাসেল বলেন, অভিযোগ গুরুতর, তাই বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষর সাথে কথা হয়েছে। অভিযোগকারী ছাত্রী পরিচয় প্রকাশ করতে না চাওয়ায় অভিযুক্ত প্রভাষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা। তিনি আরও জানান, ওই শিক্ষককে নজরদারিতে রাখার জন্য অধক্ষ্যকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রভাষক ফারুক ফকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সামাজিকভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
×