ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু : কে পাচ্ছেন নৌকা, কে পাচ্ছেন ধানের শীষ

খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড়

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ দিন-ক্ষণ ঠিক না হলেও একটু আগেভাগেই আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নগরজুড়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, প্যানা, ফেস্টুন ও ব্যানার শোভা পাচ্ছে। অফিস, মহল্লা, চায়ের টেবিলসহ বিভিন্ন আড্ডায় আলোচনা হচ্ছে কেসিসি নির্বাচন নিয়ে। কে কোন্ দলের মেয়র প্রার্থী হতে পারেন, কোন্ ওয়ার্ডে কে কে কাউন্সিল প্রার্থী হতে পারেন, কার জয়লাভের সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি আলোচনায় উঠে আসছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মেয়র পদের প্রার্থী নিয়ে। এই প্রথমবার দলীয় প্রতীকে মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। মেয়র পদে কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক, আর কেইবা পাচ্ছেন বিএনপির ধানের শীষ। এই দুই দলের প্রার্থী নিয়েই জোরদার আলোচনা চলছে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হিসাব অনুযায়ী আগামী বছরের ১৫ জুন পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। সে অনুযায়ী কেসিসির পরবর্তী নির্বাচন ২০১৮ সালের জুন মাসের আগে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬-৭ মাস বাকি থাকায় জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ৭ জনের নাম আলোচিত হচ্ছে। আর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন তিন জন। এছাড়া জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বেশ কিছু দিন আগেই মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তারা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র ও বর্তমানে বাগেরহাটের রামপাল-মংলা আসনের সাংসদ তালুকদার আবদুল খালেক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সাবেক মেয়র কাজী আমিনুল হক, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস এবং দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী। নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কেসিসির নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি নগরীতে নিয়মিত দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি হেরে গেছেন। বর্তমানে তিনি রামপাল-মংলা আসনের সংসদ সদস্য। তিনি দলের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন না। তবে দলের সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেন, সে অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন বলে জানান। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর চাচাত ভাই শেখ জুয়েলকে মেয়র প্রার্থী করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ। এ ব্যাপারে শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কেসিসির মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য প্রায় দেড় বছর ধরে নগরীতে আগাম প্রচার চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এমনকি অলিগলিতেও বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার রয়েছে তার। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচনের জন্য দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। যুবলীগ নেতা এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু বলেন, তিনিও দলের কাছে মেয়র পদের জন্য মনোনয়ন চাবেন। এদিকে দলের নেতাকর্মীর কেউ কেউ বলছেন, তালুকদার আবদুল খালেক চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করতে রাজি না হলে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক মনোনয়ন চাইতে পারেন। অবশ্য কাজী আমিনুল হক বলেন, খুলনায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী হলেন তালুকদার আবদুল খালেক ও শেখ জুয়েল। তিনি চান তাদের মধ্য থেকে যে কোন একজন নির্বাচন করুন। তবে দলের সভানেত্রী যেটা ভাল মনে করেন সে অনুযায়ী কাজ করবেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন করার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী বলেন, সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক নির্বাচন না করলে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। নির্বাচন করার জন্য তার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। মেয়র পদে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বর্তমান মেয়র মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনের আগে মনিরুজ্জামা মনি কেসিসির একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মনিরুজ্জামান মনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সির এ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এবার এই দুই নেতার কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। দুই জনই নির্বাচন কেন্দ্রিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দুই নেতা গত নির্বাচনে এক হয়ে কাজ করলেও বর্তমানে দুজন বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া নগর বিএনপির সহসভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজাও মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপর রয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মনিরুজ্জামান মনি মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর কাউন্সিলরদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এক বছর বরখাস্ত থাকার পর দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণের পরও দূরত্ব কমেনি। কেসিসির বিএনপি সমর্থক একাধিক কাউন্সিলর বলেন, বিগত নির্বাচনে ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরাই মেয়রের পক্ষে জোরাল ভূমিকা রেখেছিলেন বলে মনিরুজ্জামান মনি জয়লাভ করেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। ওয়ার্ড পর্যায়ে বরাদ্দ কম রাখায় কেউই ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারা, প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ আনতে না পারায় কেসিসির কাজের গতি থমকে গেছে। এ অবস্থায় মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। তবে সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, সবাই আমার কাছে আসেন, আমি সবার কাজ করি। ভুল বোঝাবুঝি হয়, সেটা ঠিকও হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এক বছর দায়িত্বে না থাকায় কাজের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে আবারও নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে। তার ব্যাপারে দলের ভেতরে একটা ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, তিনি টানা ১৪ বছর কেসিসির ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১৩ সালে কেসিসির মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেয়ার পর দলের চেয়ারপার্সন বলেছিলেন- এবার প্রত্যাহার কর, আগামীতে তোমার বিষয়টা দেখব। এ ছাড়া নেতাকর্মীরাই তাকে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাপ দিচ্ছে। চেয়ারপার্সন ও নেতাকর্মীরা চাইলে তিনি নির্বাচন করবেন। নির্বাচন করার জন্য তার সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তার অনুসারীরা নগরীতে তার পক্ষে ব্যানার, পোস্টার ঝুলিয়েছেন। তিনি বলেন, দলের কাছে তিনি মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইবেন। এদিকে জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গত ২৮ জানুয়ারি স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক এসএম মুশফিকুর রহমান জাতীয় পার্টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। ওই দিন পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ তাকে কেসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর মুশফিকুর রহমান নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে মাঠে নেমে পড়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে দলটির খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা মুজাম্মিল হককে। গত ৬ এপ্রিল খুলনার এক জনসভায় দলের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম মাওলানা মুজাম্মিল হককে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। তিনিও গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদ আহমেদও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। নগরীর বিভিন্নস্থানে তার পোস্টার দেখা যাচ্ছে।
×