ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের শিল্পসম্ভার মন-মুকুরের মরমিয়া

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের শিল্পসম্ভার মন-মুকুরের মরমিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রদর্শনালয়ে প্রবেশ করতেই স্বাগত জানায় ‘মেঘবতী’ নামের ভাস্কর্য। বৃক্ষের গুঁড়ি চিরে গড়া শিল্প-কাঠামোটি স্থির করে দেয় দুই নয়ন। স্টিলের পাতের ওপর ভেসে উঠেছে এক কাঠের তৈরি নারীর মুখাবয়ব। দুই চোখ বুঁজে থাকা ওই নারীর দীঘল কেশ যেন ছড়িয়ে পড়েছে মেঘের রাজ্যে। সেই দৃশ্যে দর্শনার্থীর মনোলোক নিমজ্জিত হয় অবারিত আনন্দের স্রোতধারায়। মুগ্ধ করা ভাস্কর্যটির চারপাশের দেয়ালে ঝুলছে বেশ কিছু ক্যানভাস। সেথায় আছে নানা রং। বর্ণে বর্ণে উদ্ভাসিত নিসর্গের নান্দনিকতা। ভাস্কর্য আর চিত্রকর্ম-উভয় শিল্প-মাধ্যমই প্রকৃতির বয়ান। এভাবেই চিত্রকর্মের সঙ্গে ভাস্কর্যের সম্মিলন ঘটিয়েছেন তরুণ শিল্পী। দুই মাধ্যমের শিল্পকর্ম নিয়ে সেজেছে খন্দকার নাছির আহাম্মদের প্রদর্শনীটি। ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে শুক্রবার সূচনা হওয়া এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘মন-মুকুরের মরমিয়া’। শিল্পকর্মের আশ্রয়ে প্রকৃতির সঙ্গে নিজের খুঁজে পান খন্দকার নাছির আহাম্মদ। আপন শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে বলেন, আমার কাজ আমার আকাক্সক্ষারই প্রকাশ। এখানে একান্ত চাওয়া পাওয়া যেমন আছে, আছে তেমনি শূন্যতা। সবকিছুকে ভায়ায় বোঝানো যায় না। আবার তেমনি আছে এক তাড়নাবোধ। বর্তমান এই সমাজ-বাস্তবতা আমার মাঝে নৈরাশ্যবোধের জন্ম দিলেও চারদিকের একটা উপায়হীন অবস্থার মাঝেও নিজেকে বৃক্ষ-লতাগুল্মই মনে হয়। তাই মানুষ হয়েও প্রকৃতির সেই স্বাপ্নিক অনড় তরুণবৃক্ষের মরমে নিজের ছায়া খুঁজি, বীজ হয়ে, কুঁড়ি হয়ে, কলি হয়ে বাঁচার বাসনায়। গাছের অবয়বের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাই নিজেকে। ছুটির দিনের সন্ধ্যায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি কফিল আহমেদ, শিল্পী মাহবুবুর রহমান, শিল্পী তৈয়বা বেগম লিপি প্রমুখ। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন খন্দকার নাছির আহাম্মদ। নাছিরের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘বয়সের তুলনায় এই শিল্পীর কাজ অনেক বেশি পরিণত। তার করা জলরংগুলো সুন্দর হয়েছে, যা দেখে আমি অভিভূত হয়েছি । আর ভাস্কর্যের বিষয়ে বলতে হয়, এই প্রদর্শনী দেখলে ভাস্কর্যের প্রতি শিল্পানুরাগীদের ভালবাসা বেড়ে যাবে। অভিব্যক্তি প্রকাশ করে খুশি কবির বলেন, নাছিরের ভাস্কর্যগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী আর জলরংগুলো তার দক্ষতার প্রতীক। তার কাজে প্রকৃতির সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্কের গভীরতা অনুভব করতে পারা যায়। শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষকে মেলাতে চেয়েছেন এই শিল্পী। তাই তো পুষ্পালোক শিরোনামের ভাস্কর্যে ফুলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে মনুষ্য মুখাবয়ব। প্রাণমুকুর নামের ভাস্কর্যে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে নবীন পাতা। ছিন্নকাঠের সর্পিল বাঁকের মাঝে আবির্ভূত ‘উলানবতী’, ‘যরাবতী’ কিংবা ‘প্রাণহংস’ নামের ভাস্কর্যগুলো যেন নিজ নিজ অস্তিত্ব মেলে ধরতে উদগ্রীব। জলরং আশ্রিত চিত্রকর্মগুলোতেও প্রকৃতির সঙ্গে মানবিক সম্পর্কের রসায়ন মেলে ধরেছেন শিল্পী। পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মের সংখ্যা ৪৩টি। ঠাঁই পেয়েছে ২৬টি ভাস্কর্য ও ১৭টি চিত্রকর্ম। প্রদর্শনীতে শিল্পীর বিভিন্ন সময়ের কাজ স্থান পেয়েছে। এটি নাছির আহাম্মদের প্রথম একক প্রদর্শনী। আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ‘রবি গুহ : স্মরণ-বিস্মরণ’ স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা প্রকাশিত হলো সাম্যবাদী চেতনার লড়াকু সৈনিক রবীন্দ্র গুহকে নিবেদিত স্মারকগ্রন্থ। বিক্রমপুরে বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্ম নেয়া এই কীর্তিমানের বাল্যকাল কেটেছে স্বাধীনতা-আন্দোলনের তরঙ্গসঙ্কুল পরিবেশে। মাত্র ১৬ বছরে তিনি ১৯৩৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সাম্যবাদের দীক্ষা নিয়েছেন সত্যেন সেনের হাত ধরে। অবিস্মরণীয় এই মানুষটির জীবনকথা নিয়ে সঙ্কলিত হয়েছে ‘রবি গুহ : স্মরণ-বিস্মরণ’ স্মারক গ্রন্থ। সেখানে গ্রন্থিত হয়েছে বাংলাদেশ ও কলকাতার বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের লেখা। আছে ‘তরুণ তুর্কী’ শিরোনামে পাঁচ গুণীজনের স্মৃতিকথা। ‘উদ্বাস্তু’ শিরোনামে সাক্ষাতকারসহ ছাপা হয়েছে ১০ গুণীর লেখা। পাঁচ সহকর্মী লিখেছেন ‘সহকর্মী’দের দৃষ্টিতে রবি গুহের কথা। আছে ১৯৯০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় বেড়াতে আসার তথ্যসমৃদ্ধ স্ত্রী নিশা গুহের ডায়েরির অংশ বিশেষ। গ্রন্থটিতে আছে শওকত ওসমান, সন্জীদা খাতুন, সরদার ফজলুল করিম ও রঙ্গলাল সেনের চিঠিপত্র ও লেখা। ‘হারানো চিঠি’র সংগ্রহ আছে অজিতকুমার সেন, শহীদুল্লা কায়সার, সরদার ফজলুল করিম ও মোজাফফর আহমেদের। তার সঙ্গে বন্ধুতা ছিল কাজী মোতাহার হোসেন, সরদার ফজলুল করিম, মুনীর চৌধুরীরও। সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে এ গ্রন্থে। শুক্রবার রাতে গ্রন্থটির মোড়ক উšে§াচন, গান ও স্মরণসভার আয়োজন হয় ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে কোন প্রধান অতিথি না থাকলেও অতিথি না হয়ে মধ্যমণি ছিলেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন। তিনিই গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন। গেয়েছেন রবি গুহের স্মরণে একটি গান। স্মারকগ্রন্থের ওপর আলোচনা করেন বেগম আকতার কামাল, নূহ আলম লেনিন ও পিয়াস মজিদ। রবি গুহের পুত্র বুদ্ধপ্রিয় গুহের কণ্ঠের ‘গানের ঝর্নাতলায় তুমি সাঁঝের বেলায় এলে’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বাবার উদ্দেশে লেখা ডায়েরি ও একটি চিঠির অংশবিশেষ পাঠ করেন মেয়ে অলকানন্দা গুহ। গান শুনিয়েছেন লাইসা আহমেদ লিসা ও তানিয়া মান্নান। বইটি প্রকাশ করেছে কলকাতার পুস্লক প্রকাশনা সংস্থা শামিল। অনুষ্ঠানে সন্জীদা খাতুন রবি গুহের সঙ্গে পরিচয় ও তার পরবর্তী বেশ স্মৃতি তুলে ধরেন। স্মারক গ্রন্থটিতে তিনি লিখেছেন ‘রবি দার কথা’ একটি লেখা। সেখানে তিনি বলেন ‘রবিদার সঙ্গে সরাসরি যোগ হলো একাত্তর সালে কলকাতায় শরণ নেবার পরে। তখন কলকাতায় থিতু হয়েছে তিনি। বিয়ে থা করেছেন অধিক বয়েসেই। দু-ছেলেমেয়ে নিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনের আপিসের বাইরের চত্বরে এসেছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের জš§দিন উপলক্ষে। আমি সেদিন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গাইবার দায়িত্ব পেয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের পরে এগিয়ে এসে পরিচয় দিলেন স্মিতমুখে। রবিদার পুত্রকন্যা বুলু আর অলকানন্দাকে দেখলাম। বেগম আকতার কামাল বলেন মানুষটিকে স্মরণ করে এই সঙ্কলন প্রকাশ আমাদের একজন মহৎ মানুষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমাদের দীক্ষিত করে আদর্শবাদে, স্বার্থত্যাগে, মানুষের কল্যাণের জন্য করে উদ্বুদ্ধ। শীতকালীন পথনাটক পরিবেশনা শুরু ॥ ‘জয় হোক মানুষের ক্ষয় হোক দুর্বৃত্তের’ সেøাগানে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ আয়োজিত নিয়মিত শীতকালীন পথনাটক অভিনয় কর্মসূচী। শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ড. মোহাম্মদ বারী, পথনাটক পরিষদের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ গিয়াস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পরিবেশিত হয় পাঁচটি পথনাটক। বেঙ্গল বইয়ে লোকগানের আসর ॥ রাজধানীর লালমাটিয়ায় গড়ে উঠেছে বুকশপ বেঙ্গল বই। বই পড়ার পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুখর এখন সদ্য গড়া প্রতিষ্ঠানটি। এখানে শুক্রবার থেকে শুরু হলো দুই দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথম দিনের সান্ধ্যকালীন আয়োজনে লোকগান ও মহুয়ার পালা পরিবেশন করেন ইসলাম উদ্দিন বয়াতী এবং মিলন বয়াতী ও তাদের দল। আজ শনিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে সারগীত পরিবেশন করবেন মোঃ নাসির উদ্দিন এবং তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করবেন মোঃ সাখাওয়াত হোসেন। এরপর থাকবে যন্ত্রসঙ্গীতের পরিবেশনা। তবলা, বেহালা ও বাঁশির সমবেত বাদন পরিবেশন করবেন সবুজ আহমেদ, শান্ত আহমেদ ও কামরুল আহমেদ। ‘এখনও দাঁড়িয়ে আছি’ ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘এখনও দাঁড়িয়ে আছি’। মুক্তধারা আবৃত্তিচর্চা কেন্দ্র আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সাজানো আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল আহমেদের একক কণ্ঠের আবৃত্তির আশ্রয়ে। কবিতা অনুরাগীদের মুগ্ধ করে এই বাচিকশিল্পী আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শামসুর রাহমানসহ প্রবীণ ও নবীন কবিদের তেইশটি কবিতা। ‘তোমারি নাম সকল তারার মাঝে’ ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘তোমারি নাম সকল তারার মাঝে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীতানুষ্ঠানে। গানে গানে শ্রোতাকে সিক্ত করা এ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আঁখি হালদার ও অনুশ্রী ভট্টাচার্য।
×