ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুবরাজের নেতৃত্বে সৌদিতে নতুন যুগের সূচনা

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

যুবরাজের নেতৃত্বে সৌদিতে নতুন যুগের সূচনা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ অবশেষে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে কি সৌদি আরবে আরব বসন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। দেশটির ৩২ বছর বয়সী ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এই যুবরাজের নানা পদক্ষেপে অনেকের মনে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ যুবরাজের গ্রহণ করা সংস্কার ও উন্নয়ন প্ররিকল্পনা, দুর্নীতির দায়ে সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী শাহজাদাদের আটক প্রভৃতি কারণে এই বিষয়টি সামনে এসেছে। বলা হচ্ছে, সালমানের এসব পদক্ষেপ যদি ফলপ্রসূ হয় তাহলে শুধু সৌদি আরব নয়, মুসলিম বিশ্বের গতি-প্রকৃতি পাল্টে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রতিবেদক টমাস এল ফ্রিয়েডম্যান সম্প্রতি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ওউজা প্রাসাদে মোহাম্মদ সালমানের একটি সাক্ষাতকার নেন। ওই সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক টাইমসে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান নানা ঘটনা নিয়ে কথা বলেন মোহাম্মদ সালমান। এখানে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে আরব বসন্তের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন সৌদি রাজতন্ত্রের এই ভবিষ্যত দাবিদার। সৌদি আরবের লোকদের কাছে ‘এমবিএস’ নামে পরিচিত তিনি। জীবনযাপনে আধুনিক ও চোস্ত ইংরেজী বলতে পারেন। তবে অস্থির প্রকৃতির নন এই যুবরাজ। টমাস এল ফ্রিয়েডম্যান লিখেছেন, আমি এক রাতে যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। এ সময় তার ভাই শাহজাদা খালিদও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। শাহজাদা খালিদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি এ সময় উপস্থিত সৌদি সরকারের কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ঝলসানো ভেড়ার মাংস খাচ্ছিলেন। টমাস এল ফ্রিয়েডম্যান লিখেছেন, আমি এই যুবরাজের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা সময় কাটানোর সুযোগ পাই। এ সময় আরব বিশ্বের এই তরুণ নেতা আমার সঙ্গে নানা বিষয়ে নতুন ধারণা নিয়ে কথা বলেন। আমি প্রথমেই রিজ কার্লটন হোটেলে আসলে কী হচ্ছে- এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। পাশাপাশি তার ক্ষমতা ধরে রাখা ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরি। চলতি মাসে সৌদি রাজপরিবারের বহু প্রভাবশালী শাহজাদা, মন্ত্রী ও ধনকুবেরকে আটকে এই হোটেলে রাখা হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে যুবরাজ বলেন, বিষয়টি হাস্যকর। আমাদের দুর্নীতি দমন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা আটক হয়েছেন। আর বহু শাহজাদা ইতোমধ্যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেও নিয়েছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে আশির দশক থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশ নানা সমস্যায় ভুগছে। এসব দুর্নীতির সঙ্গে দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা জড়িত। বহু আগে আমাদের দেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তবে এতে সফলতা আসেনি। কারণ তারা সমাজের রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সালমান বলেন, আমার বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজের জীবনে কখনও দুর্নীতির কথা শোনা যায়নি। টানা ছয় দশক রিয়াদের গবর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৫ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রথম পদক্ষে ছিল দুর্নীতিবিরোধী লড়াই। আমার বাবা দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম পদক্ষেপ নেন জি-২০-তে অবস্থান করা। আর এজন্য দুর্নীতি দমনকে প্রাধান্য দেন তিনি। এ সময় দুর্নীতি বিষয়ে সব তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি টিমকে দায়িত্ব দেন। ওই টিম দুই বছর কাজ করে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করে। তালিকায় প্রায় ২শ’ জনের নাম আসে। সব তথ্য প্রস্তুত হওয়ার পর প্রধান সরকারী কৌঁসুলি সৌদ আল মোজিব এদের আটকের নির্দেশ দেন। ওই সাক্ষাতকারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির নানা বিষয় নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন এই যুবরাজ।
×