ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবসের আগেই পদ্মা সেতুতে আরও দু’টি স্প্যান!

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

বিজয় দিবসের আগেই পদ্মা সেতুতে আরও দু’টি স্প্যান!

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ বিজয়ের মাসে বিজয় দিবসের আগে আরও দু’টি স্প্যান ওঠানোর টার্গেট নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজ। ইতোমধ্যে ৩৯ নম্বর খুঁটিতে পিয়ার ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ বুধবার শেষ হয়েছে। এই ঢালাইয়ের ১৪ দিন পরেই স্প্যান ওঠার কথা রয়েছে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুটিতে। এই দু’খুঁটিতে বসবে ৭বি নম্বর স্প্যান। এখন ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ চলছে ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির পিয়ারের। এই দুটি খুঁটির পিয়ার ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ শেষের দিকে। ৩৯ নম্বর খুঁটির পাঁচ দিন বাদেই ৪০ নম্বর খুঁটির পিয়ারক্যাপ ঢালাই হওয়ার কথা রয়েছে। এই ক্যাপেই বেয়ারিং দিয়ে এর ওপর স্থাপন হবে স্প্যান। নবেম্বরের মধেই ৪০ ও ৪১ নম্বর খুঁটির পিয়ার ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। এছাড়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ৪২ নম্বর খুঁটির কাজ। এই খুঁটির ওপরের অংশে বেইজ ঢালাই হয়ে এখন ওপরের দিকে উঠছে। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর সব পাইল স্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পর এখন মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) পাইল স্থাপনে নতুন গতি পেয়েছে। এই প্রান্তে ১৭২টি পাইলের মধ্যে ৩২টি পাইল বসে গেছে। পদ্মায় এখন ¯্রােতের তীব্রতাও কম। তাই নদী শাসনের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এদিকে গত শুক্রবার সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার জার্মানীতে তৈরী হ্যামারটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে এলাকায় পৌছেছে। তবে এখনও এটি পাইল ড্রাইভ করা শুরু করেনি। ডিসেম্বর মাসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই হ্যামারটি পাইল ড্রাইভ শুরু করবে। এর আগে আনা ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার আরেকটি হ্যামার পাইল ড্রাইভ শুরু করেছে বলে দায়িত্বশীল প্রকৌশরীরা জানিয়েছেন। এখন মাওয়া প্রান্তে ১৪ ও জাজিরা প্রান্তে ৩৪ নম্বর খুঁটিতে পাইল ড্রাইভ চলছে। এখন নতুন এই হ্যামার বহরে যোগ দেয়ায় পাইল স্থাপানের গতি বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে পদ্মা সেতুর বাকী ১৪টি পিয়ারের ডিজাইন চূড়ান্ত অনুমোদন এখনও দেয়া হয়নি। এছাড়া নদীর তলদেশের মাটি নরম থাকার কারণে মাওয়া প্রান্তের ৬, ৭, ৮ ও ১০ নম্বর পিয়ারে পরিবর্তন আনা হতে পারে। ডিসেম্বর মাসে এই চারটিসহ পদ্মা সেতুর বাকী ১৪টি পিয়ারের ডিজাইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হতে পারে বলে নির্ভরযোগসূত্র জানিয়েছে। সেতুতে মোট ৪২টি খুঁটির (পিয়ার)। এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দু’টি খুঁটির মাঝে বসছে স্প্যান। ১৫০ মিটার দূরত্বের লম্বা ই¯পাতের কাঠামো বা ¯প্যান জোড়া দিয়েই একে একে সেতু নির্মিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুর প্রতিটি খুঁটির নিচে ছয়টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে নদীতে পাইলের সংখ্যা ২৪০টি। তবে এর সাথে আর চারটি নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে। ই¯পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৯৩টি পাইলিং হয়েছে। পেছনে তাকালে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ১৮ জুন মূলত সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কো¤পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। তাতে খরচ ধরা হয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এই কাজের খরচ ধরা হয় ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ অর্থাৎ সংযোগ সেতু ধরলে সেতুটি প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ই¯পাতের যে ¯প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়।
×