ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরমাণু অস্ত্র

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরমাণু অস্ত্র

অনলাইন ডেস্ক ॥ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বারাক ওবামা। এ কারণে ওই বছর তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এর পরের বছর পরমাণু হামলার জবাব দেওয়া নিয়ে ওয়াশিংটনের সক্ষমতার বিষয়ে যখন সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, নতুন ধরনের আর কোনো পরমাণু অস্ত্র বানাবে না যুক্তরাষ্ট্র। তার ক্ষমতা গ্রহণের ১৬ মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র হ্রাসসংক্রান্ত নিউ স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটির (নিউ স্টার্ট) বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছায়। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো এবং পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমানো। নিউ স্টার্টের শর্তে ছিল, উভয় দেশ তাদের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ১ হাজার ৫৫০টির মধ্যে সীমিত রাখবে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ওবামার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়। আবার শুরু হয় ‘মহাধ্বংসের দিন’-এর ঝুঁকি। পৃথিবীতে যে পরিমাণু পরমাণু অস্ত্রের মজুত আছে, তা যদি যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, তাহলে মহাপ্রলয় ঘটে যাবে। এ আশঙ্কা সত্ত্বেও ওবামার বিদায়ের পর ওয়াশিংটন তাদের পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়নের ওপর নজর দেয়। আধুনিকায়ন প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরমাণু অস্ত্রগুলো আরো ‘সুনিশ্চিত’ ও ‘ধ্বংসাত্মক’ করার কাজে হাত দিয়েছে। রাশিয়াও একই কাজ করছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনামলে পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়নে মন দিয়েছে রাশিয়া। নতুন ও আরো শক্তিশালী আন্তমহাদেশীয় বিধ্বংসী পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এবং কৌশলগত যুদ্ধের জন্য ভিন্ন ধরনের পরমাণু অস্ত্র বানিয়েছে তারা। ওবামার শাসনামলেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রধান হাইড্রোজেন বোম ‘গাইডেড স্মার্ট’ (ক্ষেপণাস্ত্র ও সাবমেরিনে বহনযোগ্য) অস্ত্রে রূপান্তর করে এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার সক্ষমতা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করে। স্থল থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর সঙ্গে আনুষাঙ্গিক বেশ কিছু শক্তিমাত্রা যোগ করা হয়। ২০১২ সালে মার্কিন বিমান বাহিনী বলেছিল, ‘প্রকৃতপক্ষে এগুলো নতুনই।’ প্রাণনাশের এসব অস্ত্র বহনের জন্য সামরিক ক্ষেত্রের ঠিকাদাররা আরো শক্তিশালী বোমারু বিমান ও পরমাণু সাবমেরিন বানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ওবামার আমলের বেশ কিছু চুক্তি বাতিলে কঠোর পরিশ্রম করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে সহজে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রের ওপর পর্যালোচনা শেষ করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ফেব্রুয়ারি মাসে রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এক ফোনালাপে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তির বিরোধিতা করেন ট্রাম্প। ২০২১ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তার আগে চুক্তি নবায়নের বিষয়ে আলোচনা শুরুর জন্য পুতিন পরামর্শ দিলে তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা, যারা এক সময় পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার বাড়ানোর পক্ষে ছিলেন, তারাই এখন সতর্ক করেছেন, ‘আধুনিকায়নের এই পদক্ষেপ ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে।’ তারা দাবি করেছেন, আধুনিকায়নের প্রকল্প নিউ স্টার্ট-এর ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা কমানো, পারস্পরিক অস্থার ঘাটতি প্রশমন ও দুর্ঘটনাক্রমে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি হ্রাসের এই চুক্তি অসাড় হয়ে পড়বে। সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের অস্ত্রগুলো আরো ধ্বংসাত্মক এবং সহজে মোতায়েনযোগ্য করে তুলছে। যুদ্ধে কৌশলগত ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ‘ডায়াল ডাউন’ ধরনের যে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে এবং আরো বানানোর যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা খুবই ভয়ানক দৃষ্টান্ত। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন’-এর নিরস্ত্রীকরণ ও হুমকি হ্রাসের নীতিবিষয়ক পরিচালক কিংস্টন রেইফ বলেছেন, ‘যেভাবেই হোক, পরমাণু যুদ্ধের যে ধারণা নিয়ে আমরা নরম সুরে কথা বলি, তা সত্যিই খুব ভয়াবহ চিন্তা।’ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই গ্রুপের আরেক নেতা উইলিয়াম পেরি সম্প্রতি ইউটিউবে এক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সম্ভাব্য পরমাণু প্রলয়ের ভয়াবহতা স্নায়ুযুদ্ধের চেয়ে এখন অনেক অনেক বেশি।’ তিনি রয়টার্সকে বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন করছে, তাতে সেগুলোর ব্যবহার ডাল-ভাতের মতো সহজ হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র খুবই গোপনে আপগ্রেডের কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এ কাজ হচ্ছে। তবে আমরা এখন এ নিয়ে কাজ করছি।’ তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন
×