ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকাবাসীর বিরাট এক যন্ত্রণার নাম সিএনজি অটোরিক্সা। এ বাহনটি যাত্রীদের সেবা দিয়েছে সামান্যই। ত্যক্তবিরক্ত করেছে বেশি। মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে বিকৃত আনন্দ নিয়েছেন অধিকাংশ চালক। মালিকেরা আড়ালে থেকে পয়সা গুনেছেন শুধু। কোন আইন, ন্যূনতম শর্তাদি মানেনি। মিটারে চলা বাধ্যতামূলক। কে তাদের বাধ্য করবে? সরকারের সব সংস্থা ব্যর্থ। মালিক ও চালকদের দাবি অনুযায়ী কতবার যে ভাড়া বাড়ানো হলো, মিটারের কাঁটা তবুও ঘুরল না। দরদাম করে বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হয়েছে যাত্রীদের। তদুপরি যাত্রীর জরুরী প্রয়োজন টের পেলে অটোরিক্সার চালকটি সুন্দর মুচকি হেসেছেন। আরাম করে পানবিড়ি খেয়েছেন। যাত্রী যেখানে যেতে চান, বহন করতে রাজি হননি। চালকের খুব সুবিধাÑএমন গন্তব্য হলেই কেবল গিয়েছেন। অরাজক এই অবস্থা বহুকাল ধরে চলেছে। এখন অবস্থা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে বলা যাবে না। তবে দিন ফুরিয়ে এসেছে সিএনজি অটোরিক্সার। ঢাকার রাস্তায় নামলে অনুমান করা যায়, যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ানো মালিক ও চালকদের মুখে সে অট্টহাসিটি আর নেই। কারণ শহর ঢাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা। যাদের নিজস্ব পরিবহন নেই তারা রাইড শেয়ার করছেন। উবার নামক রাইডশেয়ারিং শুরু হয় গত বছরের ২২ নবেম্বর। কাছাকাছি সময়ে চালু হয় ‘পাঠাও।’ দুটোই এখন বিপুল জনপ্রিয়। তরুণ প্রজন্মের যাত্রীরা লুফে নিয়েছেন। প্রবীণরাও বসে নেই। হাতে থাকা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে চার চাকার প্রাইভেট কার পেয়ে যাচ্ছেন। মোটরবাইক তো আরও জনপ্রিয়। যানজটের তোয়াক্কা নেই। যাত্রীকে অবিশ্বাস্য সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্যে। এমনকি নারীরা নারীদের সঙ্গে রাইড শেয়ার করছেন। নতুন সেবা পেয়ে গতি বাড়িয়ে নিয়েছেন কর্মব্যস্ত মানুষ। সেইসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সিএনজি অটোরিক্সা। একান্ত বাধ্য না হলে বাহনটিতে কেউ চড়তে চাইছেন না। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় এখন নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে, সিএনজি চালকেরা হন্যে হয়ে যাত্রী খুঁজছেন। লম্বা সময় অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে মুখে তাদের হতাশা। এ অবস্থায় তারা যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর চিন্তা করবেন, আশা করা যায়। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটি। সিএনজি অটোরিক্সার মালিক-চালকেরা নতুন করে জোট বেঁধেছেন। ডাক দিয়েছেন ধর্মঘটের। রাইড শেয়ারিং সার্ভিস বন্ধে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন তারা। এ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবা বন্ধ করাসহ তুলে ধরেছেন আট দফা দাবি। ধর্মঘটসহ এক মাসের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। কর্মসূচী অনুযায়ী আগামী ২৭ নবেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করবেন অটোরিক্সা চালকেরা। তার পরও দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে তাদের লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবে। তবে কর্মসূচী নিয়ে কোন মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না ঢাকার যাত্রীদের। যে যার মতো করে সিএনজি চালকদের সমালোচনা করছেন। ভর্ৎসনা করছেন। কেউ কেউ তো এই ধর্মঘট চিরকালের জন্য ডাকার পরামর্শ দিচ্ছেন! বলছেন, ‘বহু ভুগিয়েছে সিএনজিওয়ালারা। আর নয়। এরা লাইনে আসুক। তা না হলে বিদায় নিক।’ এবার একটি পরিসংখ্যানে যাওয়া যাক। ঢাকা মহানগরীতে ১২ হাজার ৭১৫টি নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিক্সা রয়েছে। ৯৩৬টি রয়েছে মিশুকের প্রতিস্থাপন। সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৬৫২টি অটোরিক্সা চলছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ হাজার ৫৬১টির। বাকিগুলোর মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। এখন প্রশ্ন এর পর কী হবে? নতুন কোন কিছু শুরু করতে পারবে সিএনজি অটোরিক্সা? মালিক ও চালকেরা শুধরে নিতে পারবেন নিজেদের? যদি না পারেন বাহনটি অতীত হয়ে যাবে। সে সময়টি চলে এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণ ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে বাস দিতে প্রস্তুত রয়েছে সরকারী সংস্থা বিআরটিসি। অভিভাবকরা রাজি হলে সময় ক্ষেপণ না করেই গাড়ি দেয়া হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে ৭১ বিধিতে উত্থাপিত নোটিসের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ তথ্য দেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রণালয়। বৈঠকে বলা হয়, স্কুলে একক গাড়ি নিয়ে আসায় ওই এলাকার যানজট বাড়ে। তেমনি এটি ব্যয়বহুল। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় যাতায়াতের জন্য বিআরটিসির কাছে বাস চায় মন্ত্রণালয়। বিআরটিসি দ্বিতল বাস দিতে রাজি হয়েছিল। অভিভাবকরা রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান মন্ত্রী। পুলিশের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র ধানম-ি এলাকায় ২১ হাজার প্রাইভেটকার প্রতিদিন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আনা নেয়ার কাজ করে। এতে যানজট বাড়ে না শুধু, অচলবস্থার সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, অভিভবাকদের নকল আভিজাত্যের বোধ চমৎকার উদ্যোগটিকে নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার আন্তরিক হলে কী না হয়? এটিও হতে পারে। পারে না?
×