ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিসবেন টেস্ট দিয়ে আজ শুরু ঐতিহ্যের এ্যাশেজ লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

ব্রিসবেন টেস্ট দিয়ে আজ শুরু ঐতিহ্যের এ্যাশেজ লড়াই

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ব্রিসবেন টেস্ট (গ্যাবা) দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের ঐতিহাসিক এ্যাশেজ সিরিজ। কুলিন দুই ক্রিকেট পরাশক্তির মধ্যকার দ্বৈরথ ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের রয়েছে দারুণ আগ্রহ। জো রুটের নেতৃত্বে একদিকে ইংলিশদের ট্রফি ধরে রাখার মিশন, অন্যদিকে ঘরের মাটিতে স্টিভেন স্মিথের অধীনে অসিদের শিরোপা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ। অধিনায়ক হিসেবে দু’জনেরই এটা প্রথম এ্যাশেজ, দু’দলের সেরা ব্যাটসম্যানও তারা। অস্ট্রেলিয়ার সিমিং কন্ডিশনে পেসারদের সাফল্যই পার্থক্য গড়ে দেবে। যেখানে অতিথি শিবিরে আছেন দুই অভিজ্ঞ গতি তারকা জেমস এ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড। অন্যদিকে ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারেন তুখোড় মিচেল স্টার্ক। দুরন্ত বোলিংয়ে যিনি অস্ট্রেলিয়াকে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। শেফিল্ডশিল্ডের আগুন ঝরানো প্রস্তুতির পর এ্যাশেজের জন্য মুখিয়ে স্টার্ক। প্রথম দুই টেস্টের জন্য অস্ট্রেলিয়া দল ঘোষণার পর থেকেই চলছে সমালোচনা। দুই নতুন মুখের সঙ্গে সাত বছর পর ফেরা উইকেটরক্ষক টিম পেইনকে ঘিরে বিতর্ক। তবে দলে থাকা তিন পেসার মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড এবং প্যাট কামিন্সের বোলিং আক্রমণ দিয়েই ২০১৩ সালে গ্যাবার মাঠে মিচেল জনসনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশা করছে অসিরা। পক্ষান্তরে এখনও পরীক্ষা মেলেনি ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপেরও। তার ওপর দলটির জন্য বড় ধাক্কা নাইট ক্লাবের বাইরে মারামারির ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে দল থেকে বাদ পড়া তারকা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। উনিশ শতকে শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক এ সিরিজ মানেই তুমুল উত্তেজনা। তার ওপর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আসন্ন সিরিজে ইংল্যান্ডকে ‘যুদ্ধ’ মোকাবেলা করতে হবে বলে আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন। কেবল ওয়ার্নার নন দলের অনেক খেলোয়াড়ই চার বছর আগে সফরকারী দলকে জনসনের কীর্তির কথা স্মরণ করিয়ে রেখেছেন। চার বছর আগে মিচেল জনসনের ৯ উইকেট শিকারের সুবাদে গ্যাবায় সফরকারী ইংলিশদের ৩৮১ রানে হারিয়েছিল অসিরা। শেষ পর্যন্ত ৫-০ ব্যবধানে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হতে হয়েছিল ইংলিশদের। স্টার্কের নেতৃত্বাধীন তিন পেসার অবশ্য এক টেস্টে কখনও এক সঙ্গে বোলিং করেননি। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা পেস কম্বিনেশন হিসেবে স্বীকৃতি মিলেছে তাদের। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে তাদের ক্যারিয়ারের স্ট্রাইক রেট অনেক ভাল। গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এই মাঠে ১৯৮৮ সাল থেকে কোন ম্যাচে হারেনি স্বাগতিকরা, গত ৩১ বছরে কোন ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি ইংলিশরা। অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের আশায় মুখ্য হয়ে উঠতে পারেন স্টার্কÑ অতিথি ব্যাটিংয়ের দুই বড় মুখ অধিনায়ক জো রুট ও সাবেক অধিনায়ক এলিস্টার কুককে টার্গেট করেছেন তিনি, ‘ইংল্যান্ড দলের প্রধান দুই ব্যাটসম্যান হচ্ছেন কুক ও রুট, সাম্প্রতিক সময়ে যারা দারুণ ক্রিকেট খেলছেন এবং দেশে ও দেশের বাইরে সত্যিকারার্থে ভাল করছেন।’ স্টার্ক আরও যোগ করেন, ‘এই দু’জনের উভয়ের প্রতিই আমাদের খুব বেশি নজর রাখতে হবে এবং আশা করছি স্বল্প রানেই তাদের থামাতে পারব। ওদের ফেরাতে পারলে অনভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনের অন্যদের ধসিয়ে দিতে তেমন সমস্যা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই অনুপ্রাণীত। আপনি যখনই ঐ সিরিজের উল্লেখযোগ্য অংশ দেখবেন অনুপ্রাণীত হবেনই। অবিশ্বাস্য সিরিজ ছিল সেটি। জনসনের বোলিং এবং আগ্রাসন দেখে অনেক ইংলিশের চোখেই ভয় ধরে গিয়েছিল। একজন বোলার হিসেবে এবং ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম করতে দেখাটা সবসময়ই অনেক বড় বিষয়।’ বোলিং কোচ এবং সাবেক ইংল্যান্ড মেন্টর ডেভিড সাকেরের সংগৃহীত ভিডিও দেখে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানের বিষয়ে ইতোমধ্যেই নিজেদের হোমওয়ার্ক ও পরিকল্পনা সাজিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। স্টার্ক বলেন, ‘দলে সাকেরকে পাওয়াটা অনেক বড় বিষয়। তিনি একসময় ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। সুতরাং তার মেধা কাজে লাগানোটা আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান কিছু হবে।’ একই মানের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ী হতে তিন পেসার ছাড়াও অধিনায়ক স্মিথ এবং ওয়ার্নারকে অসি দলের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে ইংলিশরা তাকিয়ে থাকবে ব্যাটসম্যান কুক, রুট এবং পেসার এ্যান্ডারসন ও ব্রডের দিকে। সফরে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচে সম্মানজনক স্কোর নিয়েই গ্যাবা টেস্ট শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। দলটির অস্ট্রেলিয়ান কোচ ট্রেভর বেইলিস বলেছেন, যে কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত তারা, ‘অস্ট্রেলিয়া শুরুতেই প্রতিপক্ষকে আঘাত হানতে পছন্দ করে এবং আমরাও শক্তভাবেই মাঠে নামার বিষয়ে নিজেরা আলোচনা করেছি। একটা এ্যাশেজ টেস্টে আপনি যতটুকু সম্ভব আমাদের প্রবণতা দেখবেন। আমরা এখানে জিততে এসেছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ ওদিকে প্রস্তুতির সময় ঘাড়ে আঘাত পাওয়া ওয়ার্নারের বিকল্প হিসেবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও অধিনায়ক স্মিথ শতভাগ আশাবাদী ওয়ার্নার আজ মাঠে নামছেন। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে ইংল্যান্ড। ৯৭ রেটিং নিয়ে পাঁচে অস্ট্রেলিয়া। সমান পয়েন্টে চতুর্থ স্থানে নিউজিল্যান্ড। সেরা দুইয়ে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। গতবার (২০১৫) ঘরের মাটিতে ৩-২এ জিতেছিল ইংল্যান্ড, আগেরবার (২০১৩-২০১৪) এই অস্ট্রেলিয়াতে এসে ‘৫-০’তে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছিল তারা। ১৮৮৬ সাল থেকে মোট ১৬টি এ্যাশেজ সিরিজের ১০টি জিতে পাল্লা ভারি অস্ট্রেলিয়ার, ইংল্যান্ডের সাফল্য ৬ বার।
×