ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ অংকন

ঢেঁকি বনাম যান্ত্রিক কল

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

ঢেঁকি বনাম যান্ত্রিক কল

নবান্ন উৎসব পুরনো একটি সামাজিক উৎসব। বাঙালীর এই উৎসবের নামটি মাটির সঙ্গে চির বন্ধনযুক্ত। ‘নবান্ন’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ‘নতুন অন্ন’। ‘দুধ, গুড়, নারিকেল, কলা প্রভৃতির সঙ্গে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়ার উৎসব’ বিশেষ। এই নবান্ন উৎসবের একটি আভিধানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তা হল- হৈমন্তিক ধান কাটার পর অগ্রহায়ণ মাসে অনুষ্ঠিত একটি উৎসব। সেই অনাদিকাল থেকে কৃষি সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। বর্তমান যুগে শহরেও অনেক জমজমাট করে এ উৎসবটি পালিত হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষ এখন শুধু ধান কাঁটার মধ্যে সীমাবদ্ধ। নবান্ন উৎসব কি ও কেন পালন করা হয়, অনেক কৃষক তা ভুলতে বসেছে। কারণ ধান কাটার পর তাদের মাঝে আগের মতো আর আনন্দ বিরাজ করে না। ফসলের সিংহভাগই খরচের খাতায় চলে গেলে উৎসবের আমেজ কি আর থাকে? এক সময় ঢেঁকির সুরেলা শব্দই ফুটিয়ে তুলত নবান্ন উৎসব। সে সময় গ্রাম বাংলায় ঢেঁকি দ্বারা নতুন ধানের চাল তৈরি করার ধুম পড়ে যেত। গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী ও বৌ-ঝিরা নিজস্ব ঢেঁকিতে ধান ভাঙিয়ে চাল করত। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পালাক্রমে ধান ভাঙার কাজ চলত। গরিব পরিবারের মহিলারা বড় গৃহস্থের বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভেঙে চাল করে দিয়ে বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে চাল অথবা টাকা পেত। গরিব মহিলারা পাঁচ থেকে ছয়জনের দল তৈরি করে পালাক্রমে ধান ভাঙত। ২-৩ জন ঢেঁকিতে পাড় দিত আর একজন ঘরের মধ্যে ধান চাল ওলোট-পালোট করে দিত। সেই সঙ্গে পান খাওয়া, আড্ডা আর হাসি-আনন্দ চলত। আবার অনেক সময় সুরে সুরে গীত গাওয়া হতো। ঢেঁকি নিয়ে কত গানই না রয়েছে। একটি গান মনে পড়ে গেল- ‘ও বউ ধান কোটেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া...। কিন্তু এখন আর সেই শব্দ আসবে কোথা থেকে? সব কিছু যান্ত্রিকতায় রূপান্তর হয়ে গেছে। ঢেঁকিও তেমন নেই এখন, গানও বিলুপ্তপ্রায়। নবান্নের সঙ্গে ঢেঁকির যোগসূত্র হারানোর পথে। এখন গ্রামে নবান্ন আসে নীরবে। নবান্নের একটি নমুনা ঢেঁকি আমাদের প্রজন্মের কাছে একটি অচেনা ও অন্যরকম বস্তু। অচেনা এক আদি পদ্ধতি বলা যেতে পারে। এখন ধান ভাঙাতে যেমন ইঞ্জিন মোটরচালিত যান্ত্রিক কল, তেমনই সব কিছুতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া। পাল্টে গেছে জীবনযাত্রা যেমন, তেমনই ধান ভানা ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। সিংড়া, নাটোর থেকে
×